সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ধূমপায়ীদের শরীরে মুহূর্তে কামড় বসাতে পারে COVID-19। এমন একটি আশঙ্কার কথা আগেও প্রকাশ পেয়েছিল। একাধিক সংস্থা বলেছিল করোনা যেহেতু সরাসরি শ্বাসযন্ত্রকে আক্রমণ করে, তাই ধূমপান যাঁরা করেন, তাঁদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কয়েকগুণ বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এ যাবৎকাল বারবার ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করে এসেছে মানুষকে। কিন্তু কেউ কথা শুনলে তো! এমনকী করোনা যখন ক্রমশ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ছে, তখনও তামাকজাত দ্রব্যের চাহিদা তুঙ্গে। বিশেষজ্ঞদের সাবধানবাণীকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলেছে ধোঁয়া ওড়ানোর পালা। কিন্তু এবার বিশ্বজোড়া করোনা আক্রান্তদের পরিসংখ্যান বলছে আক্রান্তরা বেশিরভাগই ধূমপায়ী।
দুর্বল ফুসফুসে সহজেই বাসা বাঁধে করোনা। অন্তত চিন, ইটালি, স্পেন, আমেরিকায় আক্রান্তদের হিসাব তাই বলছে। ‘দ্য নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন’-এর প্রকাশিত রিপোর্ট দেখলে আঁতকে উঠতে হয়। চিনে যখন দাপট দেখাচ্ছিল করোনা, তখন এক হাজারেরও বেশি আক্রান্তকে নিয়ে সমীক্ষা চালিয়েছিল এই সংস্থা। তাতে উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। দেখা যায় যাঁরা ধূমপান করেন না, তাঁদের তুলনায় ধূমপায়ীদের হার অনেক বেশি। তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে ভরতি ছিলেন। তারপরই হাতে গোনা কয়েকজন সুস্থ হয়ে ফিরে আসতে সক্ষম হয়েছেন। ইটালিতেও একটি গবেষণায় এমন তথ্যই প্রকাশ পেয়েছে। সেখানেও দেখা গিয়েছে করোনায় যাঁদের মৃত্যু হয়েছে তাঁরা বেশিরভাগই পুরুষ এবং ধূমপায়ী।
[ আরও পড়ুন: সাবান বনাম স্যানিটাইজার, জেনে নিন করোনা ভাইরাস বধে কী বেশি কার্যকর ]
কেন ধূমপায়ীদের অসুস্থ হয়ে পড়ার প্রবণতা বেশি?
মানুষের ফুসফুসে সরু সরু চুলের মতো সিলিয়া থাকে। এগুলো ধুলোবালি থেকে জীবাণু, সব কিছু থেকে ফুসফুসকে রক্ষা করত। কিন্তু ক্রমাগত ধবমপান করলে এই সিলিয়াগুলো নষ্ট হয়ে যায়। ফলে জীবাণু প্রতিরোধ ক্ষমতা তাদের থাকে না। সহজেই রোগ বাসা বাঁধতে পারে ফসফুসে। তাই ধূমপান করলে যক্ষা, নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো রোগে তাড়াতাড়ি আক্রান্ত হন ধূমপায়ীরা। আর করোনা যেহেতু ফুসফুসে আক্রমণ করে, ফলে তাকেও ঠেকিয়ে রাখতে পারে না নষ্ঠ হয়ে যাওয়া সিলিয়া।
তাহলে উপায়?
উপায় একটাই। তামাকজাত দ্রব্য বর্জন। কিন্তু যাঁরা চেইন স্মোকার, নিয়মিত ধূমপান করেন, আচমকা তো ছাড়তে পারবেন না! তাঁদের জন্যও উপায় বাতলে দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। জানিয়েছেন, ধুমপানের সংখ্যা ক্রমশ কমিয়ে আনতে হবে। এখন লকডাউন চলছে। তাই সিগারেট কিনতে বাইরে যাওয়া বন্ধ করুন। কাউকে দিয়ে আনাবেনও না। চেষ্টা করুন ওই সময় অন্য কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতে। প্রয়োজন পড়লে লবঙ্গ বা এলাচ জাতীয় কিছু মুখে রাখুন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধূমপায়ীদের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পিনে আরও একটি কারণ রয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় সিগারেট অন্য কারওর থেকে নেওয়ার সময় বা দোকান থেকে কেনার পর সেটি পান করতে শুরু করেন ধূমপায়ীরা। এই সময় মুখে মাস্কও থাকে না। ফলে হাত মুখে ও নাকের কাছাকাছি আসায় একটু আগেই যদি কারোর সংস্পর্শে তিনি এসে থাকেন, আর তাঁর শরীরে যদি করোনা ভাইরাস থাকে, তবে সেটি সুস্থ মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। তাই একান্তই যদি এখনও সিগারেট ছাড়া সম্ভব না হয়, তাহলে হাত স্যানিটাইজ করে সিগারেট খান। নিজের দেশলাই বা লাইটার কাউকে দেবেন না। আর কাউন্টারে সিগারেট খাওয়া তো নৈব নৈব চ।
[ আরও পড়ুন: COVID-19 প্রতিষেধক তৈরির দৌড়, অস্ট্রেলিয়ায় শেষ পর্যায়ের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু ]
The post ধূমপায়ীরাই করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি, পরিসংখ্যানে উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য appeared first on Sangbad Pratidin.