শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল: ঘাটালের সাংসদ দেবের ‘দত্তক’ গ্রাম বিশ বাঁও জলে। একটি গ্রাম পঞ্চায়েতকে একজন সাংসদ যাতে নিজের মতো করে সাজিয়ে তুলতে পারেন সে কারণে কেন্দ্র সরকার ‘সাংসদ আদর্শ গ্রাম যোজনা’ সংক্ষেপে দত্তক গ্রাম প্রকল্প চালু করে ২০১৫ সালে। কেন্দ্র সরকারের ‘সাংসদ আদর্শ গ্রাম যোজনা’ প্রকল্পে সম্মতি জানিয়ে কেন্দ্র সরকারকে চিঠিও দিয়েছিলেন সাংসদ দেব। সাংসদ দেবের অনুরোধে সাড়া দিয়ে কেন্দ্র সরকার দেবকে চিঠি ও একটি ফরম্যাট পাঠিয়ে দেয়। দেব সেই চিঠি অনুযায়ী ঘাটাল ব্লকের দেওয়ানচক ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতকে ‘দত্তক’ গ্রাম হিসাবে চিহ্নিত করে চিঠিও পাঠিয়ে দেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে।
ঘাটাল ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, তৎকালীন জেলাশাসক ঘাটালের বিডিওকে দেওয়ানচক ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের ‘সাংসদ আদর্শ গ্রাম যোজনা’ বা ‘দত্তক’ গ্রাম প্রকল্পের চার্জড অফিসার হিসাবে নিয়োগ করে গ্রাম পঞ্চায়েত সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য চেয়ে পাঠান। জানা গিয়েছে, ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের এরিয়া, লোকসংখ্যা, সাক্ষরতার হার, মৌজা, গ্রাম সংখ্যা, পরিবারের সংখ্যা, স্বাস্থ্যদপ্তরের উপ স্বাস্থ্যকেন্দ্র, পোস্ট অফিস, ব্যাংক, যোগায়োগ ব্যবস্থা, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সেচব্যবস্থা, নিকাশি, জমির চরিত্র ও শ্রেণি, বিদ্যুৎ প্রভৃতি তথ্য চাওয়া হয়। সাংসদ দেব নিজে উদ্যোগ নিয়ে জেলাশাসকের সঙ্গে যোগযোগ করে নির্দিষ্ট ফরম্যাট জমা দেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। আদর্শ গ্রাম যোজনা বা দত্তক গ্রামের প্রকল্পের কথা ছড়িয়ে পড়তে দেরি হয়নি এলাকায়। ফলে আনন্দের বন্যা বয়ে যায় গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায়। গভীর আশায় বুক বাঁধেন গ্রামবাসীরা।
[আরও পড়ুন: শাহরুখ খানের জন্য বকা খেলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়! এজলাসে বসেই আক্ষেপ, ব্যাপারটা কী?]
তারপর? মাস যায়, বছর যায়, কোনও সাড়াশব্দ নেই বলে জানিয়েছেন ওই এলাকার পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য তথা শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ বিকাশ কর। তিনি বলেন, ‘‘দত্তক গ্রামের প্রকল্পের কথা জেনে আমরা অনেক আশায় ছিলাম। আমাদের এই এলাকা অনেকটাই পিছিয়ে পড়া এলাকা বলেই আমাদের সাংসদ দেব দেওয়ানচক গ্রাম পঞ্চায়েতকেই বেছে নিয়েছিলেন। আমরা খুশিই হয়েছিলাম। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনও খবর নেই।’’ সম্প্রতি কেন্দ্রের প্রতিনিধিদল ঘাটালে কেন্দ্রীয় প্রকল্প দেখতে এসে ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানকে দত্তক গ্রাম নিয়ে প্রশ্ন করে বসেন। তিনি কোনও উত্তর দিতে পারেননি বলে জানা গিয়েছে। ঘাটাল ব্লকের বিডিও সঞ্জীব দাস এ বিষয়ে বলেন, ‘‘দত্তক গ্রাম প্রকল্পে কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার থেকে কোনও অর্থ বরাদ্দ হয়নি। প্রকল্পটি অনুমোদন হয়েছে কি না তাও জানা নেই। তবে দত্তক গ্রামের স্কিম ধরে কাজ করা হচ্ছে ওই গ্রাম পঞ্চায়েতে।’’
কী বলছেন সাংসদ দেব? সাংসদ দেবের প্রতিনিধি রামপদ মান্না বলেন, ‘‘কেন্দ্রের অনুমোদন আসেনি এটা ঠিকই। কিন্তু কেন অনুমোদন আসেনি তা বলতে পারব না।’’ যদিও ঘাটালের বিজেপি বিধায়ক শীতল কপাট কটাক্ষ করে বলেন, ‘‘রাজ্য সরকার এই প্রকল্প চায়নি বলেই চালু হয়নি। দেশের অন্যত্র সমস্ত সাংসদদের এই প্রকল্প চলছে। রাজ্যে কোনও সাংসদেরই এই প্রকল্প চালুই হয়নি। কারণ, রাজ্য সরকার তথা শাসকদল এই প্রকল্প চালু করার ছাড়পত্র দেয়নি। তাই এই প্রকল্প রাজ্যেই চালু হয়নি। রাজ্য সরকারের সম্মতি ছাড়া এই প্রকল্প অনুমোদন হয় না। তাই চাপা পড়ে রয়েছে।’’ ফলে বিশ বাঁও জলে সাংসদ দেবের দত্তক গ্রাম প্রকল্প।