সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ‘বয়কট মালদ্বীপ!’ দেশজুড়ে এখন একটাই ট্রেন্ড। মালদ্বীপ ভুলে যান। বরং সৈকত দেখতে হলে চলুন লাক্ষাদ্বীপ। বলিউড, টলিউড তারকা থেকে ক্রিকেটার। তাঁদের সৈকত হলিডে মানেই মালদ্বীপ। জন্মদিন পালন হোক বা হানিমুন। নীল সমুদ্রের জলে ডুবে ছুটি না কাটালে জীবন যেন নুন ছাড়া তরকারি। সেই মালদ্বীপের নেতা-মন্ত্রীদের একাংশ হঠাৎই ভারতের সৈকতের নিন্দা করে ফেললেন। তাঁদের কথায়, এদেশের সব সৈকত নাকি নোংরা! এমনকী, ‘ভাঁড়’, ‘হাতের পুতুল’, বলে প্রধানমন্ত্রী মোদিকেও কটাক্ষ করা হয়। ব্যস, সেলেবদের মনে এবার মালদ্বীপ প্রেম উবে দেশপ্রেম! সলমন, জন আব্রাহম সারা, জাহ্নবীরা একে একে মাঠে নামলেন লাক্ষাদ্বীপের প্রশংসায়। সোশাল মিডিয়ায় ছবি পোস্ট করে মালদ্বীপকে যেন দেখিয়ে দিলেন, তাঁদের থেকে ঢের সুন্দর সৈকত রয়েছে ভারতে।
[আরও পড়ুন: অনুষ্ঠানে বিশৃঙ্খলার ঘটনায় অভিমানী রূপম! নিন্দুকের একহাত নিয়ে দিলেন নয়া ‘বিজ্ঞাপন’]
আর এবার সেই সুরেই সুর মেলাল টলিউডের দুই তারকা রাহুল অরুণোদয় বন্দ্যোপাধ্যায় ও সন্দীপ্তা সেন। সোশাল মিডিয়ায় লাক্ষাদ্বীপ ট্রিপের ছবি শেয়ার করে, লাক্ষাদ্বীপের গুণগান গাইলেন রাহুল ও সন্দীপ্তা।
সন্দীপ্তা তাঁর ফেসবুকে বেশ কয়েকটি ছবি শেয়ার করেছেন। যেখানে দেখা গিয়েছে রঙিন পোশাকে লাক্ষাদ্বীপের সৈকতে একান্তে সময় কাটাচ্ছেন অভিনেত্রী। এই ছবির ক্যাপশনে সন্দীপ্তা লিখলেন, ” ২০১৮ সালে লাক্ষাদ্বীপ দ্বীপ গিয়েছিলাম। তখন থেকে আমি ভাবছি কেন মালদ্বীপ এবং অন্যান্যদের তুলনায় লাক্ষাদ্বীপ জনপ্রিয় নয়। এখন ইন্টারনেটে যা চলছে তার সঙ্গে, আশা করি সবাই লক্ষ্য করতে শুরু করবে আমাদের দেশের দ্বীপগুলি কত সুন্দর এবং ভারত সত্যিই কত সুন্দর!”
রাহুলও তাঁর ইনস্টাগ্রামে পোস্ট করেছেন কয়েকটি লাক্ষাদ্বীপ ট্রিপের ছবি। রাহুল লিখলেন, ”হুঁ হুঁ বাওয়া ,ইয়ার্কি নয় আমার সাথে.লাক্ষাদ্বীপ আমি আগেই ঘুরে নিয়েছি”।
প্রসঙ্গত, ১৯৬৫ সালে স্বাধীনতা পাওয়ার পর থেকেই মালদ্বীপের দিকে বারবার সাহায্যের হাত বাড়িয়েছে ভারত। সেদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া থেকে শুরু করে বিশেষ আর্থিক সহায়তার প্যাকেজ ঘোষণা, মালদ্বীপের জন্য সবকিছুই করেছে ভারত। প্রতিবছর প্রচুর ভারতীয় পর্যটক মালদ্বীপে ঘুরতে যান। বিপুল ব্যবসায়িক সম্পর্কও রয়েছে দুই দেশের মধ্যে। সদ্ভাবের পরিবেশ বদলে যেতে থাকে ‘চিনপন্থী’ মহম্মদ মুইজু প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পরে। মালদ্বীপে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে ভারত। স্থানীয়দের মধ্যে এই ধারণা ঢুকিয়ে দিতেই ভারতের প্রতি বিদ্বেষ বাড়তে থাকে। এমনকী মালদ্বীপ থেকে ভারতীয় সেনা সরানোর দাবিতে রাস্তায় নামে আমজনতা। এমনই নানা ইস্যুতে ধাক্কা খেতে থাকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক।
এহেন পরিস্থিতিতে আগুনে ঘি পড়ার মতো হয়ে ওঠে মোদির লাক্ষাদ্বীপ সফর ও সেখানকার ছবি। লাক্ষাদ্বীপের সুদৃশ্য ছবি দেখে জনৈক নেটিজেন মন্তব্য করেন, লাক্ষাদ্বীপের এই সৌন্দর্য্যের ফলে পর্যটন বাড়বে সেখানে। ফলে ধাক্কা খাবে চিনপন্থী মালদ্বীপের পর্যটন। সেখান থেকেই বিতর্কের সূত্রপাত। ভারতীয় নেটিজেনের মন্তব্যের পালটা দিতে আসরে নেমে পড়েন মালদ্বীপের নেতা-মন্ত্রীরা। ভারতের সমুদ্রসৈকতকে অপমান করার পাশাপাশি মোদিকেও ‘হাতের পুতুল’, ‘ভাঁড়’ ইত্যাদি বলে কটাক্ষ করেন তাঁরা।
যদিও তড়িঘড়ি দোষী মন্ত্রীদের সাসপেন্ড করে মালদ্বীপের মন্ত্রিসভা। তবে বিতর্ক ধামাচাপা দেওয়া যায়নি। তবে মোদির হয়ে গলা ফাটাচ্ছেন মালদ্বীপের বিরোধী নেতারা। ভারতকে ‘বন্ধু’ তকমা দিয়ে সোলির মত, দুই দেশের গভীর বন্ধুত্বকে নষ্ট করার চেষ্টা চালাচ্ছে মালদ্বীপের বর্তমান ‘চিনপন্থী’ সরকার। সেই সঙ্গে প্রাক্তন ক্রীড়ামন্ত্রী আহমেদ মাহলুফ জানান, ভারত যদি মালদ্বীপকে বয়কট করতে থাকে তাহলে বড় ধাক্কা খাবে দেশের অর্থনীতি। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো খুবই কঠিন হবে মালদ্বীপের পক্ষে। দুই দেশের সম্পর্ক আদৌ কবে স্বাভাবিক হবে, জানা নেই। তবে জনমানসে মালদ্বীপের ছবিটা যে আগের মতো সুন্দর নেই, একথা বলাই যায়।