অভ্রবরণ চট্টোপাধ্যায়, শিলিগুড়ি: পর্যটকদের জন্য প্রকৃতির বিরাট ‘সারপ্রাইজ’। মরশুমের প্রথম তুষারপাত পূর্ব সিকিমের ছাঙ্গু উপত্যকায়। তুষার চাদরে মুখ ঢেকেছে শেরাথাং। শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত তুষারপাত হয়েছে এলাকা জুড়ে। এমন নৈসর্গিক উপহার উপভোগের আশায় শনিবার বেলা বাড়তে পর্যটকের ভিড় বেড়েছে সেখানে। মরশুমের প্রথম তুষারপাত বলে কথা! যদিও আবহাওয়া দপ্তরের সতর্কতা ছিলই রবিবারের মধ্যে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির পর তুষার চাদরে মুখ ঢাকতে চলেছে সিকিমের একাংশ। নামবে তাপমাত্রা। সেটাই হল শনিবার।
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের সিকিম কেন্দ্রের অধিকর্তা গোপীনাথ রাহা বলেন, ‘‘তুষারপাতের সতর্কতা ছিলই। পূর্ব সিকিম ছাড়াও উত্তর সিকিমের উঁচু এলাকায় তুষারপাত চলছে। এরফলে তাপমাত্রাও নেমেছে।’’ তবে উত্তর সিকিমে তুষারপাত হলেও পর্যটকদের তেমন আগ্রহ নেই। কারণ, ভূমিধসের জন্য মঙ্গনের পর পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে যাতায়াত এখনও রীতিমতো দুঃসাধ্য। স্বভাবতই টুর অপারেটর সংস্থাগুলোও উত্তর সিকিমের বুকিংয়ের বিষয়ে সতর্ক আছেন। কিন্তু পূর্ব সিকিম খোলা। স্বভাবতই টুর অপারেটর মহলে উচ্ছ্বাসের বাঁধ ভেঙেছে। তাদের আশা, এদিনের তুষারপাতের জেরে বুকিংয়ে ভাটার টান কাটবে।
ট্যুর অপারেটর সংস্থাগুলো সূত্রে জানা গিয়েছে, পুজোর আগে আচমকা ভারী বর্ষণের জেরে ভূমিধসের বিপর্যয়ের বুকিং বাতিলের যে হিড়িক পড়েছিল সেটা থামলেও নতুন বুকিং তেমন নেই। উত্তর সিকিমের রাস্তাগুলো এখনও স্বাভাবিক না হওয়ায় পর্যটকরা সেখানে যেতে চাইছে না। পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য ইকো ট্যুরিজম কমিটির চেয়ারম্যান রাজ বসু বলেন, ‘‘শনিবারের তুষারপাতের পর আশা করছি কালী পুজোর আগে পর্যটনকেন্দ্র গুলোতে ভিড় বাড়বে।’’
আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব সিকিমের ছাঙ্গু উপত্যকায় শুক্রবার রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত তুষারপাত হয়েছে। এটাই ছিল পূর্ব সিকিমে মরশুমের প্রথম তুষারপাত। উপত্যকাটি বরফের চাদরে মুখ ঢেকেছে। সকালের পর থেকে এলাকায় পর্যটকদের ভিড় বেড়েছে। এর আগে ২৯শে সেপ্টেম্বর উত্তর সিকিমে একটানা তিনদিন ভারী বৃষ্টিপাত হয়। তার জেরে থাঙ্গু এবং গুরুদোংমার হ্রদ অঞ্চলে তুষারপাত হয়। ভূমিধসের বিপর্যয় নামে।
আচমকা আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলে লাচেন এবং লাচুং উপত্যকার উঁচু এলাকাতেও তুষারপাত হয়। রাস্তা অবরুদ্ধ হয়। বর্ডার রোডস অর্গানাইজেশন (বিআরও) বরফের চাদর কেটে উত্তর সিকিমের রাস্তাগুলি পরিষ্কারের কাজ শুরু করে। ওই পরিস্থিতিতে পূর্ব সিকিমে তুষারপাত অনেকটা আশার আলো বয়ে এনেছে সিকিম প্রশাসনের সামনে। পূর্ব সিকিমের ছাঙ্গু উপত্যকা এবং উত্তর সিকিমের এলাকাগুলি পর্যটনের উপর নির্ভরশীল। বিশেষ করে শীতের মাসগুলিতে যখন তুষারপাতের টানে প্রচুর সংখ্যক পর্যটক ভিড় করে। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ধাক্কা পূর্ব সিকিম এখনও সামলে উঠতে পারেননি। সেই জায়গায় শনিবার পূর্ব সিকিমের তুষারপাত পর্যটন শিল্পের মন্দা দশা সামাল দিতে অনেকটাই সাহায্য করবে বলেই মত টুর অপারেটরদের।