অর্ণব আইচ: বিএসএফের গোয়েন্দাদের কাছে খবর ছিল, রাতের অন্ধকারে চোরাপথে সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকবে অনুপ্রবেশকারীরা। দালালের হাত ধরে সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকল দু’জন। তাদের পাকড়াও করে হতবাকই হয়ে যান গোয়েন্দা ও বিএসএফ জওয়ানরা। তারা আদৌ বাংলাদেশ বা ভারতের বাসিন্দা নয়। তারা নাইজেরীয়।
মাস দু’য়েক আগেই সীমান্তে ঘটেছে এই ঘটন। বাংলাদেশ থেকে নাইজেরীয়দের অনুপ্রবেশ বিরল বললেই চলে। যদিও গত কয়েক মাস আগে থেকেই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা এই বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন। সম্প্রতি উত্তর ২৪ পরগনার গাইঘাটার আংরাইল থেকে দুই নাইজেরীয় ধরা পড়ার পর বিষয়টি নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে পুলিশও। কারণ, এভাবে চোরাপথে সীমান্ত পেরিয়ে নাইজেরীয়রা এসে মাদক পাচার অথবা সাইবার অপরাধ বা এটিএম জালিয়াতি করে পালালেও তাদের হদিশ পাওয়া মুশকিল হবে। ইতিমধ্যেই লালবাজারের গোয়েন্দাদের হাতে মাদক পাচার ও সাইবার অপরাধ বা জালিয়াতির অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছে বহু নাইজেরীয়। বিএসএফের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত বছর ২ হাজার ১৯৪ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী ছাড়াও ধরা পড়েছিল ৬২ জন নাইজেরীয়-সহ অন্যান্য দেশের অনুপ্রবেশকারী। এই বছরই ধরা পড়েছে ১১ জন।
গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়েকটি কারণে বাংলাদেশ সীমান্ত হয়ে এবার এই রাজ্যে অনুপ্রবেশ করছে নাইজেরীয়রা। তাদের গন্তব্য কলকাতাও। গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন, কলকাতা-সহ দেশের বিভিন্ন শহরে অপরাধের অভিযোগে পুলিশ নাইজেরীয়দের গ্রেফতার করে। মেয়াদের শেষে তাদের নিজেদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়। কিন্তু তাদের মধ্যে একটি অংশের প্রবণতা থাকে ফের ভারতে আসার। কিন্তু নাইজেরিয়া থেকে তারা ফের ভারতে আসার ভিসা পায় না। সেই ক্ষেত্রে তারা নেপাল বা বাংলাদেশ যাওয়ার জন্য ভিসা নেয়। এই দুই দেশ থেকে তারা চোরাপথে সীমান্ত পেরিয়ে চলে আসছে ভারতে।
বিএসএফ গোয়েন্দাদের এক কর্তা জানিয়েছেন, প্রাথমিক তদন্ত করে জানা গিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে চোরাপথে দালালের হাত ধরে সীমান্ত পেরিয়ে এই রাজ্যে অনুপ্রবেশ করাই তারা সহজ বলে মনে করে। তার জন্য দালালচক্রকে তারা মোটা টাকা দেয়। বাংলাদেশ ও এই রাজ্য, দু’দিকেই থাকে দালালদের সিন্ডিকেট। তারাই তাদের কলকাতা পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। সেরকমই একটি দালালচক্রের সাহায্য নিয়েছিল ধৃত দুই নাইজেরীয়। জেরার মুখে তারা গোয়েন্দাদের জানিয়েছে, ঢাকায় তারা দু’জনই কাপড়ের ব্যবসা করে। কলকাতায় পরিচিতদের সঙ্গে দেখা করার জন্য এসেছে তারা।
যদিও এই বিদেশিরা আদৌ সত্যি বলছে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান গোয়েন্দারা। এই তথ্য যাচাই করার জন্য তাঁরা বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারেন। পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, সাইবার অপরাধ বা এটিএম জালিয়াতির মতো অপরাধের অভিযোগে গোয়েন্দারা কখনও দিল্লি বা কখনও দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গ্রেপ্তার করেছেন নাইজেরীয়দের। অনেক সময়ই ভিসার তথ্য ধরে তাদের সন্ধান মিলেছে।
আবার অনেকের কাছ থেকেই উদ্ধার হয়েছে মেয়াদ পার হওয়া ভিসা। কিন্তু চোরাপথে বাংলাদেশের সীমান্ত পেরিয়ে আসা ওই বিদেশিরা কলকাতা বা অন্য শহরের কোথাও লুকিয়ে থাকলে তাদের সন্ধান পাওয়া মুশকিল হতে পারে। আবার অপরাধ করার পর ফের চোরাপথে তারা পালাতে পারে বাংলাদেশ বা নেপালে। সম্প্রতি ধরা পড়া নাইজেরীয়দের জেরা করে কলকাতা বাা এই রাজ্যে তাদের নেটাওয়ার্কের সন্ধান চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন গোয়েন্দারা।
[আরও পড়ুন: CAA’র পর বেড়েছে ভারত থেকে বাংলাদেশে পালানোর প্রবণতা, দাবি বিএসএফ কর্তার]
The post নাইজেরীয়দের কার্যকলাপে সতর্ক গোয়েন্দারা, শহরে অপরাধ ঘটাতে অনুপ্রবেশ appeared first on Sangbad Pratidin.