সুকুমার সরকার, ঢাকা: সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মহম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও পরিদর্শক মহম্মদ লিয়াকত আলীকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। সোমবার এই রায় ঘোষণা করা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে এটি বহুল আলোচিত হত্যাকাণ্ড। মেজর সিনহা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রক্ষীদল এসএসএফ’র প্রাক্তন সদস্য ছিলেন।
[আরও পড়ুন: ফের সংখ্যালঘু হত্যা বাংলাদেশে, বৌদ্ধ বিহারে ডাকাতি করতে ঢুকে কুপিয়ে ধর্মগুরুকে খুন!]
সোমবার কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মহম্মদ ইসমাইল এই রায় ঘোষণা করেন। রায়ে টেকনাফ থানার এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত এবং কনস্টেবল রুবেল শর্মা ও সাগর দেবের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়েছে। এছাড়া, কক্সবাজারের বাহারছড়ার মারিশবুনিয়া গ্রামের মহম্মদ নুরুল আমিন, মহম্মদ আইয়াজ ও মহম্মদ নিজামউদ্দিনকে যাবজ্জীবন জেলের সাজা দিয়েছে আদালত। বাকি সাতজন অভিযুক্ত বেকসুর খালাস পেয়েছেন। সোমবার ৩০০ পৃষ্ঠার রায় পাঠকালে প্রদীপ কুমার দাশ ও লিয়াতক আলীর সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মহম্মদ ইসমাঈল।
এদিন আদালতের কার্যক্রম শুরুর পর মামলা সম্পর্কে প্রাসঙ্গিক আলোচনা করেন বিচারক। এরপর শুরু করেন অপরাধের পর্যবেক্ষণ বয়ান। সাক্ষ্য-প্রমাণে কার কী অপরাধ দাঁড়িয়েছে সেসব তুলে ধরার পর হত্যায় সংশ্লিষ্টতার অপরাধ অনুসারে সাজা ঘোষণাকালে প্রধান দুই অভিযুক্তকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এর আগে সকালে আদালতে হাজির করা হয় মামলায় অভিযুক্ত বিতর্কিত ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার ও লিয়াকত-সহ ১৫ আসামিকে। এই রায়কে কেন্দ্র করে আদালতের চারপাশে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। নির্মম ও আলোচিত হত্যাকাণ্ডের ১৮ মাসের মাথায় ৩৩ কার্যদিবসে রায় ঘোষণা করা হয়।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই ইদুল আজহার আগের রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিনড্রাইভ সড়কের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর এপিবিএন চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা। হত্যাকাণ্ডের চারদিন পর ৫ আগস্ট সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে কক্সবাজার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিমের আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় টেকনাফ থানার প্রাক্তন ভারপ্রাপ্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ-সহ নয়জনকে আসামি করা হয়। মামলায় প্রধান আসামি করা হয় বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে। ওসি (বরখাস্ত) প্রদীপ কুমার দাশকে করা হয় দুই নম্বর আসামি। তিন নম্বর আসামি উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দদুলাল রক্ষিত। কক্সবাজারের র্যাব-১৫ মামলাটির তদন্তভার পায়।ওই বছরের ৭ আগস্ট মামলার আসামি সাত পুলিশ সদস্য আদালতে আত্মসমর্পণ করে।