শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল: করোনায় আক্রান্ত হয়ে দাসপুরের এক দম্পতির মৃত্যু হয় মুম্বইয়ে। মা-বাবার মৃত্যুর পর থেকেই অসহায় অবস্থায় দিন কাটছে দুই সন্তানের। তাঁরা না পারছেন দাসপুরের গ্রামের বাড়িতে ফিরতে, আর না পারছেন মুম্বইয়ের কোনও সহৃদয় ব্যক্তির সাহায্য। এমনকী মৃত দম্পতির প্রতিবেশীরাও করোনার ভয়ে ধারে কাছে ঘেঁষছেন না ওই বাড়ির। কার্যত একঘরে হয়েই দিন কাটছে দুই ভাইয়ের।
মৃত দম্পতি অজিত পাড়ুই (৫১) ওরফে মন্টু এবং তাঁর স্ত্রী ঝুমা পাড়ুইয়ের (৪২) বাড়ি দাসপুরের বড় সিমুলিয়া গ্রামে। তাঁরা দীর্ঘদিন ধরেই মুম্বইয়ের বাসিন্দা। থাকেন নালাসুপারায়। অজিতবাবুর নিজস্ব সোনার দোকান রয়েছে মুম্বইয়ের জহুরী বাজারে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, অজিতবাবু করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভরতি হওয়ার পর প্রাণ হারান গত ৩১ মে। পরে তাঁর স্ত্রীর শরীরেও ছড়ায় সংক্রমণ। একই হাসপাতালে ভরতি হন। কিন্তু জীবনযুদ্ধে হার মানেন ১১ জুন। তাঁদের দুই থেকে ছেলে সুমন (২২) কলেজ ছাত্র ও রৌণক (১৪) স্কুলে পড়ে। ১০ দিনের ব্যবধানে বাবা-মাকে হারিয়ে চরম অসহায় হয়ে পড়েন দুই ভাই।
[আরও পড়ুন: ব্যাংকে গ্রাহকের সশরীরে হাজিরা চাই, খাটিয়ায় চাপিয়ে শতায়ু মাকে টেনে নিয়ে গেলেন মেয়ে]
লকডাউনের মধ্যে তাঁরা গ্রামের বাড়িতে ফিরতে পারছেন না। আবার জ্যেঠু-কাকুরাও মুম্বই গিয়ে তাঁদের সঙ্গে দেখা করে ঘরের ছেলেদের ফিরিয়ে আনতে পারছেন না। এমনকী মা-বাবার পারলৌকিক ক্রিয়াও করতে পারেননি তাঁরা। মরার উপর খাড়ার ঘায়ের মতো আর তাড়া করে বেড়াচ্ছে করোনাতঙ্ক। পরিস্থিতি এতটাই জটিল যে দুই ভাই পায়ে হেঁটেই বাড়ি ফিরবেন বলে ঠিক করেছিলেন। কিন্তু মুম্বইয়ের বন্ধুদের পরামর্শ মেনে শেষমেশ আর তেমনটা করেননি। আপাতত দুই ভাই হোম কোয়ারেন্টাইনে রয়েছেন। অবশ্য লালারস পরীক্ষায় দুই ভাইয়েরই রিপোর্টে করোনা নেগেটিভ এসেছে।
কিন্তু দাসপুরে ফিরতে না পারাই কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে দুই ভাইকে। অজিতবাবুর দাদা তাপস পাড়ুই বলেন, “ভাই আর ওর স্ত্রী করোনায় মারা যাওয়ার পর খুবই অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে দুই ভাইপো। ওরা এখানে আসতে পারছে না, আমরাও যেতে পারছি না। ফোনে প্রতিদিন যোগাযোগ করছি। ওরা এখন স্থানীয় পুলিশের নির্দেশে হোম কোয়ারেন্টাইনে আছে। ১৪ দিন পর ওদের বাড়ি ফিরিয়ে আনব।” স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য তথা দাসপুর এক নম্বর ব্লকের বাসুদেবপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান কাজল সামন্ত বলেন, “খুব অসহায়ভাবে দিন কাটছে দুই ভাইয়ের। পরিবারের সঙ্গে আমরাও যোগযোগ রাখছি। প্রয়োজনে প্রশাসনিক সাহায্যও করা হবে।”
[আরও পড়ুন: নিয়ম ভেঙে বিভূতিভূষণ অভয়ারণ্যে ‘পিকনিক’ তৃণমূলের, স্থানীয়দের বিক্ষোভে উত্তাল এলাকা]
The post ১০ দিনের ব্যবধানে করোনার বলি মা-বাবা, মুম্বইয়ে ‘একঘরে’ হয়ে দিন কাটছে দাসপুরের দুই ছেলের appeared first on Sangbad Pratidin.