সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দুবছর পেরিয়ে গিয়েছে। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের কোনও রফাসূত্র এখনও মেলেনি। আক্রমণ পালটা আক্রমণ, হানাহানি, মৃত্যুমিছিল সব কিছু মিলিয়ে দুদেশের এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের ছবি খুব একটা বদলায়নি। মাঝে পালটা মার দিয়ে রণক্ষেত্রে রুশ ফৌজকে বেকায়দায় ফেলেছিল কিয়েভ। তবে এবার নাকি তাদের শক্তি কমে আসছে। তাই ক্রমাগত অস্ত্রের জোগানের জন্য আর্জি জানাচ্ছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। মস্কোর আক্রমণের মুখে এবার তিনটি গ্রাম থেকে পিছু হটল ইউক্রেনীয় সেনা!
গত কয়েকমাস ধরে ইউক্রেনে হামলা তীব্র করেছে রাশিয়া। জনবসতিপূর্ণ এলাকায় আছড়ে পড়ছে মিসাইল। মস্কোর বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে কিয়েভ। কিন্তু দীর্ঘ সময় ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ায় টান পড়ছে অস্ত্রের ভাণ্ডারে। দেখা দিয়েছে আর্থিক সংকট। হাতিয়ারের অভাবে এমন কয়েকটি জায়গা রয়েছে যেখানে রুশবাহিনীর হামলার মোকাবিলা করা দুষ্কর হয়ে উঠছে। তাই পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছে জেলেনস্কির ফৌজ। রয়টার্স সূত্রে খবর, রবিবার এনিয়ে ইউক্রেন সেনার কর্নেল জেনারেল আলেকজান্ডার সিরস্কি জানিয়েছেন, "ইস্টার্ন ফ্রন্টে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করা সহজ হচ্ছে না। পরিস্থিতি এখন খুবই খারাপ। তাই সেখানকার তিনটি গ্রাম থেকে সেনা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। মস্কোর বিরুদ্ধে নতুন করে আক্রমণ শানাতে অন্য জায়গায় ঘাঁটি তৈরি করা হয়েছে।"
[আরও পড়ুন: ট্রুডোকে দেখে ‘খলিস্তান জিন্দাবাদ’ স্লোগান, হাসিমুখে শিখদের অনুষ্ঠানে হাজির কানাডার প্রধানমন্ত্রী!]
কয়েকদিন আগে ইউক্রেনের বুকে ভয়াবহ আঘাত হেনেছিল রাশিয়া। রুশ মিসাইল হামলায় প্রাণ হারিয়েছিলেন অন্তত ১৭ জন। এই ঘটনায় নিজেদের দুর্বল বায়ু প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকেই দুষেছিলেন জেলেনস্কি। বারবার তিনি আমেরিকা-সহ পশ্চিমা বিশ্বের কাছে হাতিয়ারের জন্য দরবার করছেন। এখন সেনাও সরিয়ে নিতে হচ্ছে কিয়েভকে। এই কঠিন পরিস্থিতিতে ফের একবার যুদ্ধাস্ত্র চেয়ে জেলেনস্কি জানিয়েছেন, "আমাদের সহযোগীদের কাছে অনুরোধ। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমাদের অস্ত্র দিয়ে সাহায্য করুন। যাতে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে আমাদের সেনা নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে পারে। রাশিয়ার সমস্ত পরিকল্পনা ভেস্তে দেওয়া যায়।"
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে রাশিয়া সামরিক অভিযান শুরু করার পর থেকে ইউক্রেনকে সমরাস্ত্র দিয়ে সাহায্য করছে আমেরিকা। মার্কিন যুদ্ধাস্ত্রে বলীয়ান হয়ে রুশ বাহিনীকে পালটা মার দিচ্ছে ইউক্রেনীয় ফৌজ। ২০২৩ সালে কিয়েভকে ৩১টি অত্যাধুনিক আব্রামস ট্যাঙ্ক দিয়েছিল ওয়াশিংটন। এবার এই ট্যাঙ্কগুলোকেও সরানো হচ্ছে যুদ্ধের ময়দান থেকে। কারণ, যত দিন যাচ্ছে রাশিয়ার ড্রোন হামলার পরিমাণ বাড়ছে। এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের দুর্বলতার জন্য সেই আক্রমণ ঠেকাতে পারছে না ইউক্রেনীয় ফৌজ। সঠিক সময় শনাক্ত করা যাচ্ছে না রুশ নজরদারি ড্রোনগুলোকে। আর মস্কোর এই হামলায় ক্ষতি হচ্ছে মার্কিন ট্যাঙ্কগুলোর। ইতিমধ্যেই ৩১টির মধ্যে ৫টি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে।
এনিয়ে মার্কিন সেনার দুই আধিকারিক সংবাদ সংস্থা এপিকে জানিয়েছেন, “যুদ্ধক্ষেত্রের পরিস্থিতি অনেকটাই বদলে গিয়েছে। এখন ইউক্রেনের কোথাও আপনারা নির্ভয়ে গাড়ি নিয়ে যেতে পারবেন না। এখন রাশিয়া নজরদারি ড্রোনের ব্যবহার বাড়িয়ে দিয়েছে। রুশ ফৌজ মার্কিন ট্যাঙ্কগুলো শনাক্ত করে দ্রুত হামলা করছে। ফলে ট্যাঙ্কগুলোকে রক্ষা করা ইউক্রেনের পক্ষে কঠিন হয়ে উঠেছে।” জানা গিয়েছে, মস্কোর আক্রমণের পালটা দিতে নতুন রণকৌশল নিয়ে আলোচনা করছে আমেরিকা ও ইউক্রেন।