সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: রাজনৈতিক দ্বেষ থাকতেই পারে, কিন্তু দেশ সবার আগে। এই কথাটাই এখন মনেপ্রাণে বিশ্বাস করছেন যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের নাগরিকেরা। তাই এবার রাজনৈতিক তিক্ততা, দূরত্ব ভুলে দেশকে বাঁচাতে বন্দুক হাতে রাস্তায় নামলেন ইউক্রেনের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরোশেঙ্কো। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে তাঁকেই ক্ষমতাচ্যুত করে প্রেসিডেন্টের গদিতে বসেছিলেন ভলোদমির জেলেনস্কি।
রুশ বাহিনী আক্রমণ করতেই জেলেনস্কি ঘোষণা করে দিয়েছিলেন, দেশরক্ষায় যাঁরা এগিয়ে আসবেন তাঁদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া হবে। তাতে সাড়া দিয়ে এগিয়ে এসেছেন বহু সাধারণ নাগরিক। কিন্তু, যুদ্ধে কি প্রাণ দেবে শুধু সেনা আর আমজনতা! তাই সেনা ও জনতার মনোবল বাড়াতে লড়াইয়ের ময়াদানে নেমেছেন রাজনৈতিক নেতা, সাংসদরাও। তাঁদের মধ্যে একজন হলেন পেত্রো পোরোসেঙ্কো। ২০১৯ সালে তাঁকে পরাজিত করেই ক্ষমতায় এসেছেন জেলেনস্কি। কিন্তু এমন সংকটের মুহূর্তে একে-৪৭ কাঁধে ঝুলিয়ে সরাসরি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের প্রতি কটাক্ষ ছুড়ে দিয়েছেন– ‘লোকটা ডাহা পাগল!’
[আরও পড়ুন: ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের ফোনের পরই শান্তির পক্ষে সওয়াল মোদির, প্রয়োজনে সাহায্যে রাজি ভারত]
মাত্র তিন বছর আগে, ২০১৯-এর এপ্রিল শেষে যখন তাঁর পরাজয় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে, তখন পেত্রো পোরোসেঙ্কো বলে দিয়েছিলেন, হারলেও তিনি রাজনীতি থেকে সরে যাচ্ছেন না। ইউক্রেনের মানুষদের সামনে একদিকে ছিল একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ আর অন্যদিকে ছিল রাজনীতির কোনো অভিজ্ঞতা না থাকা একজন কমেডিয়ান। কিন্তু মানুষ দ্বিতীয় জনকেই প্রেসিডেন্ট পদে বেছে নেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট সে দেশের নিরাপত্তা, প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র নীতির মতো সিদ্ধান্ত নেয়ার মতো ক্ষমতার অধিকারী।
পেত্রো প্রেসিডেন্ট থাকার সময়ই ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসনের শুরু। সীমান্ত পার করে ইউক্রেনে ঢুকে পড়ে সেনা, ট্যাঙ্কার। তিনি রুশ দখলদারি থেকে ক্রিমিয়াকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হন। তিনিও পুতিনের কাছে অস্ত্রের দাপট ত্যাগ করে রাজনৈতিক সমাধানের আরজি জানিয়েছিলেন। কিন্তু সেটা হয়নি।
[আরও পড়ুন: এখনও অধরা রাজধানী কিয়েভ, ইউক্রেনের গ্যাস পাইপলাইন ওড়াল ‘হতাশ’ রুশ বাহিনী]
আজ তিনি প্রেসিডেন্ট পদে না থাকলেও পুতিন বাহিনীর বিরুদ্ধে নিজেই হাতে অস্ত্র তুলে নিয়েছেন। কিয়েভের রাস্তায় কালাশনিকভ হাতেই তিনি এক সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “পুতিন কোনওভাবেই ইউক্রেনের দখল নিতে পারবে না। রাশিয়ার কাছে যতই ক্ষেপণাস্ত্র বা সৈন্য থাক।” পোরোসেঙ্কো প্রমাণ করে দিলেন দেশের অন্দরে রাজনীতিতে যাই হয়ে থাকুক না কেন, শত্রুর মোকাবিলা করতে সকলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়বেন তাঁরা।