নন্দন দত্ত, সিউড়ি: নলহাটির দুই পাড়া ধোপাপাড়া ও কামারপাড়া। বহু বছরের জনশ্রুতিতে এই দুই পাড়ার দুই মা দুগ্গাকে সকলে দুই বোন বলেই ডাকে। এঁরা দু’জনেই একইসঙ্গে মর্তে আসেন। পুজোর সময় পৃথক যাত্রায় বের হন দুই বোন। কিন্তু তাঁদের ফের দেখা হয় নিরঞ্জনের আগে থানা লাগোয়া মসজিদ মোড়ে। সেখানেই শুরু হয় দুই বোনকে ঘিরে দর্শনার্থীদের উল্লাস।
[আরও পড়ুন: ‘প্রতিচ্ছবি’তেই সর্বত্র বিরাজমান উমা, সন্তোষপুরের এই মণ্ডপে থাকছে বিশেষ চমক]
এই দুই বোনের সঙ্গে এক প্রচলিত কাহিনি যুক্ত হয়ে আছে। যেখানে একটি মাত্র খড়গ দিয়েই পরপর নলাটেশ্বরীর দুই বোনের সামনে ছাগ বলি দেন এক পুরোহিত। ধোপাপাড়ার সিংহবাহিনী পুজো প্রচলনের কোনও হিসাব নেই এলাকায়। তবে পরম্পরায় বাসিন্দারা শুনেছেন, তালপাতার ছাউনি দিয়ে মুনি-ঋষিরা মাতৃ আরাধনা শুরু করেন। পরে ১৩৫৭ সালে ধরমপুর গ্রামের রাধেশ্যাম ভট্টাচার্য বাঁশ-খড় দিয়ে নলহাটিতেই একটি মন্দির গড়ে দেন। কিন্তু অর্থাভাবে সেটি কিছুদিন পর বন্ধ হয়ে যায়। দু’বছর পর মন্দির লাগোয়া জায়গায় থাকা অভয় বন্দ্যোপাধ্যায় শুরু করেন পুজো। পুজোর জেরে নিঃসন্তান অভয়বাবুর পাঁচ সন্তান হয়। অন্যদিকে, কামারপাড়ায় প্রায় সমসাময়িক কালে আরও একটি দুর্গাপুজোর প্রচলন হয়। ফলে এলাকাবাসীর চোখে ধোপাপাড়ার মা বড় বোন ও কামারপাড়ার মা ছোট বোন বলেই এলাকায় পরিচিতি লাভ করে। সঙ্গে শুরু হয়ে যায় নানা জনশ্রুতি।
কামারপাড়ার মায়ের প্রথম মূর্তি করেন এক দৃষ্টিহীন শিল্পী। যিনি নাকি স্বপ্নাদেশে মায়ের আদেশ পেয়ে মূর্তি তৈরি করতে শুরু করেন। যে পুকুরের মাটি নিয়ে তিনি মূর্তি গড়েন, এলাকায় সে পুকুর এখন কানাগড়িয়া নামে পরিচিত। বর্তমানে পুজোর দায়িত্বে থাকা শান্তনু মণ্ডল বলেন, “এখনও রীতি মেনে কানাগড়িয়ার মাটি দিয়েই আমাদের ছোট বোনের প্রতিমা তৈরি হয়।” বলিদান পর্বে সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত প্রথমে বলিদান হয় সতীপীঠ নলাটেশ্বরীর মন্দিরে। সেই খড়গ শোভাযাত্রা করে যায় বড় বোনের কাছে। সেখানে বলিদান পর্ব চলে। সবশেষে সেই খড়গ যায় ছোটবোনের বাড়ি কামারপাড়ায়। পরম্পরার এই এক খড়গে বলিদান এখনও জারি রয়েছে। দশমীর বিসর্জনের দিনে মানুষের কাঁধে চেপে আগে মণ্ডপ ছাড়ে বড় বোন। পরে একইভাবে বেরোয় ছোট। নলাটেশ্বরীকে প্রদক্ষিণ করে দু’বোনের মুখোমুখি হয় থানার কাছে মসজিদ পাড়ায়। মিলনের সেই মুহূর্তে চরম উল্লাসে ফেটে পড়েন এলাকাবাসী। চলে নাচ। ফাটে আতসবাজি। শেষে হাজরা পুকুরে দুই বোনের একইসঙ্গে নিরঞ্জন করেন নলহাটির মানুষ।
[আরও পড়ুন: প্রথমবার পুজোর থিম সং গাইলেন কুমার শানু, ভিডিওয় শাঁখ বাজিয়ে নাচ খরাজের]
The post নলহাটিতে দুই বোন হয়ে ওঠেন দুই উমা, ছাগবলিতে ব্যবহৃত হয় একই খড়গ appeared first on Sangbad Pratidin.
