দেব গোস্বামী, বোলপুর: শান্তিনিকেতনের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে আপামর বাঙালির আবেগ। সেই শান্তিনিকেতনের মুকুটে নয়া পালক। ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ ঘোষণা করল ইউনেস্কো। রবিবার X হ্যান্ডেলে ইউনেস্কো সেকথা জানায়। টুইটে শুভেচ্ছা জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।সরকারিভাবে ঘোষণা হতেই উৎফুল্ল হয়ে উঠল রাঙামাটির দেশ। উপাসনাগৃহে সন্ধ্যায় বিশেষ মন্দিরের আয়োজন করা হয়। এছাড়াও প্রাক্তনী, পড়ুয়া, বোলপুরের ব্যবসায় সমিতি, কবিগুরু হ্যান্ডিক্যাপস মার্কেটের সদস্যরা কার্যত আতসবাজি-সহ আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠেন।
রবীন্দ্রজয়ন্তীর দিন ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে চলেছে শান্তিনিকেতন এমনই ঘোষণা করেছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জি কৃষাণ রেড্ডি। রবিবার সৌদি আরবের রিয়াদে অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির সভায় আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়। বিশ্বে এই প্রথমবার একটি বিশ্ববিদ্যালয় যা পুরোদমে কাজ করছে তাকে ইউনেস্কো থেকে হেরিটেজ স্বীকৃতি দেওয়া হল। পৃথিবীতে আর কোন বিশ্ববিদ্যালয় নেই যেখানে ধারাবাহিকভাবে সংস্কৃতির পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়।
১৯২১ সালে ১১৩০ একর জমিতে বিশ্বভারতীর প্রতিষ্ঠা হয়। স্বাধীনতার আগে পর্যন্ত এটি একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল। ১৯৫১ সালে প্রতিষ্ঠানটিকে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা দেওয়া হয়। বিশ্বভারতীর প্রথম উপাচার্য ছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছেলে রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর। দ্বিতীয় উপাধি ছিলেন নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত সেনের ঠাকুরদা ক্ষিতিমোহন সেন। তবে শান্তিনিকেতন বা বিশ্বভারতীর নাম ইদানিং নানা বিতর্কিত বিষয়ে চর্চায় উঠে আসে। সে দিক দিয়ে এই সুসংবাদ খানিক ব্যতিক্রম। ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সেন্টারের উপদেষ্টা সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল অফ মনুমেন্টস এন্ড সাইড এর তরফে শান্তিনিকেতনের নাম সুপারিশ করা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় সংস্কৃতি মন্ত্রক এবং দেশের পুরাতত্ত্ব বিভাগ শান্তিনিকেতনের স্থপতিগুলিকে সংরক্ষণ করে। সুপারিশ অনুযায়ী স্বীকৃতি মেলায় এবার শান্তিনিকেতন এককভাবে চূড়ান্ত ঐতিহ্য তালিকায়।
[আরও পড়ুন: কলকাতার সংস্থার নামে বাজার থেকে লক্ষ-লক্ষ টাকা তুলে নয়ছয়! বিপুল নগদ-সহ গ্রেপ্তার যুবক]
শান্তিনিকেতনের ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সংবাদ ছড়িয়ে পড়তেই শুভেচ্ছা জানানো শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহল থেকে। শিক্ষা ও সংস্কৃতির পীঠস্থান শান্তিনিকেতনের ইউনেস্কোর হেরিটেজ স্বীকৃতি বাংলার মুকুটে নতুন পালক যোগ হল। ইউনেস্কোর ঘোষণার পর X হ্যান্ডলে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইট করেন, “আনন্দিত এবং গর্বিত যে অবশেষে গুরুদেবের ভূমি শান্তিনিকেতনকে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের তকমা দিয়েছে। এটা বিশ্ববাংলার গর্ব। প্রজন্মের পর প্রজন্ম গোটা বাংলার মানুষ, কবি শান্তিনিকেতনের সাহচর্য পেয়েছে। রাজ্যের তরফে আমরা গত ১২ বছর আগেই স্বীকৃতি দিয়েছি শান্তিনিকেতনকে। যাঁরা বাংলা, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে ভালোবাসেন তাঁদের কুর্নিশ। জয় বাংলা। গুরুদেবকে প্রণাম।”
সুখবর পাওয়ামাত্রই X হ্যান্ডলে সকলকে সুখবর জানিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। টুইট করেন, “সারা বিশ্বের বাঙালিদের জন্য গর্বের মুহূর্ত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শিক্ষাদানের আদর্শ নিয়ে বাংলা সব সময় আলোর দিশারী হয়ে থাক।”
প্রাথমিকভাবে জানা যায়, উপাসনা গৃহ ও শান্তিনিকেতন গৃহের স্থাপত্যগুলিকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়। উপাসনার গৃহ ও শান্তিনিকেতন গৃহ শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট এর তত্ত্বাবধানে। সেগুলি এতদিন রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিল এএসএই। শান্তিনিকেতন জুড়ে উন্মাদনা খুশির হাওয়া। আবেগে আপ্লুত পড়ুয়া, প্রাক্তনী, প্রবীণ আশ্রমিক ও বোলপুর শান্তিনিকেতনবাসী।