সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: কারও এই প্রথমবার। কারও আবার বছর পাঁচেকের অভিজ্ঞতা। পরনে শাড়ি, ঘোমটাখানি তোলা মাথার উপর, কপালে লম্বা সিঁদুরের ফোঁটা। কিন্তু মোটে একটা দিনের জন্য আর শখের গোঁফটা কেউ কেউ বিসর্জন দেননি। কেউ আবার মায়া ছাড়তে পারেননি ফ্রেঞ্চ কাটের। সেই অবস্থাতেই হাতে ধরা বরণডালা। কারও হাতের ঘটিতে আবার গঙ্গাজল। নিয়ম মেনে এয়ো স্ত্রী-দের মতোই প্রতিমা প্রদক্ষিণ। চলছে বরণের যাবতীয় কাজকর্ম। তাজ্জব হচ্ছেন! দশমীতে ভদ্রেশ্বরের তেঁতুলতলার জগদ্ধাত্রী পুজোয় কিন্তু ঠিক এ দৃশ্যই চোখে পড়বে। পুরুষরা সেখানে নারী সেজে করেন প্রতিমা বরণ।
Advertisement
পুজোর বয়স গড়িয়েছে ২২৯ বছরে। এখনও রীতি বদলায়নি। বাংলায় জগদ্ধাত্রী পুজোর প্রচলন মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের হাত ধরে। কৃষ্ণনগরের মহারাজ ছিলেন পরম দুর্গাভক্ত। একবার তৎকালীন বাংলার নবাব আলিবর্দী খানকে কর দিতে না পারায় বন্দি হন তিনি। সেটা ১৭৫৪ সাল। সময়টা দুর্গাপুজোর কাছাকাছি। সব ঝামেলা মিটিয়ে মহারাজ যখন ফিরছেন, সেদিনটা ছিল দশমী। নৌকায় বসেই বুঝতে পেরেছিলেন, সেবছর আর তাঁর দুর্গা আরাধনা করা হল না। বিষণ্ণ, ক্লান্ত কৃষ্ণচন্দ্র একসময় ঘুমিয়ে পড়েন।
আর তখনই পান দেবীর স্বপ্নাদেশ। দেবী তাঁকে বলেন, কার্তিকের শুক্লানবমীতে জগদ্ধাত্রী রূপে যেন তাঁর পুজো করা হয়। স্বপ্নাদেশ মেনে শুরু হয় পুজো। বাংলায় এভাবেই শুরু জগদ্ধাত্রী বন্দনা। ভগীরথ হয়ে থাকলেন মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র। কৃষ্ণচন্দ্রের দেওয়ানের হাত ধরেই কৃষ্ণনগর থেকে চন্দনগরে জগদ্ধাত্রী পুজোর শুরু। যার মধ্যে দ্বিতীয় প্রাচীন এই ভদ্রেশ্বর তেঁতুলতলার পুজো।
[আরও পড়ুন: ‘বেঁচে থাকতে হাওড়ায় ঢুকতে দেব না’, নাম না করে রাজীবকে হুঁশিয়ারি সাংসদ প্রসূনের]
কিন্তু কেন এখানে এই প্রথা? কেন মহিলারা থাকতেও পুরুষরা নারী সেজে বরণ করেন? পুরোহিত অসীম সরকার জানাচ্ছেন, “এই রীতি বহু আগের। ইংরেজ আমলে মহিলারা প্রকাশ্যে আসতে স্বস্তি বোধ করতেন না। অন্তঃপুরেই থাকতেন। দেবী বরণ করতেও বেরতে পারতেন না। কিন্তু মাকে তো বরণ করতে হবে। তাই পুরুষরাই সেই ভার নিয়েছিলেন। নারী সেজে পুরুষদের মাকে বরণ করার সূত্রপাত সেখান থেকেই।” আজ অবশ্য মহিলাদের প্রকাশ্যে আসতে কোনও সমস্যা নেই। তবু সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলছে। এ এক ব্যতিক্রমী দৃশ্যও বটে। শুধু এই রীতিটুকুর জন্যই আজও তেঁতুলতলার গৌরহাটির এই পুজোর জনপ্রিয়তা অটুট।
ভিডিও: শুভ্ররূপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও নীলাঞ্জন চট্টোপাধ্যায়।