চিনের প্রবল বাধা ও তীব্র আপত্তি অগ্রাহ্য করে নিউক্লিয়ার সাপ্লায়ার্স গ্রুপ বা এনএসজিতে ভারতকে সদস্য করতে উদ্যোগী হল আমেরিকা৷ শুধু সমর্থন জানিয়েই থেমে থাকেনি ওয়াশিংটন, ভারত যাতে মসৃণভাবে সদস্য হতে পারে তা নিশ্চিত করতে উদ্যোগীও হয়েছে ওবামা প্রশাসন৷ বলা বাহুল্য, বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ওবামার মতোই ভারতকে এ ব্যাপারে সমর্থন করার ক্ষেত্রে সায় আছে প্রেসিডেন্ট পদের দৌড়ে এগিয়ে থাকা দুই প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং হিলারি ক্লিণ্টনেরও৷
শনিবার নিয়মমাফিক সাংবাদিক সম্মেলনে মার্কিন বিদেশ দফতরের মুখপাত্র জন কিরবি সাফ জানান, পরমাণু প্রযুক্তিও অস্ত্রভাণ্ডারের রক্ষণাবেক্ষণ, নিজস্ব প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে পরমাণু কর্মসূচি সম্পাদন এবং শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি পালনে দায়বদ্ধতা দেখানোয় ভারত এনএসজি-র সদস্যপদের ন্যায্য দাবিদার৷ ভারতকে এই সদস্যপদ দেওয়ার সময় এসেছে৷ তাছাড়া ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির সঠিক নিয়ন্ত্রণ করায় ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচির অপব্যবহার না করায় ভারত সাফল্য দেখিয়েছে৷ ফলে ভারত এনএসজিতে ঢুকতেই পারে৷ ২০১৫ সালে ভারত সফরে এসে প্রেসিডেন্ট ওবামা ভারতকে এনএসজি-র সদস্য করার ব্যাপারে পাকা কথা দিয়েছিলেন৷ এখন সময় এসেছে সেই কথা রাখার৷ ফলে ভারত ১৯৭৪ সালে প্রথম পরমাণু বোমা পরীক্ষার ৪২ বছর পরে এনএসজি-র সদস্য হতে চলেছে৷
ভারতীয় কূটনীতিকরা একে ‘পোয়েটিক জাস্টিস’ এবং ভারতীয় কূটনীতিবিদদের বিশেষ সাফল্য বলে মনে করছেন৷ তাঁদের মতে, এই সাফল্যের আসল কারিগর প্রাক্তন দুই প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী, অটলবিহারী বাজপেয়ী, বিজ্ঞানী ও প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবদুল কালাম এবং বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী অনিল কাকোদকর৷ কিন্তু পরমাণু কাঁচামাল ও প্রযুক্তি সরবরাহকারী দেশগুলির গোষ্ঠী এনএসজি-তে ভারতের সদস্য হওয়া কতটা নিশ্চিত? কারণ রাশিয়া ও আমেরিকার সক্রিয় সমর্থন থাকলেও চিন পাকিস্তানের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এনএসজি-তে ভারতের প্রবেশ রুখতে আদাজল খেয়ে নেমেছে৷ চিনা বিদেশমন্ত্রক প্রশ্ন তুলেছে, পরমাণু অস্ত্রপ্রসার রোধ চুক্তি বা এনপিটি-তে ভারত সই করেনি৷ ভারত সই করতে চায় না৷ তা হলে কোন যুক্তিতে সে এনএসজি-র সদস্য হয়? আর ভারতকে যদি নিতেই হয় তাহলে পাকিস্তানকেও সদস্য করতে হবে কারণ পাকিস্তানও গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু শক্তিধর দেশ৷ যদিও চিনের এই যুক্তি মানতে নারাজ ওবামা প্রশাসন৷ চিনা দাবি আমেরিকা খারিজ করে জানিয়েছে, পরমাণু অস্ত্রপ্রসার রোধে ভারতের দায়বদ্ধতা দুর্দান্ত৷ ভারতের পরমাণু কর্মসূচি সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ৷ তা ভারতের নিজস্ব গবেষণার ফসল৷ কিন্তু পাকিস্তান লিবিয়া, উত্তর কোরিয়া-সহ অনেক দেশে পরমাণু প্রযুক্তি পাচার করেছে৷ চিনের সাহায্যে নিজেদের পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডার ও মিসাইল সিস্টেম উন্নত করেছে৷ তাই ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের তুলনাই চলে না৷
তবে চিনের দাবি, এনএসজিতে ভারতের ‘নো এন্ট্রি’ করাতে রাজি হয়েছে বহু সদস্য দেশ৷ ৪৮টি সদস্য দেশের মধ্যে অন্তত দশটি দেশ ভারতের বিরুদ্ধে ভোট দেবে৷ এই কথাই বলেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বিদেশ সংক্রান্ত উপদেষ্টা সরতাজ আজিজও৷ তাই আর কয়েকদিনের মধ্যে পরিষ্কার হয়ে যাবে পাক-চিন যুগলবন্দি রুখে দিয়ে মার্কিন সামরিক জোটের শরিক ভারত এনএসজি-র সদস্য হতে পারবে কি না৷ এই অবস্থায় ভারত আমেরিকার স্বীকৃতি ও সমর্থন পেয়ে যাওয়ায় বেশ কিছুটা ব্যাকফুটে চিন৷ অন্যদিকে, ভারত বাধা দেওয়ায় আমেরিকার কাছ থেকে আটটি এফ-১৬ যুদ্ধবিমান পেতে পেতে না পাওয়ায় ক্রুদ্ধ ছিল পাকিস্তান৷ এখন ভারত এনএসজি-র সদস্য হতে চলায় ক্ষোভে ফুঁসছে তারা৷
The post চিনকে এড়িয়ে ভারতকে এনএসজি সদস্য করতে মার্কিন উদ্যোগ appeared first on Sangbad Pratidin.