সুকুমার সরকার, ঢাকা: গত মাস তিনেক ধরে বাংলাদেশ-আমেরিকা সম্পর্কের উন্নতি হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে একযোগে কাজ করতে চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। কিন্তু এর মাঝেই ফের আওয়ামি লিগের কড়া সমালোচনা করেছে ওয়াশিংটন। ২০২৩ সালে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর ওপর ভিত্তি করে বার্ষিক মানবাধিকার রিপোর্ট প্রকাশ করেছে আমেরিকার বিদেশ মন্ত্রক। আর তাতেই আন্দোলনে বাধা দেওয়া, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে সরকার গঠনে নাগরিকদের অক্ষমতা, জোরপূর্বক গুম, বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের মতো বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে। রিপোর্টে উঠে এসেছে দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার প্রসঙ্গও।
খালেদা জিয়ার সম্পর্কে রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত বছরও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও প্রধান বিরোধী দল বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়। তাঁকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে বিদেশে যেতে দেওয়া হয়নি। ফলে তাঁকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে বাংলাদেশের হাসপাতালে। ২০১৮ সালে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের মামলায় তাঁকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। ২০১৯ সালে তাকে জেল থেকে হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় বিএনপি নেত্রীকে। তার পর ২০২০ সালে সেখান তিনি গৃহবন্দি করে রাখা হয়। আইন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তার তথ্যপ্রমাণে ঘাটতি আছে। এ থেকে বোঝা যায় যে, তাঁকে নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য রাজনৈতিক ছক সাজানো হয়েছে।
[আরও পড়ুন: মায়ানমারে এখনও নেভেনি সংঘর্ষের আগুন, বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় হাজার হাজার রোহিঙ্গা]
হাসিনার বিরুদ্ধে বেশ কিছু দুর্নীতির মামলা প্রত্যাহার করেছেন আইনজীবীরা। এনিয়েও কড়া ভাষায় উল্লেখ হয় রিপোর্টে। এদিকে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার কথাও উল্লেখ করে রিপোর্টে বলা হয়েছে, সংবাদমাধ্যম ও মিডিয়ার সদস্য-সহ সকলের মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিয়েছে বাংলাদেশের সংবিধান। কিন্তু সরকার এই অধিকারে ঘন ঘন হস্তক্ষেপ করেছে।
মার্কিন রিপোর্টে, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের কথাও তুলে ধরা হয়েছে। ক্ষোভ প্রকাশ করে লেখা হয়েছে, যে যুদ্ধাপরাধ হয়েছে তার বিচার করার জন্য ২০১০ সালে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। সেই আদালত শাস্তি দিয়েই যাচ্ছে। এর মধ্যে আছে মৃত্যুদণ্ড। এই প্রক্রিয়াকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেছে আমেরিকা। কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে, আদালত বিশেষত বাছাই করে অভিযুক্ত করেছে বিরোধী রাজনৈতিক দলের সদস্যদের। পুলিশের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ রয়েছে তার তদন্ত নিজেরাই করেছে। নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের হাতে কতজন মানুষ মারা গিয়েছেন তার মোট কোনও সংখ্যা সরকার প্রকাশ করেনি।
[আরও পড়ুন: একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যার জন্য দায়ী পাকিস্তান ক্ষমা চাক, দাবি বাংলাদেশের]
এমনকি এসব ঘটনার স্বচ্ছ তদন্তও করেনি। এই ঘটনাগুলোর তদন্ত যাঁরা করেছেন তাঁদের স্বাধীনতা ও পেশাগত মান নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলো। বিশ্লেষকদের মতে, এই মার্কিন রিপোর্ট খুব একটা ভালোভাবে নিচ্ছে না আওয়ামি লিগ। অন্যদিকে, ফের এই রিপোর্টকে হাতিয়ার করেই হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে সুর চরাতে পারে বিএনপি। এখন আমেরিকার এই রিপোর্ট নিয়ে ঢাকা কি মতামত দেয় সেদিকেই নজর রয়েছে কূটনৈতিক মহলের।