শেখর চন্দ্র, আসানসোল: খসে পড়েছে বাড়ির পলেস্তারা। ভেঙে পড়েছে ছাদ। রাস্তা ঢেকেছে আগাছায়। দিনের বেলায়ও কাকপক্ষীর দেখা নেই রাস্তায়। কান পাতলেই শুধু শোনা যায় ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক। চিত্তররঞ্জন-নিয়ামতপুরের রাস্তা ধরে যাওয়ার সময় বাঁদিকে পড়ে জঙ্গলে ঘেরা একটি কাঁচা রাস্তা। সেই পথ ধরে সামান্য এগোলেই বেনা গ্রাম। সেখানে ঢুকলে গা ছমছম করে উঠতে বাধ্য। সারা বছর ফাঁকা পড়ে থাকে গ্রামের বাড়িগুলি। বছরে মাত্র একটা দিন বাড়িতে ফিরে আসেন গ্রামের বাসিন্দারা। কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর দিন সেজে ওঠে বেনাগ্রাম।
এবার বেনা গ্রামের বাসিন্দারা মঙ্গলবার রাতেই সেরে ফেলেন কোজাগরী লক্ষ্মীপুজো। নিয়ম মেনে তাঁরা সারলেন পুজো। লক্ষ্মীপুজোর ভোগ, খিচুড়ি প্রসাদ খাওয়ার পর আবার ফিরে গেলেন নিজের-নিজের আস্তানায়। বুধবার ফের জনমানব শূন্য হয়ে পড়ল কুলটির বেনাগ্রাম। তবে এবার গ্রামবাসীরা স্থায়ীভাবে গ্রামে ফিরে আসতে পারেন, এমনই ইঙ্গিত মিলেছে তাঁদের কথায়। কারণ নতুন রাস্তা হয়েছে। বসেছে বিদ্যুতের খুঁটি এবং আশেপাশে প্রচুর মানুষ জমি কিনে নতুন করে বসতি গড়ে তুলছেন। আর তাতেই ভরসা পাচ্ছেন এলাকার মানুষজন।
[আরও পড়ুন: স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ডে ঋণ দিচ্ছে না একাধিক ব্যাংক, জেলাশাসকদের নজরদারির নির্দেশ নবান্নের]
গ্রামের বুক চিরে চলে গিয়েছে ঝকঝকে ঢালাই রাস্তা। তারবিহীন বিদ্যুতের খুঁটিও দেখা যাচ্ছে। গ্রাম ঢোকার মুখে তৈরি হয়েছে নতুন দোকান। গ্রামের গা ঘেঁষে শুরু হয়েছে প্লটিং। জমি কিনেছেন বাইরে মানুষজন। তৈরি হচ্ছে নতুন ঘরবাড়িও। সেই জনশূন্য বেনাগ্রামের নতুন রূপের দেখা মিলেছিল লক্ষ্মী পুজোর প্রাক্কালে। কুলটির ‘ভূতগ্রাম’ খ্যাত বেনাগ্রামে আবারও সেজে উঠেছিল লক্ষ্মীপুজো উপলক্ষ্যে। তবে বছরে আর মাত্র একদিন নয়। পাকপাকি ভাবে অলক্ষ্মীর প্রভাব কাটিয়ে এবার শুরু হবে লক্ষ্মীর বাস। তেমনই ইঙ্গিত মিলল বেনাগ্রামে গিয়ে। উন্নয়নের ছোঁয়া লাগতেই গ্রামের মানুষ ফিরে আসতে পারে আবার তাঁদের ভিটেমাটিতে। শুধু গ্রামের মানুষ নয়, বাইরের লোকজনও জমি কিনে সেই বেনাগ্রামেই বসত বাড়ি তৈরি করছেন।
তবে বছর কয়েক আগে ছবিটা এমন ছিল না। শ’খানেক পরিবারের বাস ছিল এই গ্রামে। কিন্তু বিধিবাম। বছর দশেক আগে গ্রামের পাশে রেললাইন লাগোয়া এলাকায় দুষ্কৃতীদের উৎপাত বাড়তে থাকে। রাতবিরেতে বিভিন্ন বাড়ির দরজা লক্ষ্য করে ছোড়া হত ইট। দরজায় পড়ত টোকা। এর মাঝে একদিন গ্রামেরই একটি পুকুর পাড়ে এক মহিলার দেহ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা। কিন্তু কে বা কারা এই ঘটনা ঘটাচ্ছে তা জানা যায়নি। ফলে ভূত নিয়ে গুজব ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। গ্রামের পরিচয় হয়ে যায় ‘ভূতের গ্রাম’ হিসেবে। গ্রাম ছাড়েন বাসিন্দারা।
[আরও পড়ুন: Coronavirus: গত ২৪ ঘণ্টায় কলকাতায় করোনা আক্রান্ত ২৪৪, বাড়ছে পজিটিভিটি রেটও]
গ্রামের লক্ষ্মী মন্দিরে হয় লক্ষ্মীপুজো। গ্রাম ছাড়া মানুষগুলি একটি দিনের জন্য ফিরে আসেন গ্রামে। কোজাগরী পুজোর রাতে পুজো করে আবার ফিরে গেলেন অন্যত্র। এদিন দেখা যায় পুজো উপলক্ষ্যে সকাল থেকেই গ্রামের রাস্তা পরিস্কার করা হয় পুরনিগমের পক্ষ থেকে। সুপারভাইজার গৌতম সেনগুপ্ত বলেন, “গত দু’বছর ধরে পুজো উপলক্ষে সাফসুতরোর কাজ হচ্ছে পুরনিগমের আওতায়।” এবার মাগারাম মাজির পরিবারের পুজোর যাবতীয় দায়দায়িত্ব। মাজি পরিবারের সদস্যরা বলেন, “রাতভর জেনারেটর চালিয়ে বিদ্যুৎ আনা হয়েছে। সারারাত পুজো হয় মা লক্ষ্মীর। ভোররাতে পাত পেড়ে প্রসাদ খাওয়া হয়। আমাদের এই লক্ষ্মীপুজো হল দুর্গা পুজোর মত। সারারাত পুজোর পর আবার ফিরে যাবে নিজের নিজের বাসায়।”