সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: মেরিন ড্রাইভ বরাবরাই বেশ মায়াবী। রাত দু’টো-আড়াইটের সময়ও রাস্তা-ঘাট একেবারে জীবন্ত থাকে। দিনের বেলায় চতুর্দিকে ভিড়ভাট্টা। কিন্তু বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে শুধু ভিড় নয়, রীতিমতো জনসমুদ্র দেখা গেল মেরিন ড্রাইভ চত্বরে। ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের গেটের সামনে লম্বা লাইন। থিকথিকে ভিড়। গিজগিজে কালো মাথা। যেন তেরো বছর পর সেই রাত আবার ফিরে এসেছে ওয়াংখেড়েতে।
২০১১-র রাত। মহেন্দ্র সিং ধোনির ছক্কায় বিশ্বজয়ের (ICC T20 World Cup 2024) রাত। ২০১১ সালে ওয়াংখেড়েতে বিশ্বজয়ের পর গোটা রাত জুড়ে উৎসব চলেছিল মুম্বইয়ে। পরিস্থিতি এমনই ছিল যে স্টেডিয়াম থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বের হোটেলে পৌঁছতে সবার এক ঘণ্টা লেগে গিয়েছিল। কোনও কোনও প্রাক্তন ক্রিকেটার আবার সেদিন হেঁটে ফিরেছিলেন হোটেলে। জ্যাম-জটে গাড়ি একটুও এগোচ্ছিল না। বৃহস্পতিবার মুম্বইয়ে ঠিক সেই ছবিটাই ফিরল। মেরিন ড্রাইভ থেকে গাড়ির লম্বা লাইন। তীব্র যানজট। আর এক দিকে জনসমুদ্র।
মুম্বই ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন তিনদিনের জন্য যাবতীয় উৎসবের পরিকল্পনা করে রেখেছিল। অর্থাৎ বৃহস্পতিবার, শুক্রবার আর শনিবার, তিনদিন হুডখোলা বাস বুকিং করা হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে ঠিক ছিল যে, বৃহস্পতিবার বিকেলে টিম মুম্বই আসবে। শুক্রবার সকাল থেকে হুডখোলা বাসে রোহিতরা মেরিনড্রাইভের আশপাশের চত্বরে ঘুরবেন। তারপর ওয়াংখেড়েতে সংবর্ধিত করা হবে বিশ্বজয়ী টিমকে। কিন্তু ক্রিকেটাররা আর খুব বেশি সময় থাকতে চাইছিলেন না। কারণ এমনিতেই বার্বাডোজে তিনটে দিন বেশি থাকতে হয়েছে। শুক্রবার যেমন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করবেন রোহিতরা। তারপরই ভারত অধিনায়ক লন্ডন উড়ে যাবেন। সাতদিনের ছুটি কাটিয়ে দেশে ফিরবেন রোহিত। বাকি ক্রিকেটাররাও যে যার মতো করে ছুটি কাটাতে চলে যাবেন। তাই ঠিক হয়, দিল্লি থেকে ফেরার পর এদিন মুম্বইয়ে যাবতীয় সেলিব্রেশন হবে।
[আরও পড়ুন: ‘মনে হচ্ছে জয় শাহই বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন’, বিশ্বজয়ীদের ছবি দেখে খোঁচা কীর্তি আজাদের]
সকাল থেকেই অপেক্ষার প্রহর গুণতে শুরু করে দিয়েছিল মুম্বইবাসী। কখন বিরাট-রোহিতরা পা রাখবেন মুম্বইয়ে? ওদিকে, কাল থেকেই মুম্বইয়ের আকাশের মুখ ভার। সমানে বৃষ্টি চলছিল। কিন্তু তাতে কী? বৃষ্টি উপেক্ষা করেই হাজার হাজার মানুষ অপেক্ষা করছিল ভারতীয় টিমের জন্য। দিল্লি থেকে টিম এল দুপুরে। মুম্বই এয়ারপোর্টে ফ্লাইট নামামাত্রই জলকামান দেগে সেলাম ঠোকা হয় টিমকে। ক্রিকেটাররা এয়ারপোর্ট থেকে একে একে বেরোতেই তুমুল চিৎকার। এক গাল হাসি নিয়ে বেরোলেন রোহিত। কোথায় তখন দীর্ঘ বিমানযাত্রার ধকল! টিম বাসের এয়ারপোর্ট থেকে হোটেল পৌঁছতে অনান্য দিনের তুলনায় অনেকটাই বেশি সময় লাগল। আসলে রাস্তার দু’ধারে দর্শক থিকথিক করছে। জাতীয় নায়কদের একবার দেখার আকুতি নিয়ে। টিম হোটেলের সামনের ছবিটাও হুবহু এক। গিজগিজে ভিড়। ‘রোহিত....বিরাট (Virat Kohli)’ শব্দব্রহ্মে তখন মেরিন ড্রাইভের আশপাশ একেবারে গমগম করছে।
আবেগের মাত্রাটা আকাশ ছুঁল ক্রিকেটাররা ‘হুড’ খোলা বাসে করে রাস্তায় বেরোনোর পর। ট্রফি নিয়ে বিরাট-রোহিতরাও সমান তালে সেলিব্রেশন করলেন ওঁদের সঙ্গে। দীর্ঘদিনের স্বপ্নপূরণ। বিশ্বকাপ জিততে না পারার যাবতীয় হতাশা কাটিয়ে ওঠার আনন্দ। সব মিলে মিশে আজ একাকার। দেখে কে বলবে এতটা জার্নি করে এতটা ধকল সামলে দেশে ফিরেছেন ভারতীয় ক্রিকেটাররা? কারও চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপটুকুও নেই। আছে বিশ্বজয়ের আনন্দ। সাধারণ মানুষদের সঙ্গে মিশে গিয়ে জয় সেলিব্রেশনের তৃপ্তি। পুরো মুম্বই যেন মিশে গেল মেরিন ড্রাইভ থেকে নরিম্যান পয়েন্টে এসে। পরের উদযাপনের পর্বটা হল ওয়াংখেড়েতে। গ্যালারি একেবারে হাউসফুল। মাঠেই নাচলেন ক্রিকেটাররা। বিরাট বলছিলেন, তিনি এতটা আবেগতাড়িত রোহিত শর্মাকে (Rohit Sharma) আগে কখনও দেখেননি। বললেন, ‘‘গত পনেরো বছরে রোহিতকে এতটা আবেগতাড়িত হতে আমি এই প্রথম দেখলাম। ট্রফি জেতার মুহূর্তটায় রোহিত কাঁদছিল। আমি নিজেও কেঁদে ফেলেছিলাম।’’