মৌশাখী বোস: শরীর দুর্বল লাগছে, একটা ভিটামিন ট্যাবলেট লিখে দেবেন?
প্রায়ই ডাক্তারের কাছে বায়না করেন অনেকে৷ অনেক সময় আবার নিজেরাই ওষুধের দোকান থেকে সরাসরি কিনে দু’-একটা ট্যাবলেট খেয়ে নেন৷
পরিণতি?
ফ্যাট দ্রবীভূত ভিটামিনের আধিক্যে শরীরে নানা সমস্যা হয়৷ শুধু বড়রাই নন, সমস্যা হয় শিশুদেরও। ভিটামিন ট্যাবলেট খাওয়ালে শিশুর মোটা হওয়ার ধাত বাড়ে, হার্টের উপর চাপ সৃষ্টি হয়৷
ভিটামিন ট্যাবলেট খেলেই সুস্থ থাকা যায়, এটা আদতে একটা ভ্রান্ত ধারণা। প্রয়োজনীয় ভিটামিন দৈনন্দিন খাবারের মধ্য দিয়ে শরীরে পৌঁছলে তবেই উপকার মেলে৷
আর, ভিটামিনের সব উৎস রয়েছে বাঙালির রোজকার খাবারেই৷
সে কথায় আসার আগে একটু জেনে নেওয়া যাক ভিটামিন কী এবং ওষুধের চেয়ে খাবার কেন উপকারী!
ভিটামিন কী?
ভিটামিন এক রকমের অরগানিক যৌগ, যার স্বল্প পরিমাণই মানবদেহের সাধারণ মেটাবলিজম অব্যাহত রাখে৷ দৈনন্দিন খাদ্যদ্রব্য ও সূর্যরশ্মি থেকে আমরা এই যৌগ পাই৷ ভিটামিন সাধারণত দু’রকমের৷
ফ্যাটে দ্রবণীয় ভিটামিন: এই ভিটামিন মানবদেহের ফ্যাট টিস্যুর মধ্যে বা লিভারেও থাকতে পারে৷ ভিটামিন A, D, E এবং K হল ফ্যাট সলিউবল ভিটামিন৷
জলে দ্রবণীয় ভিটামিন: এই ভিটামিন মানবদেহে জমা থাকে না৷ এগুলি প্রস্রাবের মাধ্যমে দেহের বাইরে নির্গত হয়ে যায়৷ যেমন- ভিটামিন B এবং C৷
ট্যাবলেট না খাবার– কোনটা ভাল?
প্রস্রাবের সঙ্গে দেহের বাইরে নির্গত হয়ে যায় বলে ভিটামিন B এবং C-এর অতিরিক্ত মাত্রা তেমন সমস্যা সৃষ্টি করে না।
কিন্তু ভিটামিন A, D, E এবং K ফ্যাট সলিউবল হওয়ায় এর আধিক্যে বিভিন্ন সমস্যা দেখা যায়৷ যেমন,
• প্রচুর বমি হওয়া (ভিটামিন D-এর আধিক্য)
• অসহ্য মাথা যন্ত্রণা (ভিটামিন A-এর আধিক্য)
• ডিহাইড্রেশন অর্থাৎ শরীরে জলের পরিমাণ কমে যাওয়া (ভিটামিন D-এর আধিক্য)
• রক্ত জমাট বাঁধা (ভিটামিন K-এর আধিক্য)
শরীরে ভিটামিনের মাত্রা:
ব্যক্তিবিশেষে ভিটামিনের চাহিদা আলাদা হয়৷ সেটা মাথায় রেখে প্রাকৃতিক উৎস থেকেই ভিটামিন গ্রহণ করা উচিত৷ তবে, যাঁদের সেই সুযোগ কম থাকে, তাঁদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ভিটামিন ট্যাবলেট কিংবা টনিক ব্যবহার করা উচিত৷ যদিও কোনও কিছুরই বেশি ব্যবহার শরীরের পক্ষে ভাল নয়- সেদিকে যেন খেয়াল থাকে!
ভিটামিনের ধরন, উৎস এবং অভাবে অসুখ:
• ভিটামিন A:
ফ্যাট সলিউবল৷ কাজ দৃষ্টিশক্তি ভাল রাখা৷
উৎস- লিভার, কর্ড লিভার অয়েল, গাজর, ব্রকোলি, রাঙা আলু, মাখন, চিজ, কুমড়ো, ডিম, দুধ৷
অসুখ- ভিটামিন A-র অভাবে রাত কানা রোগ, ক্যারাটো ম্যালেশিয়া এবং ড্রাই কর্নিয়া হয়৷
• ভিটামিন B:
ওয়াটার সলিউবল৷ ভিটামিন B সাধারণত B1, B2, B3, B6, B9 এবং B12- এই কটি ভাগে বিভক্ত৷ যা নার্ভ ঠিক রাখে ও রক্ত উৎপাদনে সহায়তা করে৷
উৎস- মাছ (টুনা, স্যালমন), মুরগি, গরু, কলা, ব্রকোলি, দুধ, দই, বিনস, বাদাম, হোল গ্রেইন মাশরুম, সূর্যমুখী দানা, শাকপাতা, গাজর৷
অসুখ- ভিটামিন B-র অভাবে মূলত বেরি বেরি রোগ, স্নায়ুর অসুখ, অ্যানিমিয়া এবং হার্টের সমস্যা হতে পারে৷
• ভিটামিন C:
জলে দ্রবণীয়৷ মানবদেহের দাঁত ও রক্তে কাজে লাগে৷
উৎস- লেবু, সবুজ শাক-সবজি, গোলমরিচ, ব্রকোলি, বেরি, টক জাতীয় ফল, টমেটো, শুঁটি জাতীয় সবজি৷
অসুখ- এর অভাবে অ্যানিমিয়া ও দাঁতে স্কার্ভি রোগ হয়৷
• ভিটামিন D:
ফ্যাট সলিউবল৷ মানবদেহের হাড় তৈরিতে সাহায্য করে৷
উৎস- তৈলাক্ত মাছ, ডিম, গরুর যকৃৎ, মাশরুম, দুধ, কর্ড লিভার তেল, মার্জারিন, কমলালেবু৷ এছাড়া ভিটামিন D-র মূল উৎস হল সূর্যরশ্মি৷
অসুখ- এর অভাবে বাচ্চাদের রিকেট রোগ হয়। এছাড়া প্রেগন্যান্সির সময় হবু মা অস্টিও ম্যালেশিয়া বা হাড় ভঙ্গুর হওয়ার রোগে ভোগেন৷
• ভিটামিন E:
ফ্যাটে দ্রবণীয়৷ রক্ত তৈরিতে কাজে লাগে৷
উৎস- আমন্ড, দুধ, ডিম, অ্যাভোগাডো, বাদাম, সবুজ শাকপাতা, গম, ভেজিটেবিল অয়েল৷
অসুখ- এর অভাবে সদ্যোজাত শিশুদের হিমোলাইটিক অ্যানিমিয়া হতে পারে৷
• ভিটামিন K:
ফ্যাট সলিউবল৷ রক্তে এটি বিশেষ কার্যকর ভূমিকা নেয়৷
উৎস- সবুজ শাক-সবজি, অ্যাভোগাডো, পার্সলে পাতা৷
অসুখ- এর অভাবে ব্লিডিং ডাইথেসিস হতে পারে৷
আরও জানতে কলম্বিয়া এশিয়া হাসপাতালের ইন্টারনাল মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. দীপঙ্কর সরকারকে ফোন করুন এই নম্বরে- 9831179171।
The post বুঝে খান ভিটামিন! appeared first on Sangbad Pratidin.