সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দেড় মাস পেরিয়ে গিয়েছে আর জি কর কাণ্ডের। নির্যাতিতার সুবিচারের দাবিতে এখনও রাজ্যের নানা প্রান্তে প্রতিবাদ চলছে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে 'জাস্টিস ফর আর জি কর' আওয়াজ উঠছে বিদেশেও। সূত্রের খবর, এবার সুপ্রিম কোর্টে মামলার শুনানির আগে আইনজীবী বদল করলেন মৃত চিকিৎসকের বাবা-মা। বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের বদলে এবার তাঁদের হয়ে লড়বেন বিখ্যাত আইনজীবী বৃন্দা গ্রোভার। জানা গিয়েছে, আর জি করের নির্যাতিতার হয়ে লড়াই করতে কোনও পারিশ্রমিক নেবেন না তিনি।
গোটা দেশ তো বটেই, আন্তর্জাতিক স্তরেও খ্যাতিমান এই দুঁদে আইনজীবী। দীর্ঘ কর্মজীবনে মহিলা ও শিশুদের উপরে হওয়া নানা অত্যাচার, নির্যাতনের বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন। তাই অভয়ার বাবা-মা যখন মামলা লড়ার অনুরোধ করেন, তা ফেরাতে পারেননি বৃন্দা। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট স্টিফেন্স কলেজ থেকে আইন নিয়ে ডিগ্রি লাভ করে নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতকোত্তর করেন তিনি। এর পর দেশে ফিরে ট্রায়াল কোর্টে শুরু হয় প্র্যাকটিস। সেখান থেকেই হাই কোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হিসাবে পথ চলা শুরু করেন বৃন্দা।
১৯৮৪ সালের শিখ-বিরোধী দাঙ্গার মতো ঘটনায় আক্রান্তদের পক্ষে আদালতে লড়াই করেছিলেন বৃন্দা। ১৯৮৭ সালে হাতে নেন উত্তরপ্রদেশের হাসিমপুরা হত্যা মামলা। এর পর ২০০১ সালে সংসদ ভবনে হামলার অভিযুক্ত এস এ আর গিলানির হয়ে মামলা লড়েছিলেন তিনি। ২০০৪ সালে ইশরাত জাহান মামলার পাশাপাশি ২০০৮ সালে কান্দামালে খ্রিস্টান-বিরোধী দাঙ্গা মামলার আইনি লড়াইয়েও নেমেছিলেন বৃন্দা। ২০১১ সালে সোনি সুরি নির্যাতন মামলা ছিল তাঁর হাতে। ২০১৩ সালের মুজাফফরনগর দাঙ্গায় ৭ জন গণধর্ষণের শিকার হন। তাঁদের আইনি লড়াইয়েও ছিলেন দিল্লির এই আইনজীবী। ২০১৩ সালেই টাইম ম্যাগাজিনের বিশ্বের ১০০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের তালিকাতেও উঠে আসে বৃন্দা গ্রোভারের নাম।
বৃন্দার মামলাগুলোর মধ্যে আর একটি উল্লেখযোগ্য হল বিলকিস বানো মামলা। ১১ জন ধর্ষকের মুক্তির সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে গুজরাট সরকারের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যান বিলকিস বানো। তাঁর হয়ে মামলা লড়েন বৃন্দা। শীর্ষ আদালতে তিনি বলেছিলেন, গুজরাট সরকারের সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ বেআইনি।
মামলা লড়ার পাশাপাশি আইন সংশোধনেও বৃন্দার ভূমিকা রয়েছে। ২০১০ সালে নির্যাতন প্রতিরোধ বিলের কমিটির সদস্য ছিলেন তিনি। ২০১৩ সালে যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ বিলের সংশোধনীর খসড়া তৈরিতে অংশ নিয়েছিলেন বৃন্দা। বিভিন্ন সময়ে পুলিশ ও বিচার বিভাগের আধিকারিকদের প্রশিক্ষণের জন্যও বৃন্দা গ্রোভারকে ডাকা হয়। শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক স্তরেও খ্যাতি রয়েছে এই আইনজীবীর। ২০২৩ সালে রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে ইউক্রেনের তদন্তের জন্য স্বাধীন আন্তর্জাতিক কমিশনের সদস্য হিসাবে বৃন্দা গ্রোভারকে নিয়োগ করা হয়। এবার তিনি লড়াই করবেন আর জি করের নির্যাতিতার সুবিচারের জন্য।
উল্লেখ্য, আর জি কর মামলায় এতদিন মৃত চিকিৎসকের বাবা-মায়ের আইনজীবী ছিলেন বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। সূত্রের খবর, বিকাশ মামলা নিয়ে রাজনীতি করছেন বলে অভিযোগ উঠছিল। যা নিয়ে অসন্তুষ্ট মৃতার বাবা-মা। সেই কারণেই আইনজীবী বদলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। মৃতার বাবা-মা চাইছেন, তাঁদের হয়ে লড়াই করুক কোনও আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী। সেই কারণেই নিয়োগ করা হয়েছে বৃন্দা গ্রোভারকে। ৩০ সেপ্টেম্বর ফের শুনানি আর জি কর মামলার।