সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: লোকসভা নির্বাচন এবং রাজ্যের ছটি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনের মাঝে ব্যবধান ছিল মাস ছয়েকের। আর এই ছমাসে রাজ্য রাজনীতিতে তোলপাড় ফেলে দেওয়া ঘটনা নিঃসন্দেহে আর জি করে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-হত্যাকাণ্ড। ঘটনা নিঃসন্দেহে ভাষাহীন নিন্দনীয়। তার জোরালো প্রতিবাদও স্বাভাবিক ও স্বতঃস্ফূর্ত। কিন্তু আর জি কর নিয়ে স্বতঃস্ফূর্ত নাগরিক আন্দোলনকে আড়ালে থেকে যেভাবে বামেদের বিরুদ্ধে উসকানি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, তা খানিকটা সত্যি প্রমাণিত হল বাংলার ৬ কেন্দ্রের উপনির্বাচনে। আন্দোলনে অক্সিজেন জুগিয়েও মরা ভোটবাক্সে জোয়ার আনতে ডাহা ফেল বাম শিবির। উলটে সব কেন্দ্রেই জামানত বাজেয়াপ্ত হচ্ছে বাম প্রার্থীদের। একই হাল কংগ্রেস প্রার্থীদেরও।
মাদারিহাট, সিতাই, তালড্যাংরা, মেদিনীপুর, হাড়োয়া, নৈহাটি - এই ছয় বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন ছিল। অন্যান্য ভোটের মতো এবার হাত-হাতুড়ির নির্বাচনী সমঝোতা হয়নি। নাগরিক আন্দোলনকে অস্ত্র করে লাল শিবির একাই উপনির্বাচনের লড়াইয়ে নেমেছিল। আলিমুদ্দিনের সমর্থন না পেয়ে বাধ্যত 'একলা চলো' নীতি গ্রহণ করতে হয় কংগ্রেসকেও। হাড়োয়ায় আবার বামেদের সমর্থনে প্রার্থী ছিলেন আইএসএফের পিয়ারুল ইসলাম। শনিবার ফলপ্রকাশের পর দেখা গেল, হাড়োয়ায় বিজেপিকে পিছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে পিয়ারুল। পেয়েছেন ২৫ হাজার ৬৮৪টি ভোট। তৃণমূলের রবিউল ইসলামের কাছে তিনি হেরেছেন ১ লক্ষ ৩১ হাজার ৩৮৮ ভোটে। কিন্তু দ্বিতীয় হয়েও ১৬.৪ শতাংশের কম ভোট পাওয়ায় পিয়ারুলের জামানত বাজেয়াপ্ত হতে চলেছে। এখানকার কংগ্রেস প্রার্থী হাবিব রেজা চৌধুরীর ঝুলিতে এসেছে মাত্র ৩৭৬৫ ভোট।
নৈহাটি আসনটি এবার বামেরা সিপিএম(এল)কে ছেড়েছিল। প্রার্থী ছিলেন দেবজ্যোতি মজুমদার। টেনেটুনে ১০ হাজার ভোটও পাননি তিনি। তাঁর চেয়েও কম ভোট পেয়েছেন কংগ্রেস প্রার্থী পরেশনাথ সরকার। ফলে দুজনেরই জামানত বাজেয়াপ্ত। মেদিনীপুরের সিপিআই প্রার্থী মণিকুন্তল খামরুই পেয়েছেন প্রায় ১২ হাজার ভোট, কংগ্রেসের শ্যামলকুমার ঘোষ টেনেটুনে হাজার চারেক ভোট ঝুলিতে ভরেছেন। তালড্যাংরায় দশম রাউন্ডের গণনায় সিপিএম প্রার্থী দেবকান্তি মোহান্তির সংগ্রহ প্রায় ১৮ হাজার ভোট। আর কংগ্রেসের ঝুলিতে হাজার চারেক ভোট। এই পরিসংখ্যান তুলে ধরাও লজ্জাজনক হয়ে পড়েছে বাম-কংগ্রেসের কাছে।
এনিয়ে অধীর চৌধুরীর প্রতিক্রিয়া, ''আর জি কর আন্দোলনের সঙ্গে এই ভোটের কোনও সম্পর্ক নেই। বাংলার জেলায় জেলায় লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের প্রভাব রয়েছে। কিন্তু বাকি যেটুকু অংশে ভোট করার, সেটা করতে দেয়নি তৃণমূল। তার মানে এটা নয় যে আর জি কর আন্দোলনে সরকারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, সেগুলো ভুল। সেটা একটা বড় আন্দোলন, তার গুরুত্ব আছে। তবে গ্রাম বাংলার ভোটের সঙ্গে তার সম্পর্ক নেই।'' আর ফিরহাদ হাকিমের কটাক্ষ, ''আমার মনে হয়, বামফ্রন্ট উবে যাচ্ছে। যেমনটা আগে রাশিয়ায় উঠে গিয়েছে।'' এখন দেখার, পরবর্তী নির্বাচনগুলির বৈতরণী পেরতে কী স্ট্র্যাটেজি গ্রহণ করে দুর্বল থেকে দুর্বলতর বিরোধীরা।