বাবুল হক, মালদহ: উপাচার্য ইস্যুতে ফের রাজ্য বনাম রাজভবন সংঘাত। এবার গৌড়বঙ্গের উপাচার্যকে সরাল রাজভবন, তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তাঁকে বহাল রাখল রাজ্য সরকার।
লোকসভা নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্যেই এবার গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে হঠাৎ সরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ জারি করেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। রবিবার রাতে রাজভবন থেকে সেই চিঠি পান গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রজত কিশোর দে। সোমবার তা নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে ওঠে। সুপ্রিম কোর্টের আদেশ লঙ্ঘন করে রাজ্যপাল এমন নির্দেশ একতরফা ও অন্যায়ভাবে জারি করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। তার পর সোমবার বিকেলেই রাজ্য সরকারের তরফে অধ্যাপক রজত কিশোর দে'কে-ই গৌড়বঙ্গে উপাচার্য হিসাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়। ফলে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে রাজ্যের সঙ্গে রাজভবনের সংঘাত যে সেই তিমিরেই রয়েছে, তা আরও একবার প্রকাশ্যে চলে এল।
[আরও পড়ুন: জয়ের মাঝে কাঁটা! চেন্নাইকে হারিয়েও কড়া শাস্তির মুখে ঋষভ]
এই ঘটনায় চরম ক্ষুব্ধ গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রজত কিশোর দে। এদিন মালদহে রজতবাবু বলেন, "গতরাতে রাজ ভবনের চিঠি পেয়ে হতাশ হয়ে পড়ি। আমার মনে হয়েছে তাতে আমাকে হেনস্তা ও অসম্মান করা হয়। সোমবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের কাছে রাজ্য সরকারের তরফে একটি চিঠি এসেছে। তাতে আমাকে কাজ চালিয়ে যেতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাজ্য সরকারের নির্দেশকে মান্যতা দিয়ে আমি গৌড়বঙ্গে কাজ চালিয়ে যাব।" লোকসভা নির্বাচনের মুখে নির্বাচন আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ ওঠে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রজত কিশোর দে'র বিরুদ্ধে। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে অধ্যাপকদের সংগঠন ওয়েবকুপার রাজ্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়াকে কেন্দ্র করে বিজেপি ও কংগ্রেস দলের তরফে ওই অভিযোগ তোলা হয়। ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশনকে সেই অনুষ্ঠান সংক্রান্ত বিষয়ে শোকজের জবাব দিয়েছেন উপাচার্য। তার পর হঠাৎ তাঁকে অপসারণের নির্দেশ দেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। রবিবার রাতেই গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে আচার্য তথা রাজ্যপালের সেই চিঠি রাজভবন থেকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সোমবার বিষয়টি জানাজানি হতেই গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃণমূল ছাত্র সংগঠন থেকে শুরু করে অধ্যাপকদের সংগঠন ওয়েবকুপার কর্মকর্তাদের মধ্যে চরম অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে।
তৃণমূল পরিচালিত সংশ্লিষ্ট ছাত্র ও শিক্ষা সংগঠনের একাংশ কর্মকর্তারা রাজ্যপালের ভূমিকায় ধিক্কার জানায়। নির্বাচন প্রক্রিয়া চলাকালীন বিধিভঙ্গের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এরকম পদক্ষেপ নেওয়া যায় কি না সে ব্যাপারেও প্রশ্ন তোলেন ওয়েবকুপার কর্মকর্তারা। তৃণমূল পরিচালিত কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকদের সংগঠন ওয়েবকুপার রাজ্যের সহ-সভাপতি তথা বিশিষ্ট অধ্যাপক ড. মণিশংকর মণ্ডল জানিয়েছেন, সম্প্রতি তৃণমূলের অধ্যাপক ও অধ্যাপিকাদের সংগঠনের কনভেনশনকে ঘিরেই নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছিল। সেই অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। কোনও রকম নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গ করা হয়নি। শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠটুকু ব্যবহার করা হয়েছিল। তাও আচার্য তথা রাজ্যপাল এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসি কমিটির নির্দেশ মেনে। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের পোর্টালেও এই সম্মেলন করার জন্য অনুমতি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন ওয়েবকুপার কনভেনশনের অজুহাত দেখিয়েই গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে অপসারিত করা হয়। তিনি বলেন, "এই ঘটনায় আমরা রাজ্যপালের ভূমিকায় ধিক্কার জানাচ্ছি।"
[আরও পড়ুন: ‘১৮ মাস অপেক্ষা করেছি’, এক হাতে ছক্কা হাঁকিয়ে তৃপ্ত ‘কামব্যাকের’ পন্থ]
উল্লেখ্য, গত শনিবার তৃণমূল পরিচালিত অধ্যাপকদের সংগঠন ওয়েবকুপার একদিনের কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয় গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে। সেখানে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু ছাড়াও রাজ্যের বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১ হাজার ৭০০ জন প্রতিনিধি শামিল ছিলেন। নির্বাচন বিধিভঙ্গের অভিযোগ তুলেছিল কংগ্রেস ও বিজেপি। তারপরেই সরিয়ে দেওয়া হয় গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রজত কিশোর দে'কে। মাত্র ন'মাস আগে রজত কিশোর দে'কে উপাচার্য পদে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ করা হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট সম্প্রতি আদেশ দিয়েছে, এই মুহূর্তে কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ বা অপসারণ করা যাবে না। সুপ্রিম কোর্টের এই গাইডলাইনের ভিত্তিতেই রাজ্য সরকার চব্বিশ ঘন্টার মধ্যেই রজত কিশোর দে'কে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসাবে বহাল থাকার নির্দেশ দিয়েছে।