ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: ওমিক্রনের (Omicron) সুনামির আশঙ্কা করছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ডেল্টা-ওমিক্রন জোড়া ফলায় আতঙ্ক ছড়াচ্ছে বিশ্বজুড়ে। একইরকম ভাবে এই সময়ে রাজ্যেও করোনা পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন স্বাস্থ্যকর্তারা (WB Health Department)। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আর তাই তড়িঘড়ি ব্যবস্থাও নিতে শুরু করেছে রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তর। ইতিমধ্যে কলকাতা-সহ সমস্ত জেলাকে সতর্ক করেছে তারা। বলেছে, কোভিড-১৯ পরীক্ষা বাড়াতে হবে। প্রতিদিন অন্তত ৪০ হাজার করোনা পরীক্ষা করতে হবে।
স্বাস্থ্যদপ্তরের কর্তাদের আশঙ্কা, আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে রাজ্যের করোনা সংক্রমণ দ্বিগুণ হতে পারে। দৈনিক সংক্রমিত হতে পারেন ৩০-৩৫ হাজার মানুষ। এটাকে কার্যত তৃতীয় ঢেউ বলেই মনে করছেন স্বাস্থ্য আধিকারিকরা। তাই তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নিতে শুরু করলেন তাঁরা।
রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী এদিন আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “ডেল্টার থেকেও দ্রুত সংক্রমিত হয় ওমিক্রন। তাই প্রথম বা দ্বিতীয় ঢেউয়ের তুলনায় এবার আক্রান্ত একটু বাড়তে পারে। সেদিকে তাকিয়ে কলকাতা-সহ গোটার রাজ্যের সব কোভিড হাসপাতাল ও সেফ হোমগুলিকে খুলে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মী, চিকিৎসকদের ফের কোভিড ডিউটিতে ফিরিয়ে আনা হবে। নতুন করে রোস্টার তৈরি করা হচ্ছে। অক্সিজেন, ওষুধ সরবরাহ অক্ষুন্ন রাখতে আলাদা টিম তৈরি করা হয়েছে।” আইসিএমআরের সহ অধিকর্তা ড. সমীরণ পন্ডার কথায়, “ডেল্টার থেকে ওমিক্রন দ্রুত ছড়ায়, এটা যেমন ঘটনা তেমনই মারণ ক্ষমতাও কম। এটাই ভরসার।” তাঁর কথায়, মাস্ক, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন।
[আরও পড়ুন: Omicron: ‘ওমিক্রন সুনামিতে ভেঙে পড়বে গোটা বিশ্বের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা’, আশঙ্কা WHO প্রধানের]
সামান্য জ্বর, সর্দি, কাশির উপসর্গ থাকলেই করোনা পরীক্ষা করাতে হবে। কোনওরকম শৈথিল্য দেখানো চলবে না। প্রথববার রিপোর্ট নেগেটিভ এলেও ৮ দিন পর ফের পরীক্ষা করাতে হবে। সেই রিপোর্ট নেগেটিভ এলে তবেই নিশ্চিন্ত হওয়া যাবে। যদি রিপোর্ট পজিটিভ আসে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে নমুনা জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ে পাঠানো হবে। করাতে হবে ওমিক্রন পরীক্ষা। রাজ্য স্বাস্থ্যদপ্তরের ল্যাবেই জমা দেওয়া হবে নমুনা। স্বাস্থ্যকর্মীরা সেই নমুনা সংগ্রহ করে ট্রপিক্যাল মেডিসিনে পাঠানো হবে। সেখান থেকেই মিলবে রিপোর্ট। সংক্রমণের আশঙ্কা এড়াতে স্বাস্থ্যদপ্তরের পরামর্শ, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখুন। রাস্তায় বের হলেই মাস্ক পরতে হবে। মাস্ক ছাড়া রাস্তায় বের হওয়া চলবে না। এদিকে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় কলকাতার একাধিক অভিজাত ক্লাবে বর্ষবরণের অনুষ্ঠান স্থগিত রাখা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, বুধবারই রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণ স্বরূপ নিগমের কাছে কলকাতার করোনা পরিস্থিতি নিয়ে আলাদা ভাবে জানতে চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপরই পরিস্থিতি বিবেচনা করে কনটেনমেন্ট জোন করার পরামর্শ দেন। তবে বছরের শেষ ও নতুন বছরের শুরুতে রাজ্যবাসীর বিভিন্ন প্ল্যান থাকে। সেই কারণে ৩ জানুয়ারি থেকে কনটেনমেন্ট জোন করার কথা বলেন তিনি। পাশাপাশি প্রয়োজনে ফের অফিস-কাছারির ক্ষেত্রে ওয়ার্ক ফ্রম হোমে জোর দেওয়ার কথাও বলেন। প্রয়োজনে লোকাল ট্রেন নিয়ে ভাবনা চিন্তা করা হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। তবে গঙ্গাসাগর মেলার আগে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না বলে সাফ জানিয়েছেন তিনি।