স্টাফ রিপোর্টার, নয়াদিল্লি: পঞ্চায়েত নির্বাচনকে (WB Panchayat Election) নজরে রাখতে এবার আসরে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। ভোট প্রক্রিয়া ঘিরে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে পর্যবেক্ষক হিসাবে রাজ্যে আসছেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের (NHRC) ডিজি। ভোটপর্ব মিটে যাওয়া পর্যন্ত তিনি থাকবেন রাজ্যে। স্বতঃপ্রণোদিত এই সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের দাবি, রাজ্য নির্বাচন কমিশনের (State Election Commission) সঙ্গে পরামর্শ করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যদিও রাজ্য নির্বাচন কমিশনের বক্তব্য, তারা এই বিষয়ে কিছুই জানে না।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, পর্যবেক্ষক হিসেবে আসা কমিশনের ডিজি (তদন্ত) বিভিন্ন এলাকা ঘুরে স্পর্শকাতর কেন্দ্র চিহ্নিত করবেন। রাজ্যের মুখ্যসচিব ও ডিজিকে তাঁকে সহযোগিতা করতে হবে। কোথায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা দু’সপ্তাহের মধ্যে জানাতে হবে। এদিকে, বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, আদৌ কি এইভাবে নিজে থেকে রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটে পর্যবেক্ষক (Observer)পাঠাতে পারে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন? এটা কি তাদের এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে? কারণ, রাজ্য নির্বাচন কমিশন স্বাধীন এবং নিরপেক্ষ। তারা যতক্ষণ না সাহায্য চাইছে, ততক্ষণ কোনও কেন্দ্রীয় সংস্থারই স্বতঃপ্রণোদিতভাবে নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্যে ঢোকার অধিকার নেই। রাজনৈতিক মহলের একাংশের দাবি, পঞ্চায়েত ভোটে প্ররোচনা দিতেই জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এই পদক্ষেপ করেছে।
[আরও পড়ুন: রেজিস্ট্রি বিয়ের পরই ডিভোর্সের দাবি, বিজেপি বিধায়কের বিরুদ্ধে অত্যাচারের অভিযোগ নববধূর]
অন্যদিকে, মনোনয়ন পর্ব (Nomination) ঘিরে বিভিন্ন মহল থেকে অশান্তির অভিযোগ ওঠায় নিরাপত্তা আরও কড়াকড়ির সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। সোমবার থেকে প্রতিটি মনোনয়ন কেন্দ্রের এক কিলোমিটার পর্যন্ত জারি হচ্ছে ১৪৪ ধারা। পাশাপাশি, মনোনয়ন প্রক্রিয়ার ভিডিওগ্রাফি হবে। পঞ্চায়েত নির্বাচন ঘোষণার পর রাজ্যের নানা প্রান্তে কিছু বিক্ষিপ্ত হিংসার অভিযোগ এসেছে। আর সেসবের দায় রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীব সিনহার উপর চাপিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)।
এদিন শুভেন্দু রাজ্যপালকে নিশানা করে বলেন, ‘‘রাজীব সিংহকে নিয়োগ করার আগে তাঁর আরও খোঁজ নেওয়া উচিত ছিল। এখন তিনি অনেক কিছু বললেও নির্বাচন কমিশনার কথা শুনছেন না।’’ সংবাদমাধ্যমে হিংসার খবর উদ্ধৃত করে রবিবার স্বতঃপ্রণোদিত ওই পদক্ষেপ করার কথা জানিয়েছে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। সরেজমিনে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আসা কমিশনের ডিজি (তদন্ত) রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে যিনি রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরে রিপোর্ট জমা দেবেন বলে জানানো হয়েছে। রাজ্যের মুখ্যসচিব ও পুলিশের ডিজিকে বলা হয়েছে, ভোটের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করতে হবে। নোটিস দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিবকেও।
[আরও পড়ুন: সেনা জওয়ানের স্ত্রীকে অর্ধনগ্ন করে ১২০ জন মিলে মার! চাঞ্চল্য তামিলনাড়ুতে]
রাজনৈতিক মহলের মত, পঞ্চায়েতে ৬৩ হাজার আসনে প্রার্থী দেওয়াটাই বিজেপির পক্ষে দুষ্কর। ফলে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে রাজ্যে আনার পরিকল্পনা বাস্তবে রূপায়ণ করা যাবে না বুঝে মানবাধিকার কমিশনকে মাঠে নামানো হয়েছে। যদিও নির্বাচন কমিশন কীভাবে চলবে, তা তারাই সিদ্ধান্ত নেয়। এমনকী সাধারণভাবে কোনও বেআইনি পদক্ষেপ না হলে আদালতও হস্তক্ষেপ করে না নির্বাচন প্রক্রিয়ার মধ্যে। তাই জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের পদক্ষেপ ঘিরে রাজনৈতিক চাপানউতোর আরও তুঙ্গে উঠতে পারে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল।