সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ডহারবার: ভোটপ্রচার শেষ হতেই প্রবীণ তৃণমূল কর্মীর (TMC Worker) বাড়িতে গিয়ে তাঁর ছেলেকে প্রাণে মারার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠল বিজেপির (BJP) বিরুদ্ধে। অভিযোগ, বিজেপির হুমকিতে আতঙ্কিত হওয়ার কারণেই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় কর্মীর বাবার। ৬৫ বছরের ওই ব্যক্তি নিজেও তৃণমূল কর্মী ছিলেন। মঙ্গলবার রাতের এই ঘটনাকে ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়েছে সুন্দরবন (Sundarbans) পুলিশ জেলার পাথরপ্রতিমা থানার ব্রজবল্লভপুরে। প্রবীণ ওই তৃণমূল কর্মীর পুত্র তাঁর বাবার মৃত্যুর জন্য সরাসরি বিজেপিকে দায়ী করে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার পাথরপ্রতিমা বিধানসভা কেন্দ্রে ছিল ভোটপ্রচারের শেষ দিন। ১ এপ্রিল ওই কেন্দ্রে ভোট। তার আগেই পাথরপ্রতিমার ব্রজবল্লভপুরে তৃণমূল কর্মী বসন্ত সাহুর (৬৫) মৃত্যুকে ঘিরে রাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে এলাকায়। মৃতের ছেলে স্থানীয় অঞ্চল যুব তৃণমূল কংগ্রেস সম্পাদক দেবাশিস সাহুর অভিযোগ, মঙ্গলবার রাতে ভোটের কাজে বুথেই ছিলেন তিনি। বাড়িতে ছিলেন তাঁর মা-বাবা, স্ত্রী ও ছেলে। রাত সাড়ে দশটা নাগাদ বিজেপির মদতপুষ্ঠ ৮-১০ জনের এক দুষ্কৃতীদল মদ্যপ অবস্থায় তাঁদের বাড়ির সামনে আসে। দেবাশিসের নাম ধরে ডেকে তাঁকে খুন করার হুমকি দেয়। তৃণমূলকে ভোট দিলে এলাকা শ্মশান বানিয়ে দেওয়ার কথাও বলা হয়। চলে অশ্রাব্য গালিগালাজ। বেশ কিছুক্ষণ ধরে এই কাণ্ডকারখানা চলে। আর তাতেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েন দেবাশিসের পরিবারের লোকজন। অভিযোগ, আতঙ্কে অসুস্থ হয়ে পড়েন ৬৫ বছরের বসন্ত সাহু। হৃদরোগে আক্রান্ত হন তিনি। খবর পেয়ে দেবাশিস বাড়িতে আসার আগেই ওই দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়। অসুস্থ বাবাকে নিয়ে ব্রজবল্লভপুর গ্রামীণ হাসপাতালে পথে রওনা দেন দেবাশিসবাবু। যাওয়ার পথেই বসন্ত সাহুর মৃত্যু হয়।
[আরও পড়ুন: দ্বিতীয় দফার নির্বাচনের আগেই রণক্ষেত্র সবং, বিজেপি কর্মীর বাড়ি ভাঙচুর, বোমাবাজি!]
পাথরপ্রতিমার (Patharpratima) বিদায়ী বিধায়ক ও এবারের তৃণমূল প্রার্থী (TMC Candidate) সমীর কুমার জানা স্পষ্ট জানিয়েছেন, প্রবীণ ওই তৃণমূল কর্মীর ছেলেকে বিজেপি মদতপুষ্ঠ দুষ্কৃতীরা খুনের হুমকি দেওয়ায় এবং বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েন বসন্ত সাহু। মানসিকভাবে দীর্ঘক্ষণ ধরে অত্যাচার করা হয় তাঁর উপরে। তা সহ্য করতে না পেরেই ৬৫ বছরের বৃদ্ধের মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ তাঁর।
এদিকে বিজেপি প্রার্থী (BJP Candidate) অসিত কুমার হালদার তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বলেন, “এই অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যে। যে কোনও মৃত্যু নিয়েই রাজনীতি করা অভ্যাস তৃণমূলের। এ ক্ষেত্রেও সেটাই করছে তৃণমূল।” বিজেপি কখনও এমন হিংসার রাজনীতি করে না বলেই জানান তিনি। অভিযোগ পেয়েই তদন্ত শুরু হয়েছে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এদিকে বুধবার সকালে প্রবীণ ওই তৃণমূল কর্মীর দেহ সৎকার করা হয়। প্রায় হাজার দেড়েক তৃণমূল কর্মী-সমর্থক এদিন তাঁর বাড়িতে গিয়ে শ্রদ্ধা জানান। গ্রাম পঞ্চায়েতের অনেক তৃণমূল নেতাও তাঁর শেষকৃত্যে যোগ দেন।