বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য, শিলিগুড়ি: দক্ষিণ ভিজলেও শুখা উত্তর। শক্তিশালী উত্তর-পশ্চিমী হাওয়া বৃষ্টি আটকে উত্তরে ভিলেনের ভূমিকায়। সম্ভাবনা তৈরি হলেও মাটি ভেজার মতো বৃষ্টি পাচ্ছে না চা ও কৃষি বলয়। আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার থেকে এই দফায় উত্তরে আর তেমন বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। উলটে ফের বাড়বে তাপমাত্রা (Temparature)। স্বভাবতই পানীয় জলকষ্ট তীব্র হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি ভূগর্ভস্থ জলস্তর নেমে যাওয়ায় কৃষিতে দেখা দিতে পারে খরার পরিস্থিতি।
কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের সিকিম কেন্দ্রের অধিকর্তা গোপীনাথ রাহা বলেন, "বৃষ্টির খুব ভালো পরিস্থিতি তৈরি হয়েও লাভ হলো না। হঠাৎ উত্তর-পশ্চিমী হাওয়া সক্রিয় হতে বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাষ্প ঢোকা বন্ধ হয়ে যায়। ওই কারণে স্থানীয়ভাবে কিছু এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে খুবই সামান্য বৃষ্টি মিলেছে। বিস্তীর্ণ এলাকা বৃষ্টিহীন থেকেছে।" তিনি জানান, এই মুহূর্তে উত্তরবঙ্গের (North Bengal) বিভিন্ন জেলার যা পরিস্থিতি তাতে একটানা অন্তত তিন ঘন্টা ভারী বর্ষণ দরকার। কিন্তু সেটা হচ্ছে না।
[আরও পড়ুন: পাহাড়ে যেতে চান কিন্তু ট্রেনে টিকিট নেই? ‘সামার স্পেশাল’ চালু করছে রেল]
পাঁচদিনের বৃষ্টিপাতের পরিসংখ্যান বলছে, সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে ৮ মে, সেবকে। সেখানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৩৯.০৩ মিলিমিটার। ওই দিনই শিলিগুড়ির (Siliguri) বাগরাকোটে ২৪.০৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। এর বাইরে দার্জিলিং, কালিম্পং, গজলডোবা, ময়নাগুড়ি ও ঝালংয়ে ইলশে গুঁড়ি বৃষ্টি ছিল। এর আগে ৭ মে আলিপুরদুয়ার শহরে ২১.০২ মিলিমিটার, হাসিমারায় ৯ মিলিমিটার, মূর্তিতে ১১.০৪ মিলিমিটার, বক্সা পাহাড়ে ১২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, শিলিগুড়ি ছিল বৃষ্টিশূন্য। ৯ মে থেকে ১১ মে পর্যন্ত কোথাও মাঝারি বৃষ্টি ছিল না। শুধুমাত্র ১০ মে বারোবিশায় ১৪.০৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে একদিকে যেমন ভূ-গর্ভস্থ জলস্তর উদ্বেগজনকভাবে নেমেছে। গ্রাম-শহরে তীব্র হয়েছে পানীয় জলকষ্ট। অন্যদিকে, কৃষি ও চা বলয় ঝলসে পুড়ে খাক হয়েছে। কিন্তু এমন পরিস্থিতি হবে সেটা আবহাওয়া দপ্তরের কর্তারাও ভাবতে পারেননি। কারণ, দিনভর উত্তরের আকাশ কালো মেঘে ঢাকা ছিল। তবু কেন বৃষ্টি পেল না চাষের মাঠ?
[আরও পড়ুন: মাতৃদিবসে হেঁশেলে থাকুক মায়ের ছুটি! সারপ্রাইজ দিন এই পদগুলো রেঁধে]
আবহাওয়া দপ্তরের কর্তারা পূর্বাভাস নিয়ে (Weather Forecast) জানান, পরিবেশ অনুকূল ছিল। দখিনা হাওয়া বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাষ্প বয়ে আনতেও শুরু করেছিল। কিন্তু হঠাৎ উত্তর-পশ্চিমী হাওয়া সক্রিয় হয়ে দখিনা হাওয়ার পথে দেওয়াল তুলে দাঁড়ানোয় সব হিসেব উলটে যায়। বাধা পেয়ে দখিনা বাতাস জলীয় বাষ্প নিয়ে উত্তরের আকাশে ঢুকে বর্ষণমুখর পরিবেশ তৈরির সুযোগ পায়নি। উলটে উত্তর-পশ্চিমী হাওয়া সক্রিয় হতে উত্তরে শীতের আমেজ ফিরে আসে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের সিকিম কেন্দ্রের অধিকর্তা জানান, রবিবারের পর আপাতত বৃষ্টির তেমন সম্ভাবনা নেই। উলটে তাপমাত্রা অন্তত ৩ ডিগ্রি বাড়তে পারে। ওই পরিস্থিতিতে পানীয় জলকষ্ট আরও বেড়ে যেতে পারে। শুধু তাই নয়। কৃষক এবং ক্ষুদ্র চা চাষিদের আশঙ্কা, আরও এক-দেড় সপ্তাহ বৃষ্টিহীন চললে খরা পরিস্থিতি দেখা দিতে পারে। কারণ, ইতিমধ্যে নদী, পুকুর, ডোবা শুকিয়ে যাওয়ায় সেচের জল মিলছে না। গভীর নলকূপ এবং শ্যালোতেও জল উঠছে না।