স্টাফ রিপোর্টার: জন্মানো ইস্তক মায়ের বুকের দুধ হতে পারে আগামীর সুরক্ষা কবচ। কিন্তু সেটাই তো পায় না সকলে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (World Health Organization) সমীক্ষা বলছে, ভারতে মাত্র ৪১ শতাংশ শিশু জন্মের ১ ঘণ্টার মধ্যেই মায়ের বুকের দুধ পায়। বঙ্গে এ সংখ্যা সামান্য বেশি হলেও আশাব্যঞ্জক কিছু নয়। এই না পাওয়ার পিছনে রয়েছে অগুনতি কারণ। প্রসূতির অজ্ঞতা যার মধ্যে প্রধান। মাকে স্তন্য পান করানোর ‘অ আ ক খ’ শেখাবে নতুন ওয়েবসাইট www.breastfeeding.org.in।রবিবার বিশ্ব স্তন্যপান সপ্তাহের সূচনায় যে ওয়েবসাইটের সূচনা করল নিওন্যাটোলজি সোসাইটি অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংস্থার সভাপতি চিকিৎসক ডা. অনুপ কে মঙ্গল, সম্পাদক শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সুমিতা সাহা। ছিলেন ন্যাশনাল নিউন্যাটোলজি ফোরামের সর্বভারতীয় সভাপতি ডা. রঞ্জন পেজভার, ইউনিসেফের প্রতিনিধি ডা. কনীনিকা মিত্র। মাতৃদুগ্ধের বিকল্প নেই। নবজাতকের পুষ্টি, বৃদ্ধি ও বিকাশের জন্য যাবতীয় প্রয়োজন মায়ের দুধ থেকে পাওয়া যায়। তাই জন্মের পরে, যত দ্রুত সম্ভব নবজাতককে মায়ের দুধ পান করানো দরকার। প্রতিটি শপিং মল, রেল স্টেশন সহ বিনোদন পার্কে ল্যাকটেশন রুম খোলার দাবি জানিয়েছেন নিউন্যাটোলজি ফোরামের সর্বভারতীয় সভাপতি ডা. রঞ্জন পেজভার। শিশুমৃত্যু ঠেকাতে কোটি কোটি টাকা খরচ হয় ফি-বছর। ডা. পেজভার জানিয়েছেন, স্রেফ মায়ের দুধই বাঁচিয়ে দিতে পারে কোটি কোটি টাকা। কারণ শিশুর শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে এই তরলই।
[আরও পড়ুন: তীর্থে গিয়ে হারিয়েছিলেন বাড়ির পথ, ৪ বছর পর মানসিক ভারসাম্যহীন মহিলাকে ফেরাল HAM রেডিও]
শিশুর জন্মের পরে, মায়ের স্তন থেকে প্রথম ঈষৎ হলুদ বর্ণের যে গাঢ় দুধ নিঃসৃত হয়, তাকে ‘কলোস্ট্রাম’ বলা হয়। ‘কলোস্ট্রাম’ নবজাতকের পক্ষে অত্যন্ত উপকারী। কিন্তু সমীক্ষা বলছে, জন্মের পরে বাচ্চাকে কখন স্তন্যপান করাবে তা জানেন না অনেক মা-ই। সে কারণেই নতুন ওয়েবসাইট। ডা. সুমিতা সাহা জানিয়েছেন, দেখা গিয়েছে গ্রামাঞ্চলে মায়েরা বুকের দুধ খাওয়ালেও শহরের চাকুরিজীবী মায়েরাই অন্য কিছু তুলে দিচ্ছেন শিশুর মুখে। সহজ কিছু ভিডিওর মাধ্যমে সেই সমস্ত মায়েদের শেখানো হবে কেন ভূমিষ্ঠ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই শিশুর মুখে দিতে হবে মাতৃদুগ্ধ। কীভাবে সদ্যোজাতকে কোলে নিয়ে দুধ খাওয়াবেন তার কৌশলও শেখাবে নয়া ওয়েবসাইট।
জন্মের পরেই মায়ের বুকের দুধ পায় দেশের মাত্র ৪১ শতাংশ শিশু। ছ’ মাস বয়স পর্যন্ত মায়ের দুধ পায় মাত্র ৫৪.৯ শতাংশ শিশু। এই সংখ্যাকে আরও বাড়াতে লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ২০২৫ এর মধ্যে একে ৬৫ শতাংশের উপরে নিয়ে যেতেই হবে। এদিনের অনুষ্ঠানে বাংলার প্রশংসা করেছেন ইউনিসেফের প্রতিনিধি ডা. কনীনিকা মিত্র। মায়ের বুকের দুধে পুষ্টিগুণ ছাড়াও আরও বিভিন্ন ধরনের ‘ইমিউনোগ্লোবিউলিন’ থাকে, যা নবজাতককে ভবিষ্যতে কয়েকটি রোগ থেকে মুক্ত রাখে। সঠিকভাবে মায়ের বুকের দুধ পেলে ঠেকানো যায় শিশুমৃত্যু। ডা. মিত্র জানিয়েছেন, গ্রামাঞ্চলে শিশু মৃত্যু কমেছে। তবে আশাকর্মীদের স্তনপান করানোর বিষয়ে আরও শিক্ষিত এবং সচেতন করে তুলতে হবে। গ্রামাঞ্চলে সরকারি হাসপাতালে শিশু প্রসব হলেও শহরের অধিকাংশ বাসিন্দা বেসরকারি হাসপাতালে যান। সেক্ষেত্রে স্তনপান করানোর সচেতনতা বাড়ানোয় বেসরকারি স্বাস্থ্য ক্ষেত্র তার ভূমিকা এড়িয়ে যেতে পারে না বলে জানিয়েছেন ডা. মিত্র।