ধ্রুবজ্যোতি বন্দ্যোপাধ্যায়: রাজীব বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের মন্ত্রিত্বের সময় বন সহায়ক পদে নিয়োগ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছিলেন তদন্তের কথাও। এবার সেই তদন্তে অনুমোদন দিল রাজ্য মন্ত্রিসভা। শুক্রবার বিধানসভায় অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট পেশের আগে ক্যাবিনেট বৈঠকে এ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে খবর। আলোচনায় বলা হয়েছে, বন সহায়ক নিয়োগ নিয়ে তদন্ত হওয়া উচিত। মন্ত্রিসভার দাবি, যে উদ্দেশে বন সহায়ক নিয়োগ করার কথা ছিল, তা পূরণ হয়নি। এরপরই মন্ত্রিসভার দাবিতে অনুমোদন দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। এই দপ্তরের মন্ত্রী ছিলেন সদ্য বিজেপিতে যোগদানকারী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় (Rajib Banerjee)। তাঁর মন্ত্রিত্বকালেই এই দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী নিজে। এদিন ক্যাবিনেট বৈঠকে তা অনুমোদিত হওয়ায় দ্রুতই রাজীবের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
চলতি সপ্তাহে আলিপুরদুয়ারের দলীয় কর্মিসভা থেকে সদ্য দলত্যাগীদের কড়া বার্তা দিয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। সেখানেই নাম না করে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করেন তিনি। বন সহায়ক পদে চাকরি নিয়ে কারচুপির অভিযোগে সরব হন তিনি। বলেন, ”আমাদের একজন ছিল, যার আমলে বন সহায়ক পদে নিয়োগে দুর্নীতি হয়েছে। আমরা তদন্ত করে দেখব।”
[আরও পড়ুন: জুনের পরেও মিলবে বিনামূল্যে রেশন সামগ্রী, অন্তর্বর্তী বাজেটে বড়সড় চমক মুখ্যমন্ত্রীর]
মাসকয়েক আগে অষ্টম শ্রেণি পাশে বন সহায়ক পদে প্রচুর কর্মী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করে রাজ্য সরকার। অষ্টম শ্রেণি পাশের পাশাপাশি উচ্চশিক্ষিতরাও আবেদনপত্র জমা দেন। শুধুমাত্র ইন্টারভিউর মাধ্যমে নিয়োগ হওয়ায় লাইনও পড়ে বিস্তর। এই শূন্যপদ নিয়ে চলতি সপ্তাহেই আলিপুরদুয়ারের প্যারেড গ্রাউন্ডের সভা থেকে মুখ খুলেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নাম না করে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Rajib Banerjee) বিরুদ্ধে তোপ দাগেন। কারণ, সেই সময় ঘাসফুল শিবিরে ছিলেন রাজীব। ছিলেন রাজ্যের বনমন্ত্রীও। ফলে অভিযোগের তির তাঁর দিকেই। ওই একই দিনে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ও জনসভায় পালটা জবাবে রাজীবও বলেন, ”কোথা থেকে নিয়োগের সুপারিশ এসেছে, তা দেখাতে পারি।” এই নিয়ে তরজায় জড়ায় যুযুধান দু’পক্ষ। বিষয়টি যে রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত, তা মনে করেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্য়ায় নিজে। এর মধ্যেই শুক্রবার রাজ্য মন্ত্রিসভা প্রাক্তন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তদন্তে সায় দেওয়ায় কিছুটা বিপাকে পড়তে পারেন বলে জল্পনা রাজনৈতিক মহলে।
[আরও পড়ুন: ‘জোড়াবাগান কাণ্ডে চুপ কেন?’, প্রশ্ন তুলে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে সরব অগ্নিমিত্রা]
এদিকে, এই সিদ্ধান্তের পরপরই বন সহায়ক নিয়োগকে কেন্দ্র করে স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনালে (SAT) মামলা দায়ের হল। মামলাকারী সজল দে-সহ ১২ চাকরিপ্রার্থীর আইনজীবী আশিস কুমার চৌধুরী জানান, বনদপ্তরে ২০০০ শূন্য পদে নিয়োগের জন্য গত বছর ৮ আগস্ট বিজ্ঞপ্তি জারি করে বনদপ্তর। সেই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি হয়েছে। নিয়োগ প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ করে আদালতের দ্বারস্থ চাকরিপ্রার্থীরা। ঘটনা হল, ওই পদে দু’লক্ষ চাকরিপ্রার্থী পরীক্ষা দিয়েছিলেন । কিন্তু কোনওরকম তালিকা প্রকাশ না করেই ওই পদে নিয়োগ সম্পন্ন হয়। এ নিয়ে রাজ্যের কাছে একাধিকবার আবেদন জানিয়ে কোনও সুরাহা হয়নি। শেষপর্যন্ত চাকরি প্রার্থীরা স্যাটের দ্বারস্থ হয়েছেন।