স্টাফ রিপোর্টার: পুজো (Durga Puja) পরিকল্পনা দূরে রেখে অক্সিজেন (Oxygen Cylinder) সরবরাহ করছে পুজো কমিটিগুলো। গত বছর করোনাকালেও (Corona Pandemic) পুজোর প্রস্তুতি চালিয়ে গিয়েছিলেন পুজো উদ্যোক্তারা। এবার অক্টোবর মাসে পুজো। এমন সময় থেকে বড় পুজো আয়োজকরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এবার ভোট (West Bengal Election) থাকায় পুজোপ্রস্তুতি পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ভোট মিটলে পুজোপ্রস্তুতি শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু ফের শহরে করোনার (COVID-19) প্রকোপ বেড়ে গিয়েছে। ভোট শেষ হলেও এই অতিমারীতে এখন আর পুজো নিয়ে ভাবছেন না আয়োজকরা। পুজোর আয়োজন থেকে সরে এসে অক্সিজেন সরবরাহ করছে পুজো কমিটিগুলো।
করোনা রোগীদের অক্সিজেন সরবরাহ করতে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ চালু করেছে ঠাকুরপুকুর এস বি পার্ক পুজো কমিটি। হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে নাম-ঠিকানা দিয়ে আবেদন করলে সঙ্গে সঙ্গে অক্সিজেন সিলিন্ডার পৌঁছে দিচ্ছে এস বি পার্ক। বিনামূল্যে অক্সিজেন সরবরাহ করা হচ্ছে। এস বি পার্ক পুজো কমিটির সম্পাদক অজয় মজুমদার বলেন, “পুজোর প্রস্তুতির বদলে এখন অক্সিজেন জরুরি। করোনায় মৃত্যু মিছিল বেড়ে চলছে। এমন পরিস্থিতিতে আমরা পুজো থেকে সরে এসে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। এখন অক্সিজেনের সংকট। এই সংকটে মানুষের জন্য অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। করোনার জন্য এস বি পার্ক তিনটি অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনেছে। এই তিনটি সিলিন্ডারে বিনামূল্যে অক্সিজেন পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।” অক্সিজেন সিলিন্ডার বাড়াতে চান বলেই জানান অজয় মজুমদার। কিন্তু অক্সিজেনের জোগান কম থাকায় সিলিন্ডার নিয়ে আসতে পারছি না।
[আরও পড়ুন: চলন্ত গাড়ি থেকে বোমা ছুঁড়ে পালাল দুষ্কৃতীরা, ভোটের সকালে উত্তপ্ত সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউ]
বেহালা ২৯ পল্লিও করোনা রোগীদের স্বাস্থ্য পরিষেবা দিতে স্থানীয় নার্সিংহোমগুলোর সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধতে চলেছে। বেহালা ২৯ পল্লি পুজো কমিটির সদস্য সৌরভ ঘোষ বলেন, “পুজোর এখন অনেকটা সময় রয়েছে। এই মুহূর্তে মানুষের পাশে দাঁড়ানো দরকার। আমরা সেটাই করছি। এখন পুজোর আয়োজনে যাচ্ছি না। পুজোর বাজেট তৈরি করা হচ্ছে না। বরং আমরা ক্লাবের সদস্য এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে নিয়ে করোনা মোকাবিলার কাজে রয়েছি।” তিনি আরও বলেন, “করোনা আক্রান্তদের বাড়িতে বাজার করে দেওয়া, ওষুধ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। অ্যাম্বুল্যান্স, হাসপাতালে বেডের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এছাড়া এলাকায় তিনটি নার্সিংহোমের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে অক্সিজেন সরবরাহ করার কথা চলছে। দু’-একদিনের মধ্যে এই ব্যবস্থা হয়ে যাবে বলে আশা করছি। এলাকায় ডাক্তারদের নিয়ে একটি টিম তৈরি করা হয়েছে। এলাকায় চিকিৎসকদের ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে। বেহালা অঞ্চলের মানুষ এই ডাক্তারদের কাছে চিকিৎসা পরামর্শ পেতে পারবেন। ২৪ ঘণ্টা এই পরিষেবা মিলবে।
এলাকায় করোনা সচেতনতার কাজ করছে সন্তোষপুর ত্রিকোণ পার্ক দুর্গোৎসব কমিটিও। এছাড়া পুজো কমিটি নিজেদের অ্যাম্বুল্যান্সে করোনা রোগীদের হাসপাতালে পৌঁছে দিচ্ছে। করোনা রোগীদের জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডারও নিয়ে আসতে চলেছে পুজো কমিটি। পুজো কমিটির সহ-সম্পাদক সৌভিক ভট্টাচার্য বলেন, “আগে মানুষকে বাঁচাতে হবে। তার পর পুজো। করোনাকালে চিকিৎসা পরিষেবা যাতে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যায় সেই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আমাদের একটি অ্যাম্বুল্যান্স রয়েছে। সেটি এখন করোনা রোগীদের হাসপাতালে পৌঁছে দিচ্ছে। অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে আসার কথা রয়েছে। এছাড়া এই গরমে রক্ত সংকট দেখা দিয়েছে। ভোটের জন্য প্রায় একমাসের বেশি রক্তদান শিবির বন্ধ ছিল। ২৯ এপ্রিল ভোট শেষ। ভোটের পর করোনা বিধি মেনে রক্তদান শিবিরের আয়োজন করার পরিকল্পনা রয়েছে। এই বিষয়ে কলকাতা পুলিশের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
আবার অনেকে বিনামূল্যে অক্সিজেন সরবরাহ করতে চাইলেও জোগানের ঘাটতি থাকায় উদ্যোগ নিতে পারছেন না। দেশপ্রিয় পার্কের পুজো উদ্যোক্তা সুদীপ্ত কুমার বলেন, “করোনায় মানুষে পাশে রয়েছে দেশপ্রিয় পার্ক। করোনা আক্রান্তদের পরিবারগুলোকে সবরকম সহযোগিতা করছি। অ্যাম্বুল্যান্স, হাসপাতালে বেডের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। রাসবিহারীর বাসিন্দাদের জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার রাখতে চাইছি। কিন্তু এখনও তো বাজারে অক্সিজেন সিলিন্ডার পাওয়া যাচ্ছে না। যদিও সিলিন্ডার কিনে আনা হল। কিন্তু তাতে অক্সিজেন ভরতে হবে। অক্সিজেনের জোগান না থাকলে খালি সিলিন্ডার রেখে কাজ হবে না।” তিনি আরও বলেন, “এক বছর পুজো বন্ধ রাখলে মহাভারত অশুদ্ধ হবে না। আগে মানুষের প্রাণ। পুজোর জন্য যে খরচভার ক্লাবের থাকে সেই টাকা মানুষের সেবার কাজে ব্যবহার করা হবে।”
হাতিবাগান পুজো উদ্যোক্তা এবং ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের সাধারণ সম্পাদক শাশ্বত বসু বলেন, “করোনা পরিস্থিতিতে পুজো নিয়ে ভাবছি না। পুজো না হলেও কোনও সমস্যা নেই। নিয়ম মেনে পুজোপাঠ করে পুজো করা যাবে। এখন আমরা পুজো আয়োজকরা অতিমারী থেকে মানুষকে কীভাবে বাঁচানো যায় সেই নিয়ে ভাবছি। হাতিবাগান-সহ অনেক পুজো কমিটি এখন করোনা রোগীদের স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দিচ্ছে।”