স্টাফ রিপোর্টার: উৎসবের মরশুম শেষ হওয়ার আগেই আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে রাজনীতির পারদ চড়তে শুরু করল। বুধবারই রাজ্যের ২০টি জেলার ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থার নতুন আসন বিন্যাস সংক্রান্ত খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন (State Election Commission)। তাতে সব স্তরেই আসনসংখ্যা বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু সেসব ছেড়ে রাজ্য পুলিশ দিয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচন করানে নিয়ে তরজা শুরু হয়েছে শাসক ও বিরোধী পক্ষের মধ্যে।
আসন্ন রাজ্যের ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রতি স্তরেই আসন সংখ্যা বাড়তে চলেছে। বুধবার রাজ্য নির্বাচন কমিশন রাজ্যের ২০টি জেলার ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত ব্যবস্থার যে নতুন আসন বিন্যাস সংক্রান্ত খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছে, তাতেই এই সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এদিন কমিশনের প্রকাশিত খসড়া তালিকায় জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি এবং গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে ২০১৮ সালের তুলনায় অনেক আসন বৃদ্ধির কথা বলা হয়েছে। প্রকাশিত খসড়া তালিকা অনুযায়ী, জেলা পরিষদে ২০১৮-র ৮২৫টি আসন বেড়ে দাঁড়াচ্ছে ৯২৮-এ। অর্থাৎ জেলা পরিষদে আসন বৃদ্ধি হচ্ছে ১০৩টি। একইভাবে পঞ্চায়েত সমিতি স্তরে আসন বাড়ছে ২৮১টি। সেখানে মোট আসনের সংখ্যা ৯২১৭ থেকে বেড়ে হয়েছে ৯৪৯৮। উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় আসন বেড়েছে গ্রাম পঞ্চায়েতে। খসড়া তালিকায় ২০১৮ সালের তুলনায় গ্রাম পঞ্চায়েতে আসন বাড়ছে মোট ১৩ হাজার ৭১২টি। গত পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্যে মোট গ্রাম পঞ্চায়েত আসন ছিল ৪৮, ৬৫০টি। এবছর তা বেড়ে হচ্ছে ৬২,৩৬২টি। কমিশন জানিয়েছে, ২ নভেম্বর পর্যন্ত এই ২০ জেলার মানুষ সংশ্লিষ্ট জেলা শাসক এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে খসড়া তালিকায় সংশোধন ও পরিমার্জণের দাবি জানাতে পারবে। ৭ থেকে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত সেই অনুযায়ী তালিকা সংশোধনের কাজ হবে। নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে প্রধান, উপপ্রধান, সভাপতি, সহ-সভাপতি, সভাধিপতি,সহ-সভাধিপতি পদে সংরক্ষণের কাজ শুরু হবে। যা চলবে গোটা ডিসেম্বর মাস ধরে।
[আরও পড়ুন: একসঙ্গে কাজ করব, কংগ্রেস সভাপতি হয়ে বললেন খাড়গে, গান্ধীদের উপর আস্থা থারুরেরও]
নিয়ম অনুযায়ী পঞ্চায়েত নির্বাচনে আইন শৃঙ্খলার ভার সংশ্লিষ্ট রাজ্য প্রশাসনের উপর। সে হিসাবে রাজ্য পুলিশকে দিয়েই পঞ্চায়েত নির্বাচন করার কথা জানিয়েছে নবান্ন (Nabanna)। কিন্তু তা নিয়ে ঘোর আপত্তি বিরোধীদের। বুধবার কাঁথিতে এক অনুষ্ঠানে রাজ্য পুলিশ দিয়ে পঞ্চায়েত ভোট হলে আদালতে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। কাঁথি টাউন হলে বিজেপির কাঁথি সাংগঠনিক জেলার বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠানে এদিন উপস্থিত ছিলেন বিরোধী দলনেতা। কাঁথি পুর নির্বাচনে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনের দাবি জানান। বলেন, দাবি না মানা হলে তাঁরা আদালতে যাবেন।
রাজ্য পুলিশে আপত্তি জানিয়ে সুর চড়িয়েছে কংগ্রেসও (Congress)। এদিন মুর্শিদাবাদের কান্দিতে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে তৃণমূলের শাখা সংগঠন বলে কটাক্ষ করে প্রয়োজনে আদালতে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও (Adhir Chowdhury)। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্যের নির্বাচন কমিশনার তৃণমূলনেত্রীর দাসত্ব করেন। স্বাভাবিকভাবেই এখানকার নির্বাচন কমিশন বলবে না কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে পঞ্চায়েত ভোট হোক।’’ অধীরের অভিযোগ, ‘‘আমরা দেখেছি পুরসভা বা পঞ্চায়েতে এখানে নির্বাচন এখানে হয় না। প্রহসন হয়। আমরা এই প্রহসনে নির্বাচন চাই না। তার জন্য কোর্ট, কাছারি যা করার করব।
[আরও পড়ুন: কোটি কোটি টাকার মালিক আদানি কলেজও পাশ করেননি, কেন জানেন?]
বিরোধীদের এই বক্তব্যকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি তৃণমূল। দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষবলেন, ‘‘যারা রাজ্য পুলিশ দিয়ে নির্বাচন করা নিয়ে এত কথা বলছেন, তাঁরা দেশের সংবিধানটা সংশোধন করে তাঁদের নিজেদের রাজ্যগুলোতেও অন্য একটা বিকল্প ব্যবস্থা করুন না! সংবিধানে যেখানে স্পষ্ট করে বলা আছে, কোন ভোটটা কেন্দ্রীয় বাহিনী করবে, কোন ভোটটা রাজ্য পুলিশ করবে। এটা তো রাজ্য সরকার ইচ্ছা মতো করছে না। এটা তো সংবিধানগত ভাবেই স্বীকৃত।’’ এ বিষয়ে বিজেপি (BJP) শাসিত ত্রিপুরায় পুরভোটে সন্ত্রাসের প্রসঙ্গ টেনেছেন কুণাল (Kunal Ghosh)। বলেছেন, ‘‘যখন ত্রিপুরায় নিজেদের পুলিশ দিয়ে পুরভোটে ওই পরিমাণ সন্ত্রাস করেছিল, তখন মনে ছিল না! যে না ওখানে রাজ্য পুলিশ নয় কেন্দ্রীয় বাহিনী নামাই!’’