সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ভোট কাটুয়া? নাকি সমস্ত সমীকরণ বদলে জয়ের জন্য হাড্ডাহাড্ডি লড়াই? নাকি অন্যের জয়-হারের ডিসাইডিং ফ্যাক্টর? কুড়মিরা এবার সরাসরি লোকসভা ভোটে (Lok Sabha Election 2024) প্রার্থী দেওয়ায় জঙ্গলমহল জুড়ে এই প্রশ্নগুলোই ঘুরপাক খাচ্ছে। ফলে চাপে পড়ে গিয়েছে শাসক থেকে বিরোধীরাও। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, কুড়মিরা প্রার্থী হওয়ায় সব থেকে বেশি সমস্যায় পড়বে গেরুয়া শিবির। কারণ, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর আসনে ২০১৯ সালের লোকসভায় বিজেপিকে ঢেলে ভোট দিয়েছিলেন কুড়মিরা।
তাঁদের জাতিসত্ত্বা-সহ বিভিন্ন দাবিদাওয়ার প্রশ্নে শাসকের বিরুদ্ধে ক্ষুব্ধ হয়ে ওই ভোট পড়ে পদ্মে। ফলে জঙ্গলমহলে বিপুল জয় পায় বিজেপি। তাই শাসক বিরোধী ওই ভোট যা বিজেপিতে গিয়েছিল সেই ভোট এবার খুব স্বাভাবিকভাবে কুড়মি (Kurmi) প্রার্থীর কাছে যাবে। কারণ, জাতিসত্ত্বার জন্য তাঁদের এবার ভোটে লড়াই। ফলে জঙ্গলমহলে বিজেপির ভোট কমে সুবিধা হবে শাসকের। তবে বিজেপি তা মানতে নারাজ। বিজেপির পুরুলিয়া জেলা সভাপতি বিবেক রাঙ্গা বলেন, ” প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিকশিত ভারতকে দেখে ভোট হবে জঙ্গলমহলে। ফলে কোনও জল্পনা কার্যকর হবে না।”
পুরুলিয়া কেন্দ্রে কুড়মি প্রার্থী চূড়ান্ত করে প্রচার শুরু হয়ে গেলেও বাঁকুড়া, মেদিনীপুরে প্রার্থী ঘোষণা না হওয়ায় ওই দুটি আসনে শেষ পর্যন্ত কি হবে তা বুঝতে পারছে না রাজনৈতিক মহল। অন্যদিকে, কুড়মিরা বৃহস্পতিবার রাতে তফসিলি উপজাতির জন্য সংরক্ষিত ঝাড়গ্রামে জোড়া প্রার্থী ঘোষণা করলেও তা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। আদিবাসী কুড়মি সমাজের স্থানীয় নেতারা ওই জোড়া প্রার্থী মৌমিতা মাহাতো ও বরুণ মাহাতোকে মানছেন না। যদিও লক্ষ্মী বার ঝাড়গ্রামে আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা (প্রধান নেতা) অজিতপ্রসাদ মাহাতো আদিবাসী নেগাচারি কুড়মি সমাজের মহামোড়ল (রাজ্য সভাপতি) অনুপ মাহাতোর উপস্থিতিতে ওই জোড়া প্রার্থী ঠিক হয়।
[আরও পড়ুন: আইফোন অর্ডার করে হেনস্তার শিকার! ক্রেতাকে ১০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে Flipkart]
কিন্তু লক্ষ্মীবারের রাত পার হতেই ওই জোড়া প্রার্থী নিয়ে জলঘোলা হতে শুরু করে ঝাড়গ্রামে। আদিবাসী নেগাচারি কুড়মি সমাজের মহামোড়ল (রাজ্য সভাপতি)অনুপ মাহাতো বলেন, ” বৈঠকের মধ্য দিয়েই ঝাড়গ্রাম লোকসভা কেন্দ্রে মৌমিতা মাহাতো, বরুণ মাহাতোকে প্রার্থী করা হয়েছে। দুজনই মনোনয়ন করবেন। পরে একজনকে প্রত্যাহার করা হবে। তাদের দুজনেরই তফসিলি উপজাতির শংসাপত্র রয়েছে।” তবে আদিবাসী কুড়মি সমাজ সূত্রে প্রার্থীর বিষয়ে আরেকজনের নাম উঠে আসছে। কিন্তু তা চূড়ান্ত হয়নি। আদিবাসী কুড়মি সমাজের মূল মানতা (প্রধান নেতা ) অজিতপ্রসাদ মাহাতো বলেন, “জঙ্গলমহলে এবার অন্য খেলা হবে। তার প্রস্তুতি আমাদের চলছে।”
২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে জঙ্গলমহলের আসনগুলিতে আদিবাসী ভোট ছাড়াও কুড়মিদের একটি অংশের ভোট তৃণমূলের পক্ষে পড়েছিল। সেই কারণেই শাসক দল ২০১৯-র লোকসভা ভোটের চেয়ে ভালো ফল করে। জঙ্গলমহলের মধ্যে ঝাড়গ্রামে তৃণমূলের ফল সবচেয়ে ভালো হয়। পঞ্চায়েত ভোটে কুড়মিরা জঙ্গলমহলে আশানুরূপ ফল না করলেও পুরুলিয়ায় বেশ কয়েকটি আসনে জয় পায় তারা। পুরুলিয়া জেলা পরিষদের আসনগুলির নিরিখে পুরুলিয়া কেন্দ্রে কুড়মি সমাজ সমর্থিত নির্দল প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট ৬৮ হাজার ১৯৮। ফলে এই ভোট ফ্যাক্টর হয়ে যাবে পুরুলিয়া আসনে। একইভাবে কম-বেশি ঝাড়গ্রাম আসনেও। বাঁকুড়া, মেদিনীপুর আসনে শেষমেষ কুড়মিরা প্রার্থী দিতে পারলে ওই আসনগুলিতেও একই পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।