টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: একসময় ভোরের আকাশে সূর্য ওঠার আগেই পাখির কলরবে ঘুম ভাঙত গ্রামবাংলার মানুষজনের। ব্যতিক্রম ছিল না রাঙামাটির বাঁকুড়াও। সন্ধেবেলা তাঁদের ঘরে ফেরার পালা সাঙ্গ হলে, দিঘি ভরতি টলটলে জলে আকাশে মায়াবী চাঁদ আলো বুনতো। ক্রমেই প্রকৃতির এই সৌন্দর্য হারিয়ে যাচ্ছে রাঢ়বঙ্গের এই জেলা থেকে। সেই হারিয়ে যাওয়া পাখির কূজন ফেরাতে রাজ্যের পরিবেশ দপ্তর জেলায় জেলায় বায়ো ডাইভারসিটি পার্ক তৈরির প্রস্তাব পাঠাল বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন। যার দায়িত্বে রয়েছে বায়ো ডাইভারসিটি বোর্ড।
সম্প্রতি বাঁকুড়ার প্রাচীন খ্রিস্টান কলেজে এই সংক্রান্ত বৈঠকে যোগ দিতে এসেছিলেন রাজ্য পরিবেশ দপ্তরের বায়ো ডাইভারসিটি বোর্ডের চেয়ারম্যান অশোককুমার সান্যাল। বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরের জেলার নোডাল অফিসার বুলবুল বসু, বাঁকুড়া পুরসভার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্ত, ছাতনার প্রাক্তন বিধায়ক শুভাশিস বটব্যাল-সহ অন্যান্যরা। এদিনই বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে এই জেলায় বায়ো ডাইভারসিটি পার্কটি তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয় বলে জানিয়েছেন বুলবুল সেনগুপ্ত।
[আরও পড়ুন: প্লাস্টিক বর্জনের আরজি, সংকল্প যাত্রায় জনতার দরবারে রূপা গঙ্গোপাধ্যায়]
গত কয়েক বছর ধরে এই জেলায় একাধিক শিল্পাঞ্চল এবং বসতি গড়ে ওঠার কারণে হাতির মতোই বাসস্থান হারিয়ে দিশাহারা অবস্থায় ক্রমশ অস্তিত্ব হারাচ্ছে একাধিক প্রজাতির গাছ, মাছ, কীটপতঙ্গ, ফল, ফুল-সহ অনেক কিছু। ফলে ক্রমেই পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। সেই কারণেই এই দূষণের হাত থেকে এজেলার বাসিন্দাদের বাঁচাতে একটি বায়ো ডাইভারসিটি পার্ক তৈরি করতে উদ্যোগী হয়েছে বাঁকুড়া জেলা প্রশাসন। জানা গেল, এই পার্কটি তৈরি করতে বাঁকুড়া শহর সংলগ্ন এলাকা ৭ থেকে ৮ একর জমির প্রয়োজন। এই জমি খোঁজার কাজ ইতিমধ্যেই শুরু করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ দপ্তরের কর্তারা। এই পরিবেশ দপ্তরের কর্তা বলছেন, ‘একসময়ের অরণ্যঘেরা এই বাঁকুড়া জেলায় নানা রকমের মরশুমি ফল, ঔষধি গাছ, একাধিক রকমের কীটপতঙ্গ দেখা যেত। যেগুলি আজ প্রায় লুপ্তপ্রায় হয়ে গিয়েছে। সেগুলি দিয়েই এই পার্ক তৈরি করা হবে।’ তার সঙ্গে নানা প্রজাতির প্রজাপতি পালন করা হবে এই পার্কে।
[আরও পড়ুন: শব্দদানবের দৌরাত্ম্য বন্ধের দাবি, পথে নেমে আন্দোলনে পরিবেশ কর্মীরা]
এছাড়া এখানে গুল্ম জাতীয় গাছ বহড়া, হরিতকি, পলাশ, শাল, সেগুন গাছ লাগানো হবে। দেশীয় কিছু সবজি চাষ করা হবে। দেশীয় পাখি দিয়ে তৈরি করা হবে পাখিরালয়। ইতিমধ্যেই পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া-১ ব্লকে এই প্রকল্প গড়ে উঠছে। বাঁকুড়া পুরসভার পুরপ্রধান মহাপ্রসাদ সেনগুপ্তের কথায়, ‘বাঁকুড়া শহর লাগোয়া এলাকাতে ফের হারিয়ে যাওয়া পাখির কূজন ঘুম ভাঙবে বাঁকুড়াবাসীর এবং ওই প্রকৃতি ঘেরা উদ্যানে দূর থেকে ভেসে আসবে একতারার সুরে বাউলে গান।’
The post পাখির কূজন ফেরাতে বাঁকুড়ায় তৈরি নতুন পার্ককে বৈচিত্র্যপূর্ণ করার প্রস্তাব appeared first on Sangbad Pratidin.