পবিত্র সরকার: বেশ তো ছিল ‘ইন্ডিয়া’। এ নামেই তো এই দেশকে চেনে গোটা দেশ, দুনিয়া। রাতারাতি সেই নাম বদলে ফেলার কী এমন প্রয়োজন হল! ভারি অদ্ভুত লাগছে। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, সংবিধানে লেখা আছে, ‘ইন্ডিয়া দ্যাট ইজ ভারত…।’ আমার মনে হয়, সংবিধানের এই লাইনটিকে নিজেদের তথাকথিত দেশীয়করণ অ্যাজেন্ডার হাতিয়ার করছে কেন্দ্রের বর্তমান শাসকদল। আবার এর নেপথ্যে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি বা কৌশলের ছায়া খোঁজাও বড় অমূলক নয়। বরং সেই নিরিখে বিরোধী মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’র দাপটের আতঙ্কে কোথায় যেন শাসকের হার মেনে নেওয়ার আভাস!
সমালোচনা, বিতর্ক যাই থাক, কেন্দ্রের শাসকদলের বিরুদ্ধে বিরোধীদের মিলিত প্ল্যাটফর্ম ‘ইন্ডিয়া’র ধারাবাহিক আলোচনা ও জোরালো ঘোষণা দেশজুড়ে নিঃসন্দেহে সাড়া ফেলেছে। প্রশ্ন হল, সেই জোটই কি শাসকের মনে উসকে দিয়েছে অশনি সংকেত? যেন একটা ‘ফ্রয়েডিয়ান আতঙ্ক’তৈরি হয়েছে। ‘ইন্ডিয়া’ নামটা দেখলে বা শুনলেই গায়ে জ্বর আসছে! একটা আতঙ্ক তাড়া করছে বারবার। সবমিলিয়ে এমন হয়েছে যে, মনে হয় একভাবে যেন হার স্বীকার করে নেওয়া! অন্যদিকে, দিল্লির শাসকরা ইদানীং সবকিছুই দেশীয়করণের পক্ষে।
[আরও পড়ুন: ‘কেউ জানে না হিন্দুধর্মের উৎপত্তি কবে’, কর্ণাটকের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মন্তব্যে বিতর্ক]
জি ২০ সন্মেলনের (G20 Summit) আমন্ত্রণপত্রে স্বয়ং রাষ্ট্রপতি মহোদয়ার নামের আগে ‘ইন্ডিয়ার’ বদলে হঠাৎ ‘ভারত’ লেখার এই উদ্যোগ বোধকরি তারই নবতম সংস্করণ। এ যেন দেখ, ইংরেজিকে অন্তত এক ইঞ্চি তো সরিয়ে দিলাম! কিন্তু ইংরেজি তো পুরো সরাতে পারবে না। পারা সম্ভবই নয়। কারণ, ইংরেজি মাধ্যম স্কুল থেকে শুরু করে শিক্ষার বিভিন্ন স্তরে ইংরেজি বাতিলের অবকাশ নেই। কাজেই এ তো কার্যত একশো ভাগের এক ভাগ থেকে ইংরেজি সরানোর সামিল। নিঃসন্দেহে হাস্যকর। বলা ভাল, এ যেন সেই পাগলের নিষিদ্ধ প্রাণী বধে আনন্দ! ইংরেজিকে পুরো সরাবেন কী করে! শাসককুলের বহু নেতা-নেত্রীর ছেলেমেয়েরাই তো নানা ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের পড়ুয়া।
সর্বোপরি নয়া জাতীয় শিক্ষানীতিতেও তো ইংরেজি বাতিল করেল দেওয়ার কথা বলা হয়নি। কাজেই রাতারাতি ‘ইন্ডিয়া’ থেকে ‘ভারত’ করে ইংরেজি সরিয়ে মেকি দেশীয়করণের সাফল্যের আত্মপ্রসাদ লাভ করা যেতেই পারে। কিন্তু বাস্তবে তা কেন্দ্রীয় প্রশাসনের বালখিল্য আচরণ ছাড়া আর কিছুই প্রতিপন্ন করে না।