বিদিশা চট্টোপাধ্যায়: অবশেষে স্বস্তি। আগের থেকে অনেকটাই ভাল আছেন সলমন রুশদি (Salman Rushdie)। গত শনিবার সন্ধেয় ভেন্টিলেটর থেকে তাঁকে বের করা হয়। কিন্তু নিউ ইয়র্কে ভাষণ দিতে গিয়ে যেভাবে ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’-এর লেখক ছুরিকাহত হন তা গোটা বিশ্বকে নাড়িয়ে দিয়েছে। তীব্র উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে। তবে এ বাংলায় কিংবা ভারতবর্ষে সুধীজন বা সাহিত্যপ্রেমীদের মধ্যে তেমন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি বলেই মত অনেকের। শুধুমাত্র অপর্ণা সেন টুইটারে চিন্তা জাহির করেছিলেন। ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়। যে কলকাতাকে সংস্কৃতির পীঠস্থান মানা হয় সেখানকার সুধীজনরা চুপ কেন?
এই প্রশ্নের উত্তর দিলেন অভিনেতা-পরিচালক অনির্বাণ ভট্টাচার্য (Anirban Bhattacharya)। “এই কারণেই পৃথিবীর কোথাও কোনও সুধীজনই সলমন রুশদির উপর হামলার জন্য মন্তব্য রাখছেন না কারণ সুধীজনদের প্রায় নির্মূল করে দেওয়ার একটা চক্রান্ত প্রায় এক দশক ধরে পৃথিবীতে চলছে। আমাদের ভারতবর্ষ যেহেতু অটোক্রেসির দিকে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছে এখন সুধীজনদের মন্তব্য কোনওরকম সৎ প্রতিক্রিয়ার জন্য চাওয়া হয় না। চাওয়া হয় কাজিয়ার জন্য। যেহেতু সলমন রুশদির নামটার মধ্যে এক ভিন্ন ধর্মের বিষয় আছে ফলত পরে যাতে হিন্দুদের বলা যেতে পারে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা নিয়ে কথা বলেন হিন্দুদের ওপর নয়।”, ফোনে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে বলেন অনির্বাণ।
[আরও পড়ুন: দক্ষিণী সিনেমায় বঙ্কিমের ‘আনন্দমঠ’, প্রকাশ্যে ছবির প্রথম ঝলক]
তারকার কথায়, “আমি এটা নিয়ে একটা খবরের কাগজে একটা আর্টিকেলও পড়েছি। খুবই নামকরা একটি খবরের কাগজের ডিজিটাল মাধ্যমে প্রশ্ন করা যে কলকাতার সুধীজন চুপ কেন? কলকাতার সুধীজন এই কারণে চুপ, আসলে বুদ্ধিজীবী কথাটিকে গালাগালিতে পরিণত করার চেষ্টা চলে। যাতে পৃথিবীতে আর কোনও মিডল ওয়ার্ল্ড না থাকে। যাতে একমাত্র সরকার, তার যাঁরা বিরোধী, যাঁরা রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে কথা বলেন সেই পলিটিক্যাল এসট্যাব্লিশমেন্টের বাইরে আর কেউ কথা বলতে না পারে।”
সুধীজনরা যদি চুপ করে না থাকেন তাহলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে তাঁদের জীবন শেষ করে দেওয়া হবে বলে মত অনির্বাণের। অভিনেতা-পরিচালকের বক্তব্য, “শিল্পী বা বুদ্ধিজীবী হোক, সে যে উপন্যাসই লিখে থাকুক, সে যে গানই গেয়ে থাকুক, সে যে পুরস্কারই পেয়ে থাকুক, মানুষের ভালবাসা অর্জন করে থাকুক। সে সারাজীবন ধরে যে রক্ত জল করে, ঘাম ঝরিয়ে যে পরিশ্রম করে যে সম্মান অর্জন করেছে দু’দিনে মানুষের হিংস্রতার সামনে ছেড়ে দিয়ে তার সমস্ত সম্মান ধুলোয় মিশিয়ে দেওয়া হয়। সেই কারণেই সলমন রুশদির আঘাত নিয়ে কেন কেউ কিছু বলছে না, সেই কারণ জানতে চাওয়াটা আদতে সলমন রুশদির উপর আঘাতের প্রতিবাদ নয়। এই জানতে চাওয়াটা আসলে একটা কাজিয়া তৈরির চেষ্টা।”