বইয়ে মুখ গুঁজে থাকলেই কি দেশকে জানা যায়? শুধু ডিগ্রির পিছনে ছুটলে সমাজকে চেনা যায়? ছাত্ররাই দেশের উন্নয়নের নির্ণায়ক। কেন তারা সমাজনীতি, অর্থনীতি, রাজনীতি সচেতন হবে? জানালেন জেআইএস ইউনিভার্সিটির চ্যান্সেলর সর্দার তরণজিৎ সিং।
এড়িয়ে গিয়ে, পিঠ বাঁচিয়ে চলে যেয়ো না। ‘সমাজের এটা খারাপ, ওটা বাজে। প্রশাসন কিছু করে না। সিস্টেমটাই ভেঙে গিয়েছে।’ এই সব নেতিবাচক কথা বলে সমাজনীতি, রাজনীতি, অর্থনীতি থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখা ঠিক নয়। এখন কলেজে পড়া বা চাকরিতে ঢোকা জেনারেশন জেডকে দেখি ভীষণ আত্মকেন্দ্রিক। ডাক্তারি-ইঞ্জিনিয়ারিং বা মোটা টাকা বেতন মেলে এমন ফিল্ডে কেরিয়ার গড়াটাই যেন বেশিরভাগ যুবসমাজের একমাত্র লক্ষ্য। কিছুদিন চাকরির পর কবে বিদেশে সেটল হবে, ব্যাঙ্ক ব্যালান্স কত হল, কোন মডেলের গাড়ি কিনবে, ফ্ল্যাট কিনলে লোন কত পড়বে? এই সব জাগতিক চিন্তা সবসময় মাথায় গিজগিজ করছে। অনেকেই আবার সোশ্যাল মিডিয়া, ফিল্ম-বিনোদন, ফ্যাশনে ডুবে রয়েছে।
কেন্দ্রীয় বাজেটে প্রতিরক্ষা খাতে কেন্দ্র কত অর্থ বরাদ্দ করেছে, শিক্ষাখাতের বাজেট কমেছে না বেড়েছে! দেশের জিডিপি কমল না বাড়ল! বিশ্ব অর্থনীতির বর্তমান হাল কেমন? এমন সব জরুরি ইস্যু নিয়ে আজকের ছাত্র সমাজের কোনও মাথাব্যথা নেই। ছাত্রছাত্রীদের পুঁথিগত পড়াশোনা ও সিলেবাসের বাইরে বেরিয়ে সমাজ, রাজনীতি ও অর্থনীতি সচেতন কেন হতে বলছি? কারণ, একজন ব্যক্তি-ছাত্র সফল হলে দেশের অগ্রগতি হবে না।
[আরও পড়ুন: বিয়ের আগের দিন বন্ধুদের সঙ্গে গঙ্গায় নামাই কাল! তলিয়ে গেলেন যুবক ]
দেশের সার্বিক উন্নয়ন হলে তবেই সমষ্টিগত ও প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব। আর নিজের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে ছাত্রছাত্রীকে স্বশিক্ষিত এবং সমাজসচেতন ও রাজনীতি সচেতন হতে হবে। সামনেই নির্বাচন আসছে। কলেজের ছাত্রছাত্রীরাও নির্বাচনে অংশ নেবে। তারাই ঠিক করবে কোন পথে দেশ এগোবে। তার জন্য তাদের সমাজ সচেতনতা ও রাজনীতির জ্ঞানের প্রয়োজন। চোখ-কান খোলা রেখে পরিস্থিতি বুঝে ইতিহাস জেনে তবেই তো রাজনীতি সচেতন হয়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া যায় ও বিচার করতে পারা যায়।
ডিগ্রির বাইরে অন্যান্য বিষয়ে গভীর জ্ঞানের অভাব এই জেনারেশনের। নানা বিষয়ের আলাপ-আলোচনার পরিসর এখনকার ছেলেমেয়েরা নিজের বাড়ি ও পাড়ার ক্লাবে পাচ্ছে না। গঠনমূলক চিন্তা-আলাপ-আলোচনার মূল ভিতগুলো নষ্ট হয়ে গিয়েছে। আগে এসব জায়গায় হওয়া আলোচনা অল্পবিস্তর কানে আসতে আসতেই তরুণ প্রজন্মের সমাজনীতি, রাজনীতির প্রতি আগ্রহ তৈরি হত।
সমাজকে জানতে গেলে ছাত্রদের সমাজের সমস্ত শ্রেণির মানুষের সঙ্গে মিশতে হবে। নানারকম বই পড়ো। একজন পড়ুয়াকে প্রকৃত দায়িত্ববান নাগরিক করে তোলার পিছনে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে। তাদের আলোচনা আদান-প্রদানের জন্য একটা প্ল্যাটফর্ম করে দিলে ভালো হয়। অন্যের বক্তব্য শুনে তা অন্ধভাবে মানতে বলছি না। আগে বিচার বিশ্লেষণ করো, তারপর নিজের বুদ্ধি দিয়ে সিদ্ধান্ত নাও।