দুলাল দে: এই মরশুমেই চুক্তি শেষ হচ্ছে মোহনবাগানের তারকা মিডফিল্ডার গ্রেগ স্টুয়ার্টের। চুক্তি শেষে কী করবেন স্কটিশ অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার? চুক্তি বাড়িয়ে মোহনবাগানেই থেকে যাবেন, নাকি ফের পাড়ি জমাবেন অন্য কোনও ক্লাবে? অন্য কোনও জায়গায়! স্টুয়ার্টকে নিয়ে এখন কোটি টাকার প্রশ্ন মোহনবাগান সমর্থকদের কাছে।

সবুজ-মেরুন জার্সিতে এই মরশুমে অসাধারণ ফর্মে রয়েছেন এই স্কটিশ মিডফিল্ডার। এই যে রেকর্ড পয়েন্ট নিয়ে এই মরশুমে লিগ শিল্ড জিতেছে মোহনবাগান, অনেক সবুজ-মেরুন সমর্থক মনে করেন, এর পিছনে মিডফিল্ড থেকে স্টুয়ার্টের অবদান সবচেয়ে বেশি। অ্যাকাটিং মিডফিল্ডারের ভূমিকায় খেলার পাশাপাশি অনেক সময় স্ট্রাইকার হয়ে গোলও তুলে নিয়েছেন। তবে নিজে গোল করার থেকেও ম্যাকলারেন-কামিংসদের যেভাবে গোলের বল বাড়িয়েছেন, তাতে দলের জয় পেতে সুবিধে হয়েছে। ১৮ ম্যাচ খেলে নিজে তিনটে গোল করার পাশাপাশি ৫ টি ম্যাচে অ্যাসিস্ট করেছেন। মাঝে চোটের জন্য বেশ কয়েকটা ম্যাচে থাকতে হয়েছে মাঠের বাইরে। পরে ফিট হয়ে মাঠে ফিরলেও অনেক ম্যাচেই শুরু থেকে মাঠে নামতে পারেননি। ১০, ২০ মিনিট করে খেলিয়ে স্টুয়ার্টকে ম্যাচ ফিট করেছেন কোচ মোলিনা। যে ম্যাচগুলিতে শেষের দিকে কম সময়ের জন্য মাঠে নেমেছেন, সেই সময়েও ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে তাঁর পায়ের জাদু। ফলে গ্রেগ স্টুয়ার্টকে অল্পদিনেই ভালোবেসে ফেলেছেন মোহনবাগান সমর্থকরা। স্বাভাবিকভাবেই সমর্থকদের মনে প্রশ্ন উঠছে, পরের মরশুমে স্টুয়ার্ট ফের সবুজ-মেরুন জার্সি পরে ইন্ডিয়ান সুপার লিগ খেলবেন তো?
সত্যি কথা বলতে কী, পরের মরশুমের দল নিয়ে এখনও কোচ মোলিনার সঙ্গে চূড়ান্ত বৈঠক করেননি মোহনবাগান কর্তারা। পরের মরশুমের জন্য যে দলই হবে, তা মোলিনার সঙ্গে আলোচনা করেই হবে। ফলে পরের মরশুমের ভবিষ্যৎ নিয়ে এখনও গ্রেগ স্টুয়ার্টের সঙ্গে আলোচনায় বসেননি মোহনবাগান কর্তারা। কিন্তু নিজে কী করবেন তিনি? প্রস্তাব পেলেই থাকবেন, নাকি আইএসএলের অন্য ক্লাবগুলির সঙ্গে কথাবার্তা শুরু করে দিয়েছেন? কারণ, চুক্তি যখন শেষ হয়ে যাচ্ছে, তখন স্টুয়ার্টের কাছে অন্য ক্লাবের প্রস্তাব থাকবে না এরকমটা হতে পারে না।
যতদূর জানা যাচ্ছে, স্টুয়ার্ট নিজেও এখনই পরের মরশুম নিয়ে মোহনবাগানের সঙ্গে চূড়ান্ত কথা বলার জন্য হাঁকপাঁক করছেন না। তিনিও কিছুটা ধীরে চলছেন। এক্ষেত্রে তাঁর ইচ্ছে, অন্তত মাস খানেক পরে মোহনবাগান টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে আলোচনায় বসা। কারণ, কিছুটা সময় নিয়ে তিনি চুক্তির আলোচনায় বসতে চাইছেন। এর পিছনে একটাই কারণ, ভীষণভাবে চেষ্টা করছেন, ইংল্যান্ডের কোনও ক্লাবের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে। নাহলে হয়তো ভালো প্রস্তাব পেলে ফিরে যেতে পারেন স্কটিশ কোনও ক্লাবেই। এমনিতে একটু ‘হোমসিক’ টাইপের। খেয়াল করে দেখুন, মুম্বই সিটি এফসিতে ডুরান্ড আর এএফসি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলে মরশুমের মাঝপথেই চুক্তি ভেঙে চলে গিয়েছিলেন স্কটিশ ক্লাব ‘কিমার্নক’-এ। তারপরেও মোহনবাগানের সঙ্গে দীর্ঘ চুক্তি না করার পিছনে একটাই কারণ, যে কোনও সময় ফিরতে পারেন দেশে। এর আগেও যখন জামশেদপুর এফসির হয়ে খেলেছিলেন, সেখানেও চুক্তি ছিল মাত্র ‘এক’ বছরের। এবং সেখানেও চুক্তি শেষে দল বদলে গিয়েছিলেন মুম্বই সিটি এফসি-তে।
গ্রেগ স্টুয়ার্টের ফুটবল কেরিয়ার লক্ষ্য করলেও দেখা যাবে, কেরিয়াররের বেশিটা সময়ই খেলেছেন দেশের ফুটবলে। এবারেও প্রাথমিকভাবে সেটাই পরিকল্পনা। চেষ্টা করছেন, দেশের কোনও প্রথম সারির ক্লাবের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হতে। সেই কারণেই মোহনবাগানের সঙ্গে আলোচনার জন্য হাতে মাস খানেক সময় রাখতে চাইছেন। আর একান্তই যদি ইংল্যান্ড কিংবা স্কটল্যান্ডে ভালো কোনও ক্লাব পাওয়া না যায়, তাহলে ভারতে খেললে মোহনবাগানেই খেলবেন। সবুজ-মেরুন জার্সি ছাড়া ইন্ডিয়ান সুপার লিগের অন্য কোনও ক্লাবের জার্সি পরে খেলার ইচ্ছে নেই তাঁর।