স্টাফ রিপোর্টার: এখন থেকে বাংলার সমস্ত স্কুল পড়ুয়া মেয়েরাই বিশ্বসভায় স্বীকৃতি পাওয়া কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় আসছে। শুধু তাই নয়, স্কুল শেষ করার পর কলেজে ভরতির ক্ষেত্রেও ‘কন্যাশ্রী’ ছাত্রীদের কোনও অসুবিধা হবে না। পাশাপাশি রাজ্যে তৈরি হবে কন্যাশ্রী-র নামে একটি নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ও। মঙ্গলবার কন্যাশ্রী-র পঞ্চম বর্ষপূর্তিতে বাংলার মেয়েদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য এমনই একগুচ্ছ ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “আজ থেকে সব সিলিং তুলে দিলাম। রাজ্যের সব ছাত্রীই কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় আসছে।” মুখ্যমন্ত্রী মঞ্চে দাঁড়িয়ে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকদের সঙ্গে এ বিষয়ে কয়েক মিনিট আলোচনা করে ফের ঘোষণা করেন কন্যাশ্রী-র সিলিং তুলে দেওয়াতে অতিরিক্ত ২০০ কোটি টাকা বেশি লাগবে। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “টাকা লাগবে লাগুক। কিন্তু কন্যাশ্রী-র মেয়েরাই দু’লক্ষ কোটি টাকা নিয়ে আসবে। ওরাই আমাদের গর্ব। ওরাই আমাদের ভবিষ্যৎ।”
[ বাড়ি ভাড়া নিয়ে বচসা, ফুটন্ত ভাতের হাঁড়িতে ছুড়ে ফেলা হল একরত্তিকে ]
অষ্টম শ্রেণি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় স্তর পর্যন্ত সমস্ত ছাত্রীকে কন্যাশ্রী-র আওতায় আনার পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন জানিয়ে দেন, রাজ্যে তৈরি হবে কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয়। তাঁর কথায়, “পড়াশোনার জন্য আর কোনওদিনও চিন্তা করতে হবে না কন্যাশ্রী-র মেয়েদের। একইসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী কন্যাশ্রী দিবসে এদিন জানিয়েছেন, উচ্চমাধ্যমিক স্তরে কলাবিভাগের ছাত্রীরা এখন থেকে ২০০০ টাকা স্কলারশিপ পাবে, আর বিজ্ঞানের ছাত্রীরা পাবে আড়াই হাজার টাকা করে স্কলারশিপ। মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণাকে তুমুল হাততালি দিয়ে স্বাগত জানায় সভায় উপস্থিত ছাত্রীরা। অনুষ্ঠানে ছিলেন পূর্তমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র, নারী সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা।
কলেজ শিক্ষার পাশাপাশি মেয়েদের জন্য বিশেষ ট্রেনিং ক্যাম্পের ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রশিক্ষণের শেষে মেয়েরা যাতে নিজেরাই স্বনির্ভর হতে পারেন সেই লক্ষ্যেই এই ট্রেনিংয়ের ঘোষণা করেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, প্রশিক্ষণের পর মেয়েদের আর ভিক্ষে করতে হবে না। তারা নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারবে। কন্যাশ্রী যে তাঁর স্বপ্নের প্রকল্প, এদিন অনুষ্ঠানের শুরুতেই তা আরও একবার স্পষ্ট করে দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, “সারা পৃথিবী জুড়ে একদিন কন্যাশ্রী পালিত হবে। রাজ্যের কন্যাশ্রীরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ।” ছাত্রীদের দিকে তাকিয়ে তিনি বলেছেন, “তোমরাই জগৎ জয় করতে পারবে। বাঁধ ভেঙে নতুন করে বাঁধ তৈরি করবে কন্যাশ্রীরাই। দেশে নতুন ভোর আনবে কন্যাশ্রীর মেয়েরাই।” প্রশাসনিক সূত্রে খবর, এতদিন যেসব পরিবারের বার্ষিক আয় দেড় লক্ষ টাকা ছিল সেইসব পরিবারের মেয়েরাই কন্যাশ্রী প্রকল্পে আওতায় আসতেন। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই ঘোষণার পর রাজ্যের সমস্ত সরকারি স্কুলের ছাত্রীরাই এখন থেকে কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতায় আসবেন। একই সঙ্গে এদিন মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন, রাজ্যে একটি কন্যাশ্রী বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি হবে। ফলে আগামী দিনে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ছাত্রীদের আর কোনও বাধা রইল না। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, সংসার করলে কাজ করা যাবে না এমনটা নয়। মেয়েদের মনে আত্মবিশ্বাস সুদৃঢ় করতে তাঁর আশ্বাস, “তোমরা ভাল করে পড়াশোনা করো। পড়াশোনার পাশাপাশি ক্যারাটে শেখো। অন্যায়ের প্রতিবাদ করো। মনে মনে বল আমি টর্নেডো। আমি তুফান। আমিই জগৎ তৈরি করব।”
[ শহরে ফের অটো দৌরাত্ম্য, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনীকে চড় চালকের ]
রাজ্যে মাতৃত্বকালীন সুবিধে বাবদ ৭৩১ দিনের ছুটি পাওয়া যায়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মনে করিয়ে দিয়েছেন, “এত ছুটি অন্য কোনও রাজ্যে মেলে না। মেয়েদের পাশে আমরা আছি। সন্তান হওয়ার পর মেয়েদের সাহায্য করার জন্য পুরুষরাও এক মাসের ছুটি পাবে।” কন্যাশ্রী প্রকল্প বিশেষ সাফল্য অর্জনের জন্য এদিন আলিপুরদুয়ার, মুর্শিদাবাদ ও জলপাইগুড়ি জেলাকে পুরস্কৃত করা হয়। বিশেষ স্বীকৃতি দেওয়া হয় নদিয়া ও কোচবিহার জেলাকে। বিশেষভাবে পুরস্কৃত করা হয়েছে পাঁচ কন্যাকে। বাঁকুড়ার পিঙ্কু সিংহ মাহাতো, পুরুলিয়ার শিলা বাগদি, আলিপুরদুয়ারের ফরজনা পরভিন, দার্জিলিংয়ের শীতল রাই, জলপাইগুড়ির রুসমিতা ওঁরাও। এই পাঁচ কন্যার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে পাঁচ হাজার টাকা করে জমা পড়েছে। পাশাপাশি তুলে দেওয়া হয়েছে রবীন্দ্র রচনাবলী, ঘড়ি, ছাতা ও মানপত্র।