সন্দীপ চক্রবর্তী: কোনও মানুষের অন্নের সংস্থান হলেই বাসস্থানের চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খায়। আম মধ্যবিত্তর ক্ষেত্রে এটাই সাবেক চিত্র। সব রাজনৈতিক দলই মাথার উপর ছাদ তৈরিতে গুরুত্ব দিয়ে এসেছে বরাবর। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জমানায় সেই নামকরণ বদলেছে। গত দশ বছরে এভাবেই এসেছে বাংলার বাড়ি বা গীতাঞ্জলি প্রকল্প। এটা গরিব মানুষের বাড়ি তৈরির প্রকল্প। তবে এই প্রেক্ষিতেই এসেছে রাজনৈতিক বিতর্কও। তৃণমূল (TMC) সরকারের জমানাতেই চালু হয়েছে বাংলা আবাস যোজনা (Bangla Awas Yojna)। তবে এই প্রকল্প এবং প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মধ্যে হয়ে গিয়েছে ঠান্ডা লড়াই। দিল্লির বিজেপি সরকারের দাবি, সবটাই কেন্দ্রের প্রকল্প, বদল হয়েছে শুধু নামে।
তবে নবান্নের বক্তব্য, বাংলার আবাস যোজনার মূল উদ্দেশ্য, দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী ব্যক্তি যাঁরা গৃহহীন বা কাঁচা অর্থাৎ মাটির বাড়িতে বসবাস করেন তাঁদের একটি পাকা বাড়ি নির্মাণের জন্য আর্থিক সুবিধা প্রদান করা, যাতে একজন দরিদ্র পাকা বাড়িতে বসবাস করার সুবিধা ও স্বাচ্ছন্দ্য পেতে পারেন। কর্মসূচির লক্ষ্য, ২০২২ সালের মধ্যে দারিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী প্রত্যেক পরিবারকে পাকা বাড়িতে বসবাস করার সুবিধা দেওয়া।
[আরও পড়ুয়া: তৃণমূল-বিজেপির মিছিলে মুখোমুখি সংঘর্ষ, খেজুরিতে ভাঙচুর শাসকদলের প্রার্থীর গাড়ি]
প্রথমে সমতলের জন্য ৭০ ও দুর্গম পাহাড়ি ও সুন্দরবন এলাকার ক্ষেত্রে ৭৫ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হলেও মূল্যবৃদ্ধির কথা মাথায় রেখে এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা করা হয়। গীতাঞ্জলি প্রকল্পে গ্রামীণ এলাকা ছাড়াও শহরাঞ্চলে যাঁদের মাথার উপর ছাদ নেই, ন্যূনতম ছাদের চাহিদা মেটানো বড় কাজ। প্রথম কিস্তিতে ৪৫ হাজার টাকা যার মাধ্যমে বাড়ির জানালা পর্যন্ত নির্মাণ, দ্বিতীয় কিস্তিতে ৪৫ হাজারে বাড়ির লিন্টেল লেভেল পর্যন্ত নির্মাণ, তৃতীয় এবং সর্বশেষ কিস্তিতে ৩০ হাজার টাকায় বাড়ির ছাদ ও জানালা, দরজা, প্লাস্টার সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নির্মাণ কাজ শেষ করার কথা। বাড়ি তৈরি শেষ হলে উপভোক্তার নাম ও আর্থিক বৎসর উল্লেখ করে প্রকল্পটির নাম বাড়িটির দেওয়ালে লেখা হয়।
স্নেহালয় হাউজিং স্কিমও চালু হয়েছে গত বছর মার্চে। এই প্রকল্পের পুরো বরাদ্দ করে রাজ্য। এই প্রকল্প নিলে অন্য কোনও ক্ষেত্রে সুবিধা মিলবে না। এক লক্ষ ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয় বাড়ি তৈরিতে। এখনও অবশ্য এটি তেমন জনপ্রিয় হয়নি। ২৫ হাজারের বেশি উপভোক্তাকে সুবিধা দেওয়া হয়েছে। এগুলো সবই পাকা বাড়ি তৈরির প্রকল্প। বন্যা বা প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে কাঁচা বা পাকা বাড়ির বরাদ্দ-মাপকাঠি আবার আলাদা।
[আরও পড়ুয়া: প্রচারের ঝাঁজ বাড়াচ্ছে গেরুয়া শিবির, লক্ষ্মীবার থেকে জেলায়-জেলায় ‘মহাগুরু’]
এই প্রেক্ষিতেই আমফানে বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার নামে শাসকদলের স্থানীয় নেতাদের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণ ও দুর্নীতির অভিযোগের প্রসঙ্গ উল্লেখ করতে হয়। গত বছরের শেষে বিজেপি-সহ বিরোধী দলগুলি টানা আক্রমণ শানিয়েছিল। পরবর্তীতে বেশ কিছু নেতা টাকা ফেরতও দেন। এমনভাবেই বাংলার বাড়ি বা আবাস যোজনায় ‘কাটমানি’ নেওয়ারও বহু অভিযোগ উঠেছে। বিজেপির রাজ্যের শীর্ষনেতার বক্তব্য, গ্রামে কমিশন না দিলে বাড়ি করা যায় না। কেন্দ্রের ন্যায্য পাওনাও মানুষ পায়নি রাজ্যের সরকারের ব্যর্থতার জন্য। শাসকদলের নেতারা এই অভিযোগকে ‘ব্যতিক্রম’ বললেও ‘লোভী’ নেতাদের জন্য বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছিল। ভোটে আঁচ পড়তে পারে ভেবে অবশ্য ‘শুদ্ধিকরণ’—এর রাস্তায় হেঁটে এঁদের একটি অংশকে দল থেকে সরিয়েছে তৃণমূল। তবু এটা অস্বীকার করার উপায় নেই, কে বাড়ি পেলেন বা কে মাথার উপর ছাদ পেলেন সেই সুবিধা তাঁকে ভোট (WB Assembly Election 2021)—বাক্সে টেনে নিয়ে যায়।