কৃশানু মজুমদার: গঙ্গা তোমার বুকের মাঝে, হাওড়া ব্রিজে পারাপার
বাংলায় অফুরান সবুজের মাঝে, স্মৃতিতে ঘেরা শহর আমার
ফুটবলেতে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান, দাদার খেলা ইডেনে
বইমেলাতে উপচানো ভিড়, সুনীল, শীর্ষেন্দু, আশাপূর্ণার সন্ধানে।
সিনেমা, গান, নাটক, খেলাধুলোর উজ্জ্বল উপস্থিতি নিয়ে শহর কলকাতা। এরাই শহরের নিজস্ব টিপছাপ। বৃষ্টিস্নাত রবিরাতে প্রাণের সেই স্পন্দন ফিরল আনন্দনগরীতে।
চিপকে নাইটদের হাত ধরে ফিরল একযুগ আগের মায়াবী রাত। কলকাতার 'দাদাগিরি' অব্যাহত থাকল সবুজ ঘাসের মাঠে। ফুটবল থেকে ক্রিকেট, আধিপত্যের একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ করল বাংলা।
আমরা শোককাতুরে! শোকবিলাসের মধ্যেই আরাম খুঁজি। অতীতের নস্ট্যালজিয়ায় ডুবে থাকি নিশিদিন। কেকেআরে কেন বাঙালি নেই, কেন নেই কলকাতার ছেলে, ইস্ট-মোহনে আগের মতো বাঙালিরা আর খেলে না, বঙ্গ ক্রিকেটে ভূমিপুত্র কোথায়, ফুটবলে বাঙালিদের এমন দৈন্যদশা কেন- বঙ্গজীবনের অঙ্গ হয়ে ওঠা এমন অনুযোগ-অভিযোগের আবহেই বাংলাকে, তথা কলকাতাকে স্মরণীয় এক মুহূর্ত উপহার দিয়ে গেল চলতি বছর। ফুটবল হোক বা ক্রিকেট- বাঙালিদের মজ্জায়-মজ্জায়, শ্বাসপ্রশ্বাসে জড়িয়ে থাকা দুই খেলার শ্রেষ্ঠত্ব মেনে নিল গোটা দেশ। বাংলা আবার ভারতসভায় শ্রেষ্ঠ আসন নিল।
[আরও পড়ুন: রাজকোটের গেমিং জোন অগ্নিকাণ্ড: ছিল না ফায়ার লাইসেন্সই!]
সকাল থেকে আকাশের মুখ গোমরাথোরিয়াম। ঘূর্ণিঝড় রেমাল লাল চোখ দেখাচ্ছে। সুদূর দক্ষিণের এক ক্রিকেটমাঠে কলকাতার ছেলেরা তখন বুক বাজিয়ে দাপট দেখাচ্ছেন। সেই দশ বছর আগে শেষবার আইপিএল (IPL) ট্রফি এসেছিল এশহরে। তার পরে দিকশূন্যপুরে বুঝি হারিয়ে গিয়েছিল সব। এই ঝড়ের রাত দুহাত ভরে ফিরিয়ে দিল সব। উড়ছে ভুলের ঘূর্ণি হাওয়া, সকল চাওয়া, সকল পাওয়া। সব পেয়েছির রাত চিপকে। সব ভুলিয়ে দেওয়ার এক রাত নামল এই শহরেও। বর্ষণস্নাত এক রাত স্বস্তির বারিধারা ছড়িয়ে দিয়ে গেল কলকাতা ময়দানের সবুজ ঘাসে।
আইপিএল (IPL 2024), সুপার কাপ, আইলিগ, ডুরান্ড কাপ এসেছে বাংলায়। আইএসএলে স্রেফ একটা 'ল অফ অ্যাভারেজ'-এর গাড্ডায় পড়ে ট্রফি খোয়াতে হয়েছে মোহনবাগানকে (Mohun Bagan)। তার আগে অবশ্য আইএসএলের (ISL) লিগ শিল্ড ঘরে তুলে মোহনবাগান বিজয়কেতন উড়িয়ে দিয়েছে। ডুরান্ডে ইস্টবেঙ্গলকে মাটি ধরিয়েই ট্রফি গিয়েছে বাগানে। সবুজ মাঠে স্বপ্ন দেখিয়ে মরশুম শেষ করেছে মোহনবাগান।
মহামেডান আই লিগে অবিসংবাদি ফেভারিট হিসাবে ট্রফি জিতে নিয়েছে। নিজের দমে আইএসএল-এর পৃথিবীতে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেছে। ইস্টবেঙ্গল (East Bengal) মনের মতো মরশুম না কাটালেও ভরসার জায়গা খুঁজে পেয়েছে প্রফেসর কুয়াদ্রাতের হাত ধরে। আইএসএলে হালে পানি না পেলেও মরশুম শুরুতে স্মরণীয় সিজন কাটিয়েছে লাল-হলুদ। প্রথমে ডুরান্ড কাপের (Durand Cup) ফাইনালে পৌঁছনো। তার বেশ কয়েক সপ্তাহ পরেই সুপার কাপ (Super Cup) জিতে নেওয়া- বহুদিন ট্রফি খরায় ডুবতে থাকা লেসলি ক্লডিয়ায় সরণীর ক্লাব আগামীর অক্সিজেন সঞ্চয় করে নিয়েছে।
[আরও পড়ুন: সেলুলয়েড হোক বা ময়দান, কামব্যাকের নাম শাহরুখ খান]
আইপিএলে কলকাতার ফ্র্যাঞ্চাইজি আবার সুবিধা করতে পারছিল না দীর্ঘদিন। গৌতম গম্ভীরের (Gautam Gambhir) ছোঁয়ায় বদলে গেল সব। ক্লিশে হয়ে যাওয়া শব্দবন্ধনী মনে করিয়ে দিয়ে গেল আরও একবার, কামেথ দ্য আওয়ার, কামেথ দ্য ম্যান। বিশ্বজয়ীর মুকুট পরে গম্ভীর এই শহরে এসেছিলেন ক্রিকেটের ভাগ্যান্বেষণে। এই শহর তাঁকে খালি হাতে ফেরায়নি। যে শহর নিজের সৌরভের কীর্তির শরিক হতে পারেনি,
গৌতম গম্ভীরকে সেই শহর দুহাত ভরে সব দিয়েছে। নাইট অধিনায়ক হিসেবে গম্ভীর দুবার আইপিএল চ্যাম্পিয়ন করেছেন কলকাতাকে। এবার মেন্টর গম্ভীরের শরণাপন্ন হয়ে হাসছে কলকাতা। দিল্লি ছেড়ে কলকাতা এখন হয়ে গিয়েছে গম্ভীরের হৃদয়ের রাজধানী।তাঁর ছোঁয়ায় কল্লোলিনী আবার তিলোত্তমা হল। এবারের আইপিএলে মেঘের উপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে কলকাতা চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেল।
[আরও পড়ুন: গম্ভীরকে কেকেআরে রাখতে ব্ল্যাঙ্ক চেক শাহরুখের! থাকবেন কি নাইট মেন্টর?]
মরশুম শুরুর আগে দলের মালিক শাহরুখকে স্মরণ করে গম্ভীরকে বলতে শোনা গিয়েছিল, ”এসআরকে আমাকে বলেছিলেন, এই ফ্র্যাঞ্চাইজি তোমার, ভাঙা-গড়া তোমারই হাতে।” গম্ভীর গড়েছেন তাঁর কেকেআরকে। তার প্রতিফলন দেখা গিয়েছে মাঠে। এবার থেকে আমরা বলতেই পারি, ''গম্ভীর শরণং গচ্ছামি।'' শহরের বাতাসে এই রাতে ভাসছে, 'করল, লড়ল, জিতল রে' সুরধ্বনি।