সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: ‘ভেটকি’! বন্ধুর মাসিকে এই বলে খেপিয়ে যাচ্ছিল ছেলেটা। তার জেরেই নিষ্পাপ ওই বালককে ‘শাস্তি’ দিতে ‘ভেটকি’ মাসি যশোদা বাউরি আধলা ইট ছুঁড়ে মেরেছিল সৌরভের দিকে। ইঁট মাথার পিছনে লাগলে আর জ্ঞান ফেরেনি তার। এরপরই ওই বালকের দেহ লুকোতে নানা ফন্দিফিকির আঁটতে শুরু করে অভিযুক্তর পরিবার। এমনকী, মৃত বালকের মুখে ও গায়ে পোড়া মোবিল ঢেলে রাতের অন্ধকারে জঙ্গলে ফেলে দেওয়া হয় দেহ। তবে ঘটনার ১৫ দিন বাদে অণ্ডালের সৌরভ বাউরি খুন কাণ্ডের কিনারা করল পুলিশ। বৃহস্পতিবার ওই বালকের প্রতিবেশীর পরিবারের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
পুলিশের অনুমান, আচমকা রেগে গিয়েই খুন করা হয়েছে সৌরভকে। অণ্ডাল থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, অণ্ডালের মাধবপুর কোলিয়ারির বছর সাতেকের সৌরভ গত ৬ জুলাই বিকেলে বাড়ি থেকে বন্ধু অঙ্কুশের সঙ্গে খেলতে বেরিয়ে আর ফেরেনি। বন্ধু অঙ্কুশের সঙ্গে সৌরভ তাঁদের বাড়িতেই গিয়েছিল। কিন্তু জেরায় অঙ্কুশের পরিবার, তাঁদের বাড়িতে সৌরভের আসার সময় ভুল বলেছিল। আর তাতেই সন্দেহ দানা বাঁধে পুলিশের। জেরায় সঠিক তথ্য না পেয়ে সৌরভের বন্ধু অঙ্কুশকে বুধবার হরিশপুর প্রাথমিক স্কুল থেকে তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। অঙ্কুশের কাছ থেকেই সেদিনের পুরো ঘটনা জানতে পারে পুলিশ।
[আরও পড়ুন: দেহে সুতোটুকু নেই, ক্যামেরায় পোজ রণবীরের! বললেন ‘হাজার মানুষের সামনে নগ্ন হতে পারি’]
জেরায় অঙ্কুশ জানায়, ঘরে খেলতে খেলতে তাঁর মাসি যশোদা বাউরিকে ‘ভেটকি’ বলে খেপাচ্ছিল সৌরভ। তাতেই প্রচণ্ড রেগে গিয়ে আধলা ইঁট ছুঁড়ে সৌরভকে মারেন যশোদা। ইট মাথার পিছনে লাগলে তৎক্ষণাৎ জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সৌরভ। ওষুধ দিলেও জ্ঞান ফেরেনি। রাতে যশোদার বাবা গণেশ বাউরি বাড়ি ফিরলে তিনিও ওষুধ দেওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতেও জ্ঞান ফেরানো যায়নি সৌরভের। এরপর সৌরভের দেহ রান্নাঘরে লুকিয়ে রাখেন তারা। এমনকী, পুলিশের দাবি, খুনের ঘটনা ধামাচাপা দিতেই সৌরভকে খুঁজতে রাতে পাড়ার সকলের সঙ্গে ঘাতকের পরিবারও বের হয়েছিল।
এরপরই গত ৭ জুলাই রাতে অভিযুক্ত যশোদার বোন মমতার ছেলে উমেশ ও যশোদার ভাই রোহন সৌরভের মৃতদেহের মুখে ও গায়ে পোড়া মোবিল ঢেলে জঙ্গলে ফেলে দেয়। পাঁচ দিন পর উদ্ধার হয় সেই দেহ। খুনের পর দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বাউরি সমাজের আন্দোলনেও যোগ দেয় ওই পরিবার বলে দাবি পুলিশের। খুনের ছবিটা পরিষ্কার হতেই বুধবার রাতে যশোদা বাউরি, উমেশ বাউরি, গণেশ বাউরি ও রোহন বাউরিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ধৃতদের বৃহস্পতিবার দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে তোলা হলে আদালত তাদের সাত দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেয়।
সৌরভের বাবা সূরজ বাউরি ও মা লক্ষ্মী বাউরি দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবি করেন। আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশের ডিসি পূর্ব অভিষেক গুপ্তা জানান, “দোষীরা খুনের কথা কবুল করেছে। খুনের কারণ ও খুনে ব্যবহৃত ভারী বস্তুর খোঁজ চালাতেই ধৃতদের হেফাজতে নিয়ে আরও জেরা করা হবে।”