বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: দুর্গা প্রতিমা তৈরিতেও করোনার প্রতিফলন। নিশ্চয়ই এই লাইনটি পড়ে একটু থমকে গেলেন? ভাবছেন কেন একথা লিখলাম? নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জের গৃহবধূর হাতের কাজও আপনাকে ঠিক এভাবেই চমকে দেবে তা হলফ করে বলা যায়। কারণ, ওষুধের খালি স্ট্রিপ দিয়েই দুর্গা প্রতিমা তৈরি করে সকলকে অবাক করলেন তিনি। দুর্গার পাশাপাশি কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতীও একইভাবে তৈরি। মহিষাসুরও তৈরি একইরকম ভাবে। দেবী দুর্গা ভ্যাকসিনের ত্রিশূলের ফলা দিয়ে বধ করছেন মহিষাসুরকে। দুর্গার হাতে অক্সিজেন সিলিন্ডার, স্যানিটাইজার রয়েছে। সঙ্গে রয়েছে গাছের চারা। গাছ লাগিয়ে প্রাকৃতিক ভারসাম্য ঠিক রাখার বার্তা দিচ্ছেন মা দুর্গা (Durga Puja 2021)।
নদিয়ার (Nadia) কৃষ্ণগঞ্জের গৃহবধূ পাপিয়া কর। স্বামী ও সন্তান নিয়েই তাঁর সংসার। গৃহবধূ পাপিয়া করের স্বামী অমরেশ কর অবশ্য একজন সবজি বিক্রেতা। মাজদিয়া স্টেশন রোডে ফুটপাথে বসে সবজি বিক্রি করেন। ছেলে ঋষিকেশ কর চলতি বছর উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছেন। স্বামী-সন্তানের সংসারে কাজের শেষ নেই। কাজের ফাঁকে ফেলে দেওয়া ওষুধের স্ট্রিপ দিয়ে দুর্গাপ্রতিমা বানিয়েছেন। সময় লেগেছে প্রায় সাড়ে ৬ মাস।
[আরও পড়ুন: Durga Puja 2021: ঘট পশ্চিমমুখী, আতসকাচে সূর্যের আলো ফেলে হোমাগ্নি, জানুন কাঁথির রায়বাড়ির পুজোর ইতিহাস]
কিন্তু ওষুধের স্ট্রিপ দিয়ে কেন দুর্গা প্রতিমা তৈরি করার ভাবনা? সে বিষয়ে পাপিয়া কর নিজেই জানিয়েছেন, "করোনা পরিস্থিতিতে কে কখন অসুস্থ হয়ে পড়বেন, তা আগাম জানা নেই। অসুস্থতার হাত থেকে বাঁচতে ওষুধই একমাত্র ভরসা। সেই কারণেই ওষুধের স্ট্রিপ দিয়ে প্রতিমা তৈরি করার ভাবনাচিন্তা।" অভিনব ওই প্রতিমা দর্শন করে করোনা সচেতনতা বাড়বে বলেই আশা শিল্পী পাপিয়া করের। দুর্গা প্রতিমা নির্মাণে খরচ হয়েছে ১৪ হাজার টাকা। মায়ের কাজে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন পাপিয়ার ছেলে ঋষিকেশ। স্ত্রীর কাজে সহযোগিতা করেছেন অপরেশ করও।
অন্যরকম কিছু করার ঝোঁক আগাগোড়াই ছিল পাপিয়ার। গত বছর সুপারি দিয়ে তৈরি করেছিলেন দুর্গা প্রতিমা। তার আগে খবরের কাগজ, কখনও পাট, কখনও বা সবজির বীজ দিয়ে দুর্গা প্রতিমা তৈরি করেছেন তিনি। নেশার তাগিদেই মূলত দুর্গাপ্রতিমা তৈরি করেন পাপিয়া। অর্থ উপার্জনও হয়। দারিদ্রের সংসার হলেও উপার্জিত টাকা পারিবারিক প্রয়োজনে কাজে লাগান না গৃহবধূ। পরিবর্তে ওই টাকা সমাজসেবায় কাজে লাগান তিনি। বেশ কয়েকজন দুস্থ ছেলেমেয়েদের বিনা পারিশ্রমিকে পড়ান তিনি। পুজোর সময় কিনে দেন নতুন জামাকাপড়ও।