সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়: ব্রিস্টল থেকে নটিংহ্যাম পর্যন্ত ড্রাইভ করে এলাম। গোটা রাস্তায় দেখলাম বৃষ্টি হচ্ছে। আসার পথে বার্মিংহ্যামে তো মুষলধারে বৃষ্টি পেলাম। এত বছর ইংল্যান্ড আসছি। এমন বৃষ্টিভেজা ইংল্যান্ড কখনও দেখিনি। গত বছর আবার ঠিক উলটো ছিল। জুন মাসেও প্রচণ্ড গরম। টেম্পারেচার চলে গিয়েছিল ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
[আরও পড়ুন: অস্ট্রেলিয়ার কাছে হার, সেমিফাইনালের রাস্তা আরও কঠিন পাকিস্তানের]
শুনলাম, ইন্ডিয়ান টিম প্র্যাকটিসই করতে পারেনি। জাস্ট হালকা থ্রো ডাউন করে চলে গিয়েছে। এমনকী, ফিল্ডিং প্র্যাকটিসও হয়নি। মনে পড়ে গেল ট্রেন্টব্রিজ মাঠে আমার খেলা প্রথম টেস্ট ম্যাচের কথা। সেটা ছিল আমার জীবনের সেকেন্ড টেস্ট ম্যাচ। সে বারও আগের দিন আমরা বৃষ্টিতে প্র্যাকটিস করতে পারিনি। ম্যাচের সকালে টস হেরে ব্যাটিং করি। বেশ স্যাঁতস্যাঁতে ছিল। প্রথম ওভারে ফার্স্ট উইকেট পড়ে যায়। সেই সফরে ব্যাট করেছিলাম তিন নম্বরে। কাজেই ফার্স্ট ওভারেই যেতে হল। শচীন আমাকে যখন জয়েন করল, তিরিশের কাছাকাছি রান উঠেছে। চলে গিয়েছে দুটো উইকেট। এরপর আমরা একটা লম্বা পার্টনারশিপ করি। দু’জনেই সেঞ্চুরি করেছিলাম। ট্রেন্টব্রিজ ড্রেসিংরুমটা আমার খুব মনে পড়ে। খেলার শেষে বোধহয় আমি ১৩০ ব্যাটিং। ড্রেসিংরুমের সিঁড়ি দিয়ে উঠছি। আজহার দাঁড়িয়ে উঠে আমাকে কনগ্র্যাচুলেট করেছিল। ওই টেস্টের পর ও আমাকে একটা খুব দামী ঘড়িও প্রেজেন্ট করে।
ট্রেন্টব্রিজে এরপরেও অনেক ম্যাচ খেলেছি। কিন্তু পরে ভাবতে অবাক লেগেছে জীবনের সেকেন্ড টেস্টে কোনও প্রেশারই অনুভব করিনি। মনে আছে প্রথম আর দ্বিতীয় টেস্টের মধ্যে দুটো কাউন্টি ম্যাচ ছিল। লর্ডসে সেঞ্চুরির পর আমরা যাই হ্যাম্পশায়ার। হ্যাম্পশায়ারের তখন বোলিং অ্যাটাকের হিরো ছিল ম্যালকম মার্শাল। আমায় বলা হয়েছিল লর্ডসে লম্বা ইনিংস খেলেছ। এখানে ছ’নম্বরে যাও। একটু রেস্ট নাও। এমনই ভাগ্য যে হ্যাম্পশায়ারের একজন পেসার হ্যাটট্রিক করায় আমাকে যেতে হয় খুব তাড়াতাড়ি। আর সেই উইকেটগুলো ছিল রাহুল দ্রাবিড়, শচীন তেন্ডুলকর, সঞ্জয় মঞ্জরেকর। সেখানে সেঞ্চুরি করি। ট্রেন্টব্রিজের কথা উঠলেই ওই ম্যাচটা আমার মনে পড়ে কারণ আমার ব্যাটের হ্যান্ডলের ওপরটা লর্ডসে কিছুটা ভেঙে গিয়েছিল। ব্যাটটা ট্রেন্টব্রিজ টেস্টে অক্ষত রাখার জন্যে আমি হ্যাম্পশায়ার ম্যাচে ইউজ করি শচীন তেন্ডুলকরের ভারি ব্যাট। অত ভারি ব্যাটে জীবনে খেলিনি। কিন্তু উইকেট এত স্লো ছিল যে ভারি ব্যাটে সুবিধেই হয়েছিল।
ইন্ডিয়া টিম বিশ্বকাপে দারুণ খেলছে। কিন্তু শিখর ধাওয়ান চোট পাওয়ায় একটা ছোটখাটো সমস্যা তৈরি হল। শিখর আমার দিল্লি ক্যাপিটালস টিমের প্লেয়ার। আমার খুব প্রিয় ছেলে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে কী দুর্ধর্ষ একটা ইনিংসই না খেলেছে শিখর! আবার দেখিয়েছে, সীমিত ওভারের ক্রিকেটে কেন ওর পজিশন নিয়ে প্রশ্ন ওঠার জায়গা নেই। কতদিনে শিখরের ইনজুরি সারবে জানি না। তবে লোকেশ রাহুলের ওপর আমার যথেষ্ট কনফিডেন্স আছে। ওর অ্যাভারেজ হয়তো খুব আকর্ষণীয় নয়। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে ও নিয়মিত খেলার সুযোগ পায়নি। ব্যাটিং অর্ডারে কখনও ওপরে গিয়েছে, কখনও নীচে। আমি এখনও মনে করি ওকে সুযোগ দিয়ে হবে। যা বুঝছি, রাহুল ওপেনে গেলে চার নম্বরে দীনেশ কার্তিক বা বিজয় শঙ্করের মধ্যে যে কোনও একজন খেলবে। আমার পছন্দ-বিজয় শঙ্কর।
বৃষ্টির কারণে পরপর খেলা পণ্ড হওয়ায় আইসিসির কাছে বিশাল মাথাব্যথা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। বিশ্বকাপে রিজার্ভ ডে রাখার দাবি দিন দিন বাড়ছে। কিন্তু এত লম্বা টুর্নামেন্টে আইসিসির পক্ষে রিজার্ভ ডে রাখা সম্ভব হবে কি না, জানি না। আইসিসির দুশ্চিন্তা আরও বাড়বে কারণ বৃহস্পতিবারের ম্যাচের সব টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছে। বিশ্বের যে কোনও টুর্নামেন্টে ভারত ম্যাচের গুরুত্ব আলাদা। অতএব, বৃষ্টিতে ম্যাচটা ভেস্তে গেলে শুধু যে আর্থিক ক্ষতি হবে তা নয়। দুর্ধর্ষ একটা ক্রিকেটযুদ্ধ দেখা থেকেও বঞ্চিত হবেন দর্শকরা। এটা সবাইকে মেনে নিতে হবে যে, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ভারত যা খেলেছে এক কথায় ব্রিলিয়ান্ট। মেনে নিতে হবে, স্ট্যাটিসটিক্স যা দেখাচ্ছে, তার চেয়ে ওই জয় অনেক বড়। ব্যাটিংটা ব্রিলিয়ান্ট করেছে ভারত। বিরাট কোহলির অধিনায়কত্বও একেবারে নিখুঁত ছিল। অস্ট্রেলিয়া শুধু নয়, বিশ্বকাপের প্রথম দু’টো ম্যাচেই। ভারতকে আগের চেয়ে অনেক, অনেক বেশি ধারালো লাগছে এখন। তবে নটিংহ্যামের পরিবেশও অনেক আলাদা হবে ভারতের গত ম্যাচের চেয়ে। আর তাতে নিউজল্যান্ডের সুবিধে। মেঘলা আকাশ আর বৃষ্টি পিচকে প্রাণবন্ত রেখে দেবে। আর নিউজিল্যান্ড ফাস্ট বোলাররা ঠিক সেটাই চায়। ওভালের সহায়ক পিচে ভারতের বিরুদ্ধে ওয়ার্ম আপ ম্যাচে দারুণ করেছিল ওরা। কেন উইলিয়ামসন টস জিতলে সেটা
ওর পক্ষে যাবে। কারণ তখন হয়তো বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেবে কেন।
[আরও পড়ুন: উইকেটে বল লাগলেও পড়ছে না বেল, সমস্যা জেনেও নির্বিকার আইসিসি]
ভারতের দিক থেকে বলতে পারি, যতই ধাওয়ান ছাড়া নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে নামতে হোক টিমকে, টস হারা-জেতায় কিছু আসবে যাবে না। কারণ ভারত এমন একটা টিম, যারা সব দিক নিশ্চিত করে নামে। সামির বদলে প্রথম দুটো ম্যাচে ভুবনেশ্বর কুমারকে নিয়ে ভারত দেখিয়েছে প্রয়োজনে ওরা কত নির্মম হতে পারে। আর ভুবনেশ্বর কুমার? ভুবনেশ্বর কুমার আমার কাছে একটা উদারহণ। দুর্ধর্ষ অ্যাটিটিউডের সঙ্গে সাহস মিশলে একজন ক্রিকেটার কোথায় নিজেকে নিয়ে যেতে পারে, তার উদাহরণ ভুবনেশ্বর কুমার! তবে ট্রেন্টব্রিজে মেঘলা আকাশের তলায় যদি খেলা হয় সামিকে দেখলে আমি আশ্চর্য হব না।
The post নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে লোকেশ রাহুলেই ভরসা রাখছেন সৌরভ appeared first on Sangbad Pratidin.