সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শুল্কযুদ্ধে ভারতকে পাশে চেয়ে হাতি-ড্রাগনের নাচ দেখানোর বার্তা দিয়েছিল চিন। যদিও সে নাচ মঞ্চস্থ করতে ভারতের তরফে কোনও সাড়া মেলেনি। এই অবস্থায় কোণঠাসা চিনের এবার কৌশল বদল। মার্কিন শুল্কের বিরুদ্ধে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে পাশে চেয়ে একজোট হওয়ার বার্তা দিল ড্রাগন। বেজিংয়ের এহেন বার্তা প্রকাশ্যে আসার পর আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে শোরগোল শুরু হয়েছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতিতে ক্ষুব্ধ বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ। রেহাই পায়নি ন্যাটো সদস্য ইউরোপীয় ইউনিয়নও। তবে এই শুল্কযুদ্ধে সবচেয়ে বেশি যদি কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকে সেটা চিন। পালটা শুল্ক চাপানোয় ১৪৫ শতাংশ শুল্ক চেপেছে বেজিংয়ের ঘাড়ে। এহেন পরিস্থিতির মাঝে বেজিংয়ে স্পেনের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে আমেরিকার একতরফা হুমকির পালটা প্রতিরোধ গড়ার বার্তা দিলেন চিনা প্রেসিডেন্ট শি জিংপিং। তিনি বলেন, "চিন ও ইউরোপের উচিত এই পরিস্থিতিতে নিজেদের দায়িত্ব পালন করা। ভয় না পেয়ে আমেরিকার একতরফা হুমকির প্রতিরোধ করা।"
তবে গোটা বিশ্বের বিরুদ্ধে আমেরিকা শুল্ক যুদ্ধ শুরু করলেও বর্তমানে তা এক কেন্দ্রিক হয়ে উঠেছে। নয়া শুল্ক নীতিতে ৯০ দিনের জন্য স্থগিতাদেশ দেওয়া হয়েছে আমেরিকার তরফে। শুধু মাত্র চিনে তা প্রযোজ্য থাকছে। গত বুধবার চিনা পণ্যের উপর শুল্ক বাড়িয়ে করা হয় ১২৫ শতাংশ। এরপর বৃহস্পতিবার রাতে জানা যায়, ১২৫ শতাংশ নয় তা আরও বাড়িয়ে ১৪৫ শতাংশ করা হয়েছে। অন্যদিকে, চিনও পালটা শুল্ক চাপানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমেরিকার উপর। এই অবস্থায় বিপাকে পড়ে মার্কিন শুল্কনীতির বিরুদ্ধে একজোট হতে বিভিন্ন দেশকে আর্জি জানাচ্ছে চিন। এর আগে ভারতকে এই বার্তা দেওয়া হয়েছিল চিনের তরফে কিন্তু চিনা প্রস্তাব নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য করেনি ভারত। অস্ট্রেলিয়াকে প্রস্তাব দেওয়া হলে তারা তা স্পষ্টভাষায় খারিজ করে। কঠিন পরিস্থিতিতে এবার ইউরোপীয় ইউনিয়নকে কাছে পেতে চাইল আমেরিকা।
আসলে চিন ভালোই বোঝে ন্যাটো সদস্যভুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়ন সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপকভাবে ক্ষুব্ধ ট্রাম্পের উপর। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে এতদিন ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়ে যথাসাধ্য সাহায্য করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলি। তবে যুদ্ধ থামানোর নামে ইউক্রেনকে তোপ দেগে রাশিয়ার দিকে ঝুঁকতে দেখা গিয়েছে আমেরিকাকে। এমনকী এই যুদ্ধে মার্কিন সাহায্য বাবদ ইউক্রেনের অর্ধেক খনিজ ভাণ্ডারের দখল নিচ্ছে আমেরিকা। সেখানে সাহায্যকারী ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলি ভাগে কিছুই জোটেনি। এরই মাঝে বাকি বিশ্বের সঙ্গেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলির উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপিয়েছেন আমেরিকা। ইউরোপীয় ইউনিয়নে যখন ট্রাম্প বিরোধী চোরাস্রোত বইতে শুরু করেছে ঠিক সেই সময় 'শত্রুর শত্রু আমার বন্ধু' এই অঙ্কে বিদেশনীতিতে বদলের পরিকল্পনা করল চিন। যদিও ট্রাম্প ৯০ দিনের জন্য শুল্কনীতিতে স্থগিতাদেশ দেওয়ায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন চিনের ডাকে সাড়া দেবে কিনা তা অবশ্য সময় বলবে।