সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: জিম্বাবোয়ের রাস্তায় কাতারে কাতারে সেনা। ইতিউতি সাঁজোয়া গাড়ি। খোঁজ নেই খোদ প্রেসিডেন্টের! সেনার দখলে গিয়েছে সরকারি টিভি চ্যানেলটিও। তবু জিম্বাবোয়ের সেনা একে সেনা বিদ্রোহ বলতে রাজি নয়। সে দেশের সেনাপ্রধান একটি টিভি চ্যানেলে জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে সম্পূর্ণ নিরাপদ রয়েছেন। যদিও শেষ পাওয়া অসমর্থিত সূত্রের খবরে জানা গিয়েছে, প্রেসিডেন্টকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। আটক করা হয়েছে তাঁর ঘনিষ্ঠদের। গ্রেপ্তার হয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
কিন্তু কেন সেনা বিদ্রোহের জল্পনা? বিবিসি সূত্রে খবর, বুধবার রাজধানী হারারেতে লাগাতার গুলি-বোমা বর্ষণের শব্দ শোনা গিয়েছে। নির্দিষ্ট দূরত্বে দাঁড়িয়ে একের পর এক ব্যাটল ট্যাঙ্ক। সে দেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন মানগাগওয়াকে পদচ্যুত করেন ৯৩ বছরের মুগাবে। তারপর থেকেই ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছিল জিম্বাবোয়ে। গত মঙ্গলবার থেকে পরিস্থিতি চরমে উঠেছে। যদিও সরকারি সূত্রে সেনা অভ্যুত্থানের জল্পনায় জল ঢেলে দেওয়া হয়েছে।
বিবিসি ও রয়টার্স সূত্রে যা খবর পাওয়া যাচ্ছে, তাতে জিম্বাবোয়েতে বসবাসকারী প্রায় প্রতিটি দেশের নাগরিককেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে চূড়ান্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে। হারারেতে বসবাসকারী মার্কিন নাগরিকদের প্রতি টুইট করে মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে, ‘অশান্ত পরিস্থিতিতে বাড়ির ভিতরে থাকুন। দূতাবাসের কর্মীরা সামগ্রিক পরিস্থিতির উপর নজর রাখছেন।’
জিম্বাবোয়ের সেনাপ্রধান মেজর জেনারেল সিবুসিসো ময়ো অবশ্য জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট ও তাঁর পরিবার সম্পূর্ণ অক্ষত রয়েছেন। তাঁদের নিরাপদে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা শুধু প্রেসিডেন্টের আশপাশে থাকা সেসব লোককে টার্গেট করেছি, যারা অপরাধ করছেন। তাহলে কেন রাস্তায় সেনার দাপাদাপি? এই প্রসঙ্গে সেনাপ্রধান বলছেন, দুষ্কৃতীদের ধরতেই নাকি সেনা নামানো হয়েছে। দেশের আর্থিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্যই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করছে সেনা। সমস্ত নাগরিককে প্রয়োজন ছাড়া রাস্তায় বেরোতে মানা করেছেন সেনাপ্রধান। তাহলে কি এটা সেনা অভ্যুত্থান নয়? বস্তুত, ১৯৮০-তে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর থেকে জিম্বাবোয়েকে শাসন করছেন প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে। সম্প্রতি ৯৩ বছরের এই রাষ্ট্রপ্রধানের শারীরিক অবস্থার অবনতির খবর শোনা যাচ্ছিল। এই পরিস্থিতিতে তাঁর উত্তরসূরি হওয়া নিয়ে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন মুগাবের স্ত্রী ও পদচ্যুত ভাইস প্রেসিডেন্ট।
এই প্রসঙ্গে জিম্বাবোয়ের বিরোধী নেতার প্রাক্তন পরামর্শদাতা অ্যালেক্স মাগাইসা দাবি করেছেন, সেনার দাবি মিথ্যা। জিম্বাবোয়েতে বাস্তবেই সেনা বিদ্রোহ করেছে। প্রেসিডেন্টকে গদিচ্যুত করে দেশের দখল নিয়েছে সেনা। বিবিসি সূত্রে খবর, মুগাবে-সহ শীর্ষ সরকারি কর্তাদের বাসভবনের কাছেই সবচেয়ে বেশি গোলাগুলি চলছে। গত সপ্তাহেই মুগাবে সরিয়ে দেন ভাইস প্রেসিডেন্ট মানগাগওয়াকে। যিনি পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হবেন, এমনটাই মনে করছিলেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। কিন্তু মুগাবে তাঁর স্ত্রী গ্রেস মুগাবেকে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসাবে তুলে ধরার পক্ষে মত দেন। এই নিয়েই তীব্র অশান্তি তৈরি হয় ক্ষমতাসীন জানু-পিএফ দলের অন্দরে। মুগাবে সম্ভবত সেনা বিদ্রোহের আঁচও পেয়েছিলেন। পদচ্যুত ভাইস প্রেসিডেন্ট তাঁকে হত্যার ছক কষছে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন। সেই আশঙ্কাই কি এবার সত্যি হল? মুগাবে কোথায়? এই প্রশ্নের উত্তরই এখন খুঁজছেন জিম্বাবোয়ের সাধারণ মানুষ।
সরকারি চ্যানেলে সেনাপ্রধানের ভাষণ:
The post সেনা বিদ্রোহের জল্পনা জিম্বাবোয়েতে, গৃহবন্দি প্রেসিডেন্ট মুগাবে appeared first on Sangbad Pratidin.
