সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অপারেশন সিঁদুরের পরেই সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত করে ভারত। চুক্তি পুনর্বহাল না করলে পাকিস্তান ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবে এমনই হুঁশিয়ারি দেন প্রাক্তন পাক বিদেশমন্ত্রী তথা পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রধান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি। এবার ঝিলমের জল নিয়ে ফের অভিযোগ পাকিস্তানের। অভিযোগের আঙুল ভারতের দিকে।
ভারত থেকে প্রবাহিত আরও দুটি নদী ঝিলম এবং নীলমে জল সরবরাহ কমে যাওয়া নিয়ে পাকিস্তান নতুন করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কিছুদিন আগেই চন্দ্রভাগার জলপ্রবাহ কমে যাওয়া নিয়ে অভিযোগ করে পাকিস্তান। এবার তাদের অভিযোগ, ঝিলামের জল ধরে রেখে গুরুতর সমস্যা তৈরি করছে ভারত।
গত সপ্তাহে, সিন্ধু নদীর জল সংক্রান্ত বিষয়ে পাকিস্তান কমিশনার বলেন ইসলামাবাদ থেকে দু'ঘন্টা দূরে মিরপুরের মঙ্গলা বাঁধে ঝিলামের জলপ্রবাহ কমে যাচ্ছে। পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ঝিলম এবং নীলম নদীর জলপ্রবাহ ৩ হাজার কিউসেক কমেছে। এই জলপ্রবাহ আগে ছিল ৫ হাজার কিউসেক। পাকিস্তানের অভিযোগ, চাষের এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে জল ছাড়ার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে ভারত। রবি শস্য বোনার মরসুমে এই সংকট ২৪ কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকার সরাসরি প্রভাব ফেলবে বলে দাবি করা হয়েছে।
পাকিস্তানের চাষের ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নদি ঝিলম। এই নদীর জল মূলত মঙ্গলা বাঁধ এবং রসুল ব্যারেজের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশ এবং ছাজ দোয়াজ অঞ্চলের সেচের কাজ হয় এই নদীর জলে। পাক অভিযোগ, আড়াই কোটি একর চাষ জমির মধ্যে দেড় কোটি একর জমিতে বিভিন্ন খালের মাধ্যমে ঝিলমের জল আসে। সাম্প্রতিক অতীতে এই সব খালে জল আসা কমে গিয়েছে অথবা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। যদিও, ঝিলমের জল নিয়ে ভারতের কাছে এখনও কোনও লিখিত অভিযোগ করেনি পাকিস্তান। পাকিস্তানের দাবি প্রসঙ্গে কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি ভারত।
গত সপ্তাহে, ভারতের কাছে চিঠি পাঠায় পাকিস্তান। চন্দ্রভাগা নদীর প্রবাহে হঠাৎ পরিবর্তন প্রসঙ্গে চিঠি পাঠানো হয়। পাকিস্তানের অভিযোগে বলা হয়, ভারত ৭ থেকে ৮ ডিসেম্বরের মধ্যে ৫৮ হাজার কিউসেক জল ছেড়ে দেওয়া হয়। যদিও এর পরে হঠাৎই জল ছাড়ার পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে কমে যায়। যদিও, এর কয়েক দিন পরেই, পাকিস্তান জানায় জলস্তর স্থিতিশীল হয়েছে।
পাকিস্তানের মতো দেশের কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা নদীর প্রবাহের উপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল। এই ধরনের আকস্মিক পদক্ষেপে তাদের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
১৯৬০ সালে বিশ্ব ব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় সিন্ধু জলচুক্তি সই করে ভারত ও পাকিস্তান। চুক্তি অনুযায়ী, বিতস্তা ও চন্দ্রভাগার জলের উপরে পাকিস্তানের অধিকার ৮০ শতাংশ, ভারতের ২০ শতাংশ। তবে চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ভারত ওই জল ব্যবহার করলেও তা আটকাতে পারবে না পাকিস্তান। দীর্ঘদিন ধরেই নয়াদিল্লির দাবি ছিল, সিন্দু জলচুক্তিতে সংশোধন করতে হবে। কারণ ভারতের নদীবাঁধ দেওয়া ইসলামাবাদের প্রবল আপত্তি।
সিন্ধু জলচুক্তি বাতিলে চাপ বাড়বে পাকিস্তানে। সেদেশের ৮০ শতাংশ কৃষিজমিতে জল সরবরাহ হয় এই চুক্তির মাধ্যমে। সেচের জন্য প্রয়োজনীয় জলের ৯০ শতাংশেরও বেশি আসে সিন্ধু নদ থেকে। করাচি, মুলতান, লাহোরের মতো বড় শহরগুলিতেও সিন্ধু নদের জলই ব্যবহৃত হয়। তারবেলা এবং মাংলার জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র চলে সিন্ধুর জল থেকেই। গম, চাল, আখ, তুলো চাষ এবং পাকিস্তানের জিডিপির ২৫ শতাংশ নির্ভর করে এই সিন্ধুর জলের উপরেই। তাই এই চুক্তি মোতাবেক জল না পেলে পাকিস্তানের কৃষি, বিদ্যুৎ উৎপাদন, জনজীবন-সবই থমকে যাবে। যেহেতু পাকিস্তানে প্রবল জল সংকট, তাই সিন্ধু নদের জল না পেলে কার্যত শুকিয়ে যাবে দেশের বিরাট অংশ।
