সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আনন্দের মুহুর্ত নিমেষে বদলে গেল শোকের আবহে। প্রিয়জনকে হারানোর হাহাকার স্তব্ধ করে দিল দক্ষিণ কোরিয়ার (South Korea) রাজধানী সিওলক। স্থানীয় সময় শনিবার গভীর রাতে হ্যালোইন উৎসব চলাকালীন পদপিষ্ট (Halloween stampede)হয়ে মৃত্যু হল অন্তত দেড়শো জনের। যাদের মধ্যে অধিকাংশই কিশোর-কিশোরী ও যুবক-যুবতী। মৃতদের মধ্যে ১৯ জন বিদেশী নাগরিকও রয়েছে। কমবেশি জখম হয়েছে অন্তত ২০০ জন। তাঁদের মধ্যে অনেকের অবস্থাই সংকটজনক। ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সাড়ে তিনশোরও বেশি মানুষের খোঁজ মিলছে না। কীভাবে ঘটে গেল এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা, তা এখনও বুঝে উঠতে পারেনি সিওল প্রশাসন।
৩১ অক্টোবর হ্যালোইন (Halloween)। পশ্চিমী দুনিয়ার ভূতের উৎসব। অদ্ভুত সমস্ত পোশাক পরে ভূত-প্রেত সেজে হ্যালোইন পার্টিতে মজে ইউরোপী, আমেরিকা-সহ বিভিন্ন দেশের বাসিন্দারা। সেই উৎসবে শামিল হয় দক্ষিণ কোরিয়াও। সে দেশের রাজধানী সিওলের (Seol) ইটেওন এলাকা রঙিন নাইট লাইফের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। রাত বাড়লেই সেখানকার হোটেল-রেস্তরাঁ-বাজারে চলে হুল্লোড়। ছুটির মরশুমে প্রতিবেশী দেশ থেকে মানুষজন জড়ো হন এই এলাকায়। ভারতীয় সময় অনুযায়ী শনিবার গভীর রাতে ইয়েওন এলাকায় হ্যালোইন উৎসব চলছিল। করোনার প্রকোপে গত দু’বছর সাড়ম্বরে পালিত হয়নি ভূতের উৎসব। ফলে এবার বাঁধভাঙা আনন্দে মেতেছিলেন সকলে। কিন্তু কে জানত, কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই হর্ষ বিষাদে পরিণত হবে!
[আরও পড়ুন: ডার্বি দেখতে গিয়ে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু ইস্টবেঙ্গল সমর্থকের, শোকের ছায়া ময়দানে]
স্থানীয় প্রশাসন বলছে, ইটেওনে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়েছিল। সংকীর্ণ গলি এলাকায় এই ভিড়তে সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছিল পুলিশ। এরমধ্যে হঠাৎই হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। আর সেই হুড়োহুড়িতেই পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় ১৫১ জনের। মৃতদের মধ্যে বিদেশি পর্যটকও রয়েছে। তবে তাঁরা কোন দেশের নাগরিক, তা এখনও স্পষ্ট নয়। এদিকে জখম হয়েছেন অন্তত ২০০ জন। তাঁদের মধ্যে ১৯ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। থানায় ইতিমধ্যে ৩৫০টি নিখোঁজ ডায়েরি জমা পড়েছে। অর্থাৎ বহু মানুষও তাঁদের প্রিয়জনদের হদিশ পাচ্ছেন না।
উদ্ধারকার্য চলছে যুদ্ধকালীন তৎপরতায়। সংকীর্ণ এলাকা হওয়ায় উদ্ধারকার্যে বেগ পেতে হচ্ছে দমকল, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ও পুলিশ কর্মীদের। এই মর্মান্তিক ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইওন সাক ইওল। শোকজ্ঞাপন করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন-সহ একাধিক দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা। কীভাবে এই ঘটনা ঘটল তা জানতে টাস্ক ফোর্স গঠন করে তদন্তেরও নির্দেশ দিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রেসিডেন্ট। পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, মৃতদের পরিচয় জানার কাজ শুরু হয়েছে। পাশাপাশি কীভাবে এই বিপর্যয় ঘটল তা জানতে মাঠে নেমেছে ফরেনসিক দলও।