সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: থাইল্যান্ড-কম্বোডিয়া যুদ্ধের কোপে ভগবান বিষ্ণু! থাইল্যান্ড প্রশাসনের নির্দেশে বুলডোজারে ভেঙে ফেলা হয়েছে হিন্দু দেবতা বিষ্ণুর মূর্তি। এই ঘটনায় ভারত সরকারের তরফে কড়া বিবৃতির পর নেটিজেনদের কোপের মুখে পড়ল থাইল্যান্ড। সোশাল মিডিয়ায় থাইল্যান্ড বয়কটের ডাক দিলেন নেটিজেনরা। এই ঘটনায় সিঁদুরে মেঘ দেখছে পর্যটক নির্ভর অর্থনীতির দেশ থাইল্যান্ড। পরিস্থিতি সামাল দিতে তাদের সাফাই, কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার উদ্দেশ্য থাইল্যান্ডের নেই। তবে ব্যাংককের এই সাফাইয়ে চিঁড়ে ভিজছে না।
ভারতীয়দের জন্য জনপ্রিয় পর্যটনস্থল থাইল্যান্ড। প্রতিবছর লক্ষ লক্ষ ভারতীয় বেড়াতে যান এখানে। থাইল্যান্ডের অর্থনীতিতে অনেকখানি যোগদান রয়েছে ভারতীয়দের। এই অবস্থায় থাইল্যান্ড সরকারের উদ্বেগ বাড়িয়ে সোশাল মিডিয়ায় ট্রেন্ড শুরু হয়েছে 'বয়কট থাইল্যান্ড'। সোশাল মিডিয়ায় এক নেটিজেন লিখেছেন, 'ভারতীয়দের কাছে আবেদন আপনারা থাইল্যান্ড ভ্রমণের বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করুন। কম্বোডিয়ার মাটিতে হিন্দু ঐতিহ্য ধ্বংস হয়েছে, অন্যদিকে কম্বোডিয়া তার প্রাচীন মন্দিরগুলির মাধ্যমে হিন্দুধর্মকে সম্মান করছে। কেন এমন দেশকে সমর্থন করবেন যে আপনার ধর্মীয় অনুভূতিকে অসম্মান করে?' আরও একজন লিখেছেন, 'পাটায়ার সমস্ত বুকিং বাতিল করে থাইল্যান্ডকে এমন শিক্ষা দিন যাতে ওরা নতজানু হয়ে ক্ষমা ভিক্ষা করে।' আরও একজন মন্তব্য করেছেন, 'থাইল্যান্ড অত্যন্ত নিষ্ঠুর দেশ। বিষ্ণুর মূর্তিতে কী সমস্যা? কেন সেটি এভাবে ধ্বংস করা হল? আমি বিষ্ণু ভক্ত হিসেবে এই ঘটনার নিন্দা করছি। আপনাদের কাছে আবেদন জানাচ্ছি। ওখানে বেড়াতে যাবেন না।'
ভারতীয়রা বেড়াতে না গেলে মালয়েশিয়ার মতো থাইল্যান্ডের অর্থনীতিও যে বিপুল ধাক্কা খাবে তা আঁচ করতে পারছে সেখানকার প্রশাসন। পরিস্থিতি বেগতিক বুঝে এই ইস্যুতে মুখ খুলেছে থাইল্যান্ড সরকার। তাদের সাফাই, 'ওই স্থানটি কোনও ধর্মীয় স্থান ছিল না। সীমান্তে নিরাপত্তার কারণেই সেনাবাহিনী এই পদক্ষেপ করেছে। কারও ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত দেওয়ার উদ্দেশ্য আমাদের ছিল না।' এই ইস্যুতে মুখ খুলেছে ভারত সরকারও। গোটা ঘটনা হিন্দুদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত বলে জানিয়েছে বিদেশমন্ত্রক। কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ড উভয় দেশের কাছে আর্জি জানানো হয়েছে তারা যেন এই যুদ্ধে প্রাচীন স্থাপত্যের কোনও ক্ষতি না করে। উল্লেখ্য, ২০১৪ সালে কম্বোডিয়ার একটি মন্দিরে ওই বিষ্ণুমূর্তিটি স্থাপন করা হয়। ৩২৮ ফুট উচ্চতার মূর্তিটি যে এলাকায় রয়েছে, সেটির কাছেই থাইল্যান্ড সীমান্ত। দুই দেশের সংঘাতের মাঝেই সেই মূর্তি গুঁড়িয়ে দেয় থাইল্যান্ডের সেনা।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের জুলাই মাসে টানা পাঁচদিন যুদ্ধ চলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুই দেশ থাইল্যান্ড এবং কম্বোডিয়ার মধ্যে। অন্তত ৪০ জনের মৃত্যু হয় দু’পক্ষে। তিনদিন গোলাবর্ষণের পর থাইল্যান্ডের কাছে যুদ্ধ থামানোর আর্জি জানায় কম্বোডিয়া। যদিও সে প্রস্তাব কানে তোলেনি থাইল্যান্ড। শেষ পর্যন্ত মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের মধ্যস্থতায় সম্পূর্ণ সংঘর্ষবিরতিতে রাজি হয় দু’পক্ষ। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, তাঁর প্রচেষ্টাতেই হিংসা বন্ধে রাজি হয়েছে থাইল্যান্ড ও কম্বোডিয়া। এই পরিস্থিতিতে অক্টোবরের শান্তিচুক্তির পর মনে করা হয়েছিল, বোধহয় স্থায়ী শান্তি এবার ফিরেছে। কিন্তু ডিসেম্বরেই ফের ভয়াবহ হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। উত্তেজনার আবহে এবার কম্বোডিয়ার বিষ্ণুমূর্তি ভেঙেছে থাইল্যান্ড!
