সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: সভ্য সমাজ থেকে বহু দূরে অরণ্যবাসী তাঁরা। প্রাচীনকাল থেকে প্রায় একইরকম জীবনযাত্রা। দক্ষিণ আমেরিকায় (South America) বিশেষত আমাজনের গভীর অরণ্যে এমন বেশ কিছু প্রাচীন জনজাতির বাস। তাঁদের কাছে কোনওভাবেই আধুনিকতার আলো পৌঁছে দেওয়া যায়নি। আর পরবর্তী সময়ে জঙ্গল সাফ করে তাঁদের বিপদের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। সবমিলিয়ে অরণ্যের আশ্রয় শেষ পর্যন্ত তাঁদের জন্য ততটা নিরাপদ আর থাকছে না। ব্রাজিলের (Brazil) উত্তরে রোরেইমা অঞ্চলের ইয়োনোমামি জনজাতি ভুগছে মারণ ব্যধিতে। দ্রুত রোগ ছড়িয়ে পড়ছে। পরিস্থিতি এতটাই সঙ্গীন যে জরুরি অবস্থা জারি করতে হয়েছে। এরপরই ব্রাজিলের লুলা প্রশাসন তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নিল। তাঁদের বিমানে করে উড়িয়ে আনা হয়েছে শহরে, চিকিৎসার জন্য।
ব্রাজিলের উত্তরে ভেনেজুয়েলা-গায়ানা সীমান্তে রোরেইমা (Roraima)। এখানে ইয়োনামামি জনজাতির ২৮ হাজার মানুষের বসবাস। শিকার, তীর-ধনুক, আগুন নিয়ে খেলা আর ছোটখাটো কৃষিকাজ করে দিন কাটে তাঁদের। কোনওক্রমে বানানো গ্রামগুলিতে থাকেন তাঁরা। সেখানেই গত কয়েক বছর ধরে ছড়িয়ে পড়েছে দূষণের বিষ। ধীরে ধীরে শিশুদের গ্রাস করছে অপুষ্টি। রোরেইমা থেকে শয়ে শয়ে শিশুর মৃত্যু খবর পেয়ে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। এয়ারলিফট করে শহরে এনে তড়িঘড়ি ১৬ জনের চিকিৎসা করানো হয়েছে।
[আরও পডুন: অনলাইন লুডো খেলতে গিয়ে আলাপ, পাক নাবালিকার প্রেমে হাবুডুবু মুলায়ম সিং যাদব!]
শুধুই অসুখ-বিসুখ, দূষণ নয়, আমাজনের গভীরে থাকা ইয়োনামামিদের (Yanomami) এই পরিস্থিতির জন্য রাজনীতিকেও দায়ী করা হচ্ছে। বর্তমান বামপন্থী লুলা (Lula da Silva) প্রশাসন আগের বলসোনারো প্রশাসনকে দুষেছে। ব্রাজিলের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর (Jair Bolsonaro) বিরুদ্ধে পরিবেশ সংগঠনগুলির অভিযোগ ছিল, কাঠ মাফিয়াদের হাত শক্ত করছেন তিনি। নির্বিচারে আমাজনের জঙ্গল নিধন করা হচ্ছে। বলসোনারো সব জেনেও তা রুখছেন না। এবার ইয়োনামামি জনজাতির অসুস্থতার নেপথ্যেও তাঁকেই দায়ী করলেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট লুলা। তিনি গত শনিবার রোরেইমা গিয়েছিলেন সরেজমিনে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে। তারপরই প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত হয়, শিশুদের ওখান থেকে আকাশপথে উড়িয়ে এনে শহরে চিকিৎসা করানো হোক।
রিপোর্ট বলছে, ইয়োনোমামিদের সংরক্ষিত এলাকায় ঢুকে পড়েছে মাফিয়ারা। এরা অবশ্য জঙ্গল সাফ করে কাঠ পাচারের চেয়েও বেশি আগ্রহী খননকাজে। এই এলাকা নাকি সোনা, হীর ও অন্যান্য খনিজ সম্পদের বিশাল সংগ্রহ। আর যথাযথ পদ্ধতি অবলম্বন না করে খননকাজের জন্য জলে মিশছে পারদ। বিষাক্ত হচ্ছে খাদ্যসামগ্রী। সেখান থেকেই শিশুদের শরীরে এত সমস্যা – অপুষ্টি, ত্বকের রোগ।