সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: 'সর্বকালের সেরা রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনের সাক্ষী থাকলাম।' ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার ইঙ্গিত মিলতেই হবু ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স তাঁকে পাশে দাঁড় করিয়ে কথাগুলি বলে গেলেন। বলবেন না-ই বা কেন! মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের লড়াই নিতান্ত রূপকথার চেয়ে কম কিছু নয়। ভোটের আগে একপ্রকার দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছিল ট্রাম্পের। নির্বাচনে জিতে আসতে না পারলে হয়তো জেলের ঘানি টানতে হত তাঁকে। মোটা অঙ্কের আর্থিক জরিমানা তো হতই। শেষ পর্যন্ত অনবদ্য প্রত্যাবর্তনে সেই সম্ভাবনা কাটিয়ে 'সিকান্দার' হয়ে গেলেন ট্রাম্প।
প্রেসিডেন্ট থাকার পর পরাজিত হয়ে পরের নির্বাচনে ফের জয়। মার্কিন নির্বাচনের ইতিহাসে এ ঘটনা বেনজির না হলেও একেবারেই বিরল। সেই বিরল কাণ্ডটি ঘটাতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে ট্রাম্পকে। ২০-র নির্বাচনে হারের পর অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন ট্রাম্পের রাজনৈতিক কেরিয়ার শেষ। এর পর একের পর এক বিতর্কের বেড়াজালে বিদ্ধ হতে হয়েছে তাঁকে। প্রথমে ক্যাপিটাল হিংসায় উসকানির অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা। এর পর প্রত্যাশিতভাবেই একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ মাথাচাড়া দেয়। সেই সঙ্গে রয়েছে ব্যক্তিগত 'কুৎসা'। এক পর্ন তারকাও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ আনেন। সাংবিধানিক রক্ষাকবচ থাকলেও, সেই রক্ষাকবচ এড়িয়ে জো বাইডেন সরকার ট্রাম্পকে জেলে ঢোকানোর প্রায় সবরকম বন্দোবস্ত সেরে ফেলেছিল। ট্রাম্প জানতেন, হেরে গেলে তাঁর সামনে ঝুলছে কারাবাসের খাড়া।
সেকারণেই হয়তো এবারের ভোটে একটু বেশিই মরিয়া মনে হচ্ছিল ট্রাম্পকে। গোটা পশ্চিমী বিশ্বে অতি ডান নীতি ও বাকচতুরতাকে রাজনৈতিক মূলমঞ্চে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করাই তাঁর অন্যতম ইউএসপি। সেই অতি ডানপন্থা খানিক উগ্রতা, খানিক আগ্রাসন মিশিয়ে মার্কিন জনতার সামনে তুলে ধরেছেন তিনি। অভিবাসন নীতি থেকে শুরু করে গর্ভপাত, এমনকী সীমান্ত সমস্যা সব ইস্যুতেই আগ্রাসী প্রচার চালিয়েছেন তিনি। কখনও অভিবাসীদের 'আবর্জনা' বলে দেওয়া, কখনও 'মেক্সিকো সীমান্ত বন্ধ' করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি। ভোটপ্রচারে কোনওরকম লুকোচুরি করেননি তিনি। যার সুফল মিলল নির্বাচনে। একেবারে খাদের কিনারে থেকে নির্বাচনে জিতে আসা ট্রাম্প যেন এখন আরও অনেক বেপরোয়া, আরও অনেক শক্তিশালী। তিনি জানেন, পুরনো যা অভিযোগের বোঝা, সেসব আর নেই। তিনি জানেন, যে সব দুর্নীতি, বেনিয়মের অভিযোগে এতদিন তাঁকে বিদ্ধ হতে হয়েছে, সেসব এখন অতীত। এখন তাঁর হাতে অগাধ ক্ষমতা, আর কেউ বাধা দেওয়ার নেই।
ট্রাম্পের নির্বাচিত হওয়া অনেকটা সুকুমার রায়ের 'পাগলা দাশু'র নাট্যমঞ্চে প্রত্যাবর্তনের গল্পের সঙ্গে মিলে যায়। প্রাক নির্বাচনী পর্বের যাবতীয় নাটক সাঙ্গ হওয়ার পর এবার যেন 'দাশু'র মতোই প্রত্যাবর্তন হল ট্রাম্পের। এখন আশঙ্কা, এই বুঝি তিনি লম্ফঝম্ফ শুরু করেন। দাশুর সঙ্গে ট্রাম্পের চারিত্রিক মিলও আছে। হবু মার্কিন প্রেসিডেন্ট নিজেই নিজেকে 'পাগলাটে' বলে থাকেন। তিনি ইঙ্গিতও দিয়ে রেখেছেন, প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর প্রথম দিনটা ওই 'পাগলাটে' মেজাজের ট্রাম্পের লম্ফঝম্ফই দেখা যাবে।