shono
Advertisement

Israel-Hamas War: ‘সহানুভূতি নয়, অধিকারের সঙ্গে ফিরুক শান্তি …’ বলছেন প্যালেস্টাইনের ভূমিপুত্ররা

কেমন আছে জেরুজালেম? কী বলছেন ওঁরা?
Posted: 11:18 AM Oct 12, 2023Updated: 06:01 PM Oct 12, 2023

নিবেদিতা সেন: রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়, সাধারণের প্রাণ যায়! ইজরায়েল না প্যালেস্টাইন কে বেশি অপরাধী, এই প্রশ্নেই প্রবাসীরা দেশে ফিরতে শুরু করেছেন। ভারতের ‘অপারেশন অজয়’ (Operation Ajay) এর হাত ধরে ঘরে ফিরছেন আমাদের দেশের নাগরিকরা। আমিও ইজরায়েল থেকে ফিরেছি সম্প্রতি। কিন্তু তখনও যুদ্ধ বাধেনি! যে যুদ্ধ আপনারা দেখছেন। আসলে রক্তাক্ত ভূখণ্ডে বিপদ বাড়ছে। বরাবর রাজনৈতিক, কূটনৈতিক লড়াইয়ের দাবদাহে জ্বলতে থাকা মধ্যপ্রাচ্য অথবা পশ্চিম এশিয়ার দেশ খবরের উপজীব্য হয়েছে। এবারও তার অন্যথা হয়নি। 

Advertisement

কিন্তু ওঁরা? শনিবার হামাস (Hamas) বাহিনীর আক্রমণে দিশেহারা ইজরায়েলের ‘প্রত্যাঘাত’ নিয়ে আলোচনা চলছে বিস্তর। কে জঙ্গি, কে অপরাধী, কার দোষ কতটা এই প্রশ্নের পোস্টমর্টেমের অন্দরেই বারবার উঠে আসছে ইজরায়েলি কথা। কিন্তু প্যালেস্টাইন? ক্রমশ শান্তি, ধর্মের দেশের তকমা পাওয়া, মানচিত্র থেকে প্রায় হারিয়ে যেতে বসা হামাস গোষ্ঠীর দেশের খোঁজ? ওঁরা বলেন, ‘সহানুভূতি নয়, আমাদের অধিকার ফিরিয়ে দাও!’

প্যালেস্টাইনের রাস্তায় বোল্ডার। ছবি সৌজন্যে: প্রতিবেদক।

কাজের সূত্রে বারবার দেখেছি ওঁদের অন্তর যেন মুক্তির কথা বলে বারবার। কীসের মুক্তি! কিন্তু হামাস আবহে সেই প্রশ্নও এখন ঠুনকো। তবুও তাঁদের সঙ্গেই পেশাগত টানে কথা বলেছি আমি। কী বলছেন প্যালেস্টাইনের (Palestine) মানুষেরা? জেরুজালেমের (Jerusalem) ভূমিপুত্ররা?

[আরও পড়ুন: ইজরায়েল থেকে বলছি… রক্তাক্ত যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন বাঙালি ছাত্র]

হেব্রন। ছবি সৌজন্যে: প্রতিবেদক।

আসলে কী চলছে, আমরা সকলেই সেই বিষয়ে অবগত। কিন্তু ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পরে ইজরায়েল এবং হামাস গোষ্ঠীর অর্থাৎ ইজরায়েল-প্যালেস্টাইনের (Israel Palestine War) যুদ্ধ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বিস্তর। খানিকটা বেশিই। অনেকেই বলছেন, ঠিক কতটা যুদ্ধ হচ্ছে, এবং কতটা দেখানো হচ্ছে, তা নিয়েও আলোচনার অবকাশ রয়েছে। দুই দেশে ঘুরেছি। কাজের সূত্রে প্যালেস্টাইনের সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি বারবার। হামাস গোষ্ঠী কী করছে, কেন করছে, এর গভীরে যাচ্ছি না! কিন্তু সম্প্রতি এই যুদ্ধ বাধার পরেও আমিই প্রথম প্যালেস্টাইনের একাধিক মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি।

[আরও পড়ুন: ‘নিগ্রহের’ প্রতিবাদ! যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধরনায় খোদ উপাচার্য]

প্যালেস্টাইনের একজন ট্যাক্সিচালক। তাঁর নাম ইয়াদ (নাম পরিবর্তিত)। তিনি বেথেলহেমের (Bethlehem) বাসিন্দা। ইয়াদ বলছেন, আমরা ভালো নেই। আশা রয়েছে। বাঁচার খানিকটা তাগিদ দিয়েছে। কিন্তু ভয় বাড়ছে ক্রমশ। আতঙ্ক গ্রাস করেছে সর্বত্র। মুহূর্তেই দখল হতে পারে সবকিছু। বিপদ ঘনিয়ে আসতে পারে প্রতি মুহূর্তে। এই বিষয়টি বারবার মনে হচ্ছে। কিন্তু সামগ্রিক দিক থেকে যদি বলেন ভালো আছি এখনও! তবুও! প্রায় একই কথা বলছেন সেদেশের বাসিন্দা শরিফ। দীর্ঘ কথোপকথমনে শরিফ আমাকে জানিয়েছেন. ওঁরা যুদ্ধের জন্য ভীত নন! ভালো আছেন আপাতত। কিন্তু এর সমাধান, বারবার কেন এই বিপদ! সে প্রশ্ন কিন্তু তুলেছেন শরিফও।

হেব্রন। ছবি সৌজন্যে: প্রতিবেদক।

এই ভালো আছি কথাটা কিন্তু ইয়াদ বা শরিফ বলছেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে ভালো থাকা প্রসঙ্গে। অর্থাৎ এত রক্তের মধ্যেও ভালো থাকার কথা! কেন? এই ইয়াদরা পর্যটন ব্যবসায় যুক্ত। আবার এঁদের একটা বড় অংশ স্কুলে শিক্ষকতা করেন বা করতেন। অর্থাৎ একজন শিক্ষক ট্যাক্সি চালাচ্ছেন? শুনে আমিও অবাক হয়েছিলাম সেদিন। এই রকম উদাহরণ ওই দেশে প্রচুর। কারণ খিদে। পেটের জ্বালা! বেশি রোজগারের আশা নয়। এঁরা কাজ করেন অন্য সকলের মতো পেটের টানে। যদিও ওঁদের পেটের দায় বেশি। কারণ, রাষ্ট্র! রাষ্ট্রের জাঁতাকল।

হেব্রন। ছবি সৌজন্যে: প্রতিবেদক।

দুই দেশের যুদ্ধ বাধতেই কথা বলেছিলাম প্যালেস্টাইনের আরও অনেকের সঙ্গেই। কী বলছেন ওঁরা? এই দেশটি বহুকাল প্রায় নির্বাচনহীন। রাষ্ট্র, শাসন। নিয়ন্ত্রণ। কিছুই তেমনভাবে নেই। যুদ্ধ ছাড়িয়েও এই প্যালেস্টাইনের অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ কিন্তু প্রবল। খাদ্যের অভাব। শিক্ষা পাওয়ার অধিকারে ঘাটতি। অনেকটা পারিপার্শ্বিক আবহে দেশটি ক্রমশ যেমন আয়তনে ছোট হয়েছে। দেশের নাগরিকদের নূন্যতম সুযোগ-সুবিধার সংকীর্ণতাও বৃদ্ধি পেয়েছে উত্তোরত্তর। আর সেই সুযোগেই বিদ্রোহের নামে যুদ্ধবাজদের প্রভাব বাড়ছে। তার ফল যে এই যুদ্ধ নয়, এমন সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না প্যালেস্টাইনের সাধারণ মানুষ।

ঠিক এই প্রসঙ্গে গত রাতে এক প্যালেস্টাইনের বাসিন্দা আমাকে বলছেন, এর চেয়ে মরে যাওয়া ভালো! ভেতরেও বিপদ বাইরেও বিপদ! কেন জানেন? আসলে ওঁদের যেন ঘর থাকতেও ঘরের অভাবে ধুঁকতে হয় আজীবন! ইজরায়েল লড়ছে। বারবার বোঝাচ্ছে তাদের শক্তি। তাদের দম। প্যালেস্টাইন কী করছে? এই প্রশ্নের জবাবে অনেকেই বলছেন, ট্যাক্সি চালকের কথা ‘ইয়াদ’ করুন, উত্তর আছে ওখানেই! যাঁদের সঙ্গে রোজ কথা বলছি। যোগাযোগ রাখছি, ওঁরা কিন্তু লড়াইয়ে থাকতে চান। সেটা যুদ্ধ নয়। অধিকারের লড়াই। গোটা বিশ্বের কাছে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই। ওঁরা বলেন, প্যালেস্টাইন আবেগ, অনুভূতি, পাশে দাঁড়ানোর নাটক আর চায় না। ওঁদের দাবি, সঠিক মর্যাদা দিন। বিশ্ব আবার গরিমা ফেরাক দেশের! যে অভ্যাসে বারবার বিপর্যস্ত হচ্ছেন তাঁরা।  আর সেই সূত্রেই কি এই লড়াই? জানি না উত্তর দেবে সময়!

(প্রতিবেদক পেশায়  সাংবাদিক)

*** সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল-এ প্রকাশিত এই প্রতিবেদনের সমস্ত বক্তব্যের দায় প্রতিবেদকের নিজস্ব। 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement