সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: অন্তিম যাত্রায় প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে মানুষের ঢল রাজধানী দিল্লিতে। আজ নিগমবোধ ঘাটে মনমোহনের শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে। তার আগে ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করলেন বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বললেন, মনমোহন সিংয়ের কৌশলগত দূরদর্শিতা ও রাজনৈতিক সাহসিকতা ছাড়া আমেরিকা ও ভারতের বন্ধন এতটা মজবুত হত না।
২৬ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে দিল্লির এইমসে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ৯২ বছরের অর্থনীতিবিদ। মনমোহনের প্রয়াণে এক্স হ্যান্ডেলে শোকপ্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি থেকে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী-সহ বিশিষ্টজনেরা। পাকিস্তান, রাশিয়া, ফ্রান্স, মালয়েশিয়া, ব্রিটেন, পর্তুগাল-সহ বিশ্বের নানা দেশ শোকবার্তা পাঠায়। সমবেদনা জানিয়েছিল আমেরিকাও। তবে আজ মনমোহনের স্মৃতিচারণা করলেন বাইডেন। এক্স হ্যান্ডেলে দেওয়া বার্তায় তিনি লেখেন, 'জিল এবং আমি প্রাক্তন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের প্রয়াণে গভীরভাবে শোকাহত। আমরা এই সময় ভারতের মানুষের সঙ্গে রয়েছি। আজকে আমেরিকা ও ভারতের মধ্যে অভূতপূর্ব সহযোগিতার বন্ধন গড়ে উঠেছে। কিন্তু এই মজবুত সম্পর্ক মনমোহনের কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি এবং রাজনৈতিক সাহসিকতা ছাড়া সম্ভব হত না।"
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালে প্রধানমন্ত্রিত্ব চলে আসে মনমোহনের কাছে। সময় নষ্ট না করে সবার প্রথম আমেরিকার সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু করলেন তিনি। কাজটা সহজ ছিল না। আমেরিকা তখন পাকিস্তানের ‘বন্ধু’। আর ভারত বন্ধু রাশিয়া বরাবরই মার্কিন বিরোধী। আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্কের দরজা খুলতে চাইলে রাশিয়ার রোষে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু সেসব আশঙ্কার মধ্যেই ডঃ সিং তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন।
কিন্তু মনমোহন বুঝেছিলেন, আমেরিকার সঙ্গে অসামরিক পরমাণু চুক্তি করতে পারলে সেটা যে শুধু ভারতের শক্তি চাহিদা পূরণ করবে, তাই নয়। একই সঙ্গে পরমাণু শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে তথা পশ্চিমী দুনিয়ার নজরে ভারতের ‘অছ্যুৎ’ তকমাটাও কেটে যাবে। মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে মৈত্রী স্থাপন করতে পারলে এক ধাক্কায় ভূরাজনীতিতে ভারতের গুরুত্ব অনেকটা বেড়ে যাবে। একই সঙ্গে তিনি আমেরিকাকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন, ভারতের বাজার আমেরিকাকে আর্থিকভাবে বিরাট ফায়দা দিতে পারবে। তাছাড়া দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের সখ্য চিনের দিকে কড়া নজর রাখতে সাহায্য করবে আমেরিকাকে। ২০০৫ সালের ১৮ জুলাই যৌথ বিবৃতিতে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ এবং মনমোহন সিং পরমাণু চুক্তির কথা ঘোষণা করেন। সেই চুক্তি বাস্তবায়িত হয় ২০০৮ সালে।