সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তিন বছর আগে মাহসা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে উত্তাল হয় ইরান। ‘আরব বসন্তের’ স্মৃতি উসকে তিন বছর পর ফের বিদ্রোহের আগুন মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশে। এবার ইরানে মোলাতন্ত্রের বিরুদ্ধে সরব সেদেশের মুক্তমনারা। রাজধানী তেহরান, মাশহাদ-সহ একাধিক শহরে পথে নেমে প্রতিবাদ দেখাচ্ছেন হাজার হাজার মানুষ। তাঁদের একটাই দাবি, দেশে মোল্লাতন্ত্র নিপাত যাক। পতন হোক আয়াতোল্লা আলি খামেনেই সরকারের।
খামেনেইয়ের আমলে ইরানে চরমে পৌঁছেছে মূল্যবৃদ্ধি। শুধু তাই নয়, মার্কিন ডলারের তুলনায় ব্যাপক হারে পড়েছে রিয়ালের দাম। এসবেরই প্রতিবাদে গত দু’দিন ধরে ইরানের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এর সঙ্গেই এবার দেশ থেকে মোল্লাতন্ত্র উৎখাতের ডাক দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। বিক্ষোভ দমাতে পালটা লাঠিচার্জ করছেন নিরাপত্তাকর্মীরা। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে ফাটানো হচ্ছে টিয়ার গ্যাসের শেল। আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, বিদ্রোহ দমনে অমানুষিক অত্যাচার করেছে সরকার। এই সংক্রান্ত একাধিক ছবি এবং ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সমাজমাধ্যমে (যদিও সেগুলির সত্যতা যাচাই করেনি সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল)। একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, আন্দোলনকারীরা স্লোগান দিচ্ছেন, “কেউ ভয় পাবেন না। আমরা সবাই একসঙ্গে রয়েছি। দেশ থেকে মোল্লাতন্ত্র উৎপাটন করতে হবে। মৃত্যু হোক খামেনেইয়ের।”
১৯৩৯ সালে ইরানের পবিত্র শহর মাশহাদ শহরে জন্মগ্রহণ আলি খামেনেইয়ের। ক্রমশ তৎকালীন সুপ্রিম লিডার আয়াতোল্লা রুহোল্লাহ খোমেইনির ছায়াসঙ্গী হয়ে ওঠেন তিনি। ইরানে তখন শাহ বংশের শাসন। পশ্চিমী দুনিয়া ঘেঁষা রাজবংশের হাত ধরে তেহরানে তখন ‘ইরান বসন্ত’। স্বাধীনতার স্বাদ পাচ্ছেন মহিলারা। কট্টরপন্থী মানসিকতা ছুড়ে ফেলে পশ্চিমী হাওয়ায় গা ভাসিয়ে তরতরিয়ে এগিয়ে চলেছে ইরান। ইজরায়েল তখন বন্ধু দেশ। কিন্তু কথায় আছে, ‘চিরদিন কারোর সমানও নাহি যায়’। স্বজনপোষণ, দুর্নীতি, বিরোধীদের কণ্ঠস্বর দমন-সহ একাধিক অভিযোগে রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠে ইরান। পথে নামে আমজনতা। সেই সুযোগে মোল্লাতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে সক্রিয় হয় ইসলামিক উগ্রপন্থীরা। শাহ দেশ ছাড়েন ১৯৭৯ সালে। খোমেইনির হাত ধরে মধ্যপ্রাচ্যের এই দেশে প্রতিষ্ঠিত হয় মোল্লাতন্ত্র। মাথায় বসেন খোমেইনি। সেই সময় তাঁর ছায়াসঙ্গী ছিলেন বর্তমান ‘আয়াতোল্লা’। বিরোধীরা ১৯৮১ সালে খামেনেইকে খতম করার ছক কষেছিল। সেই হামলায় ডানহাতের কর্মক্ষমতা হারান খামেনেই। ১৯৮৯ সালে খোমেইনির মৃত্যুর পর সুপ্রিম লিডার হয়ে ওঠেন তিনি।
